চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : সারা দেশের ন্যায় চুনারুঘাটেও প্রচন্ড শীতের তীব্রতা। হাড় কাঁপানো শীতে চা শ্রমিক, বনাঞ্চল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা কাবু হয়ে পড়ছেন। গত কয়েকদিনের প্রচন্ড ঠাণ্ডা ও ঘনকুয়াশায় জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। শিশু ও বয়স্কদের অনেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। গত তিনদিন ধরেই দিনে সূর্যের তেমন আলো দেখা যাচ্ছে না। চা বাগান ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত চুনারুঘাট উপজেলায় নিম্ন আয়ের লোকদের মধ্যে গরম কাপড়ের অভাব দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত শীতের কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই অঞ্চলের চা শ্রমিকরা। শনিবার সকাল ৯টায় উপজেলায় তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রকৃতির অরণ্যানি, গাছ গাছালি ও সবুজে ঘেরা থাকায় চা বাগান সমুহে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও ঘনকুয়াশাও তুলনামূলক বেশি। ফলে শীতের প্রচন্ডতায়-ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েন বস্তির নিম্ন আয় ও চা শ্রমিকদের বড় একটি অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। কনকনে শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগও বাড়তে শুরু করেছে। চা শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারণে চন্ডীছড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ফুটপাতের উষ্ণ কাপড়ের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন চা জনগোষ্ঠী সহ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। চাকলাপুঞ্জি চা বাগানের বৃদ্ধ মহিলা চা শ্রমিক রিশি কালিন্দি বলেন আমরা অনেক অভাবী। খুব ঠাণ্ডা লাগছে, আমাদের গরম কাপড় নাই, আমাদের মজুরি কম। মজুরি বাড়ছে না, খুব কষ্টে আছি। ওই বাগানের শৈলেন কালিন্দি বলেন, তার ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনী মিলিয়ে পরিবারের ২০ জন সদস্যর মধ্যে মাত্র ৫ জন করে ১৭০ টাকা মজুরি হারে উপার্জন করেন। এতে পরিবারের খরচ যোগানোই সম্ভব হয় না। তার ওপর গরম কাপড় কিনবো কিভাবে। তাই শীত নিবারনে পুরাতন কাপড় দিয়ে জীবন বাঁচাই। চন্ডিছড়া বাংলোর সামনে হাটে দেখা যায় উষ্ণ কাপড় ক্রেতা শিশু, নারী পুরুষের উপচেপড়া ভিড়। পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান, সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার তলববারে শ্রমিকদের জন্য গরম কাপড় নিয়ে আসি। এখানে বিক্রয় করা হয় মাফলার-৬০ কানটুপি-২৫, চাদর-৮০, ট্রাউজার-৬০, জেকেট- ১০০/১৫০ সহ শীত নিবারণের বিভিন্ন উষ্ণ কাপড়। যেখানে শিশু, যুবক, যুবতী, বৃদ্ধা সহ সকল মানুষের কাপড় পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। কমদাম হওয়ায় বিক্রিও হয় বেশ ভালো। চা শ্রমিক মনি দাস জানান, গত তিনদিন থেকে প্রচন্ড শীত বেড়েছে। আর বাতাসের সঙ্গে তীব্র শীতে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। শীত জনিত রোগ বাড়ছে। গরম কাপড়ের অভাবে চা বাগানের শিশু থেকে বৃদ্ধরা খুবই কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। কাপড় ক্রয় করতে সমিত্র কালিন্দীনির সাথে কথা বললে তিনি জানান কম মূল্যে মোটামুটি একটু ভালো কাপড় পাওয়া যায় এখানে তাই নিজে ও পরিবারের সদস্যদের শীত নিবারণ করতে প্রায়ই আসি এখানে। এছাড়াও এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সময় কাটান। চা বাগান কর্তৃপক্ষ, সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগেও এবছর কোন শীতবস্ত্র বিতরণ হচ্ছে না। চা বাগানের প্রায় ৮৫ শতাংশেরই খুবই দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন।