ভাতের মধ্যে সাড়ে তিন হাত লম্বা চুল! দেখে গা শিউরে উঠলো। নতুন বউ, এখনো তাকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। কিছু বলা উচিত হবে কি না বুঝতেছি না। তবুও সাহস করে বলে ফেললাম, ‘ভাতের মধ্যে একটা চুল পাইছি।’
বউ তখন সরি, আমি বুঝতে পারিনি বলে চুলটা নিয়ে গেলো। মনে মনে বললাম, মেয়েটা লক্ষ্মী আছে, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। এক মিনিট পর বেডরুম থেকে একগাদা চুল নিয়ে এসে তরকারীর মধ্যে চুবিয়ে দিয়ে বললো, ‘এবার ঠিকাছে?’
আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে তাকলাম। এমন অষ্টম আশ্চর্য মেয়ে আমার বংশের কেউ দেখেনি! একটু অভিমান নিয়ে বেডরুমে চলে গেলাম। রাতের খাবার আর হলো না। বেডরুম থেকে থালা বাসনের মিউজিক শুনতে পাচ্ছি। বোঝাই যাচ্ছে সে রেগে আছে। অথচ রাগ করার মতো আমি কি কিছু বলেছি? কী এক বিপদে পড়লাম! বিয়ে তো নয়, এ যেন এক মধুর জ্বালা!
হঠাৎ বাসন ভাঙার আওয়াজ কানে এলো। পা পিছলে পড়ে গেলো না কি? দৌঁড়ে কিচেনে গেলাম। দিয়ে দেখি সত্যি সত্যি আছাড় খেয়ে পড়ে গেছে। হাত ধরে টেনে তুললাম। প্রশ্ন করা উচিত হবে কি না ভাবছি। অতোশতো না ভেবে জিগাইলাম, ‘কেমনে পড়লা?’
সে পাঁচটা প্লেট ও দুইটা গ্লাস হাতে নিয়ে খাড়া থেকে ধুমধাড়াক্কা ফ্লোরে পড়ে গেলো! সব প্লেট ভেঙেচুরে গুড়ো হয়ে গেলো। সে লজ্জিত স্বরে বললো, ‘এভাবে পড়ে গিয়েছিলাম। আপনি না বুঝলে স্লো-মোশনে আরেকবার পড়ি? দেন, আরও পাঁচটা প্লেট দেন।’
আমি তব্ধা মেরে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে মুচকি হেসে বললো, ‘প্লেট-ই তো ভাঙছি, হৃদয় তো আর ভাঙিনি! এতো চিন্তার কিছু নেই। আর হ্যাঁ, আমার মাথার চুল মাথায় থাকলে আপনি যতটা পছন্দ করেন, ভাতে গেলেও ততটা করতে হবে। আমারই তো চুল, ঘৃণার কী আছে!’
চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। মাথা ঝিম মেরে আছে। বোধহয় ব্লাড প্রেসার বাড়ছে। মশারি টাঙিয়ে নেবো কি না ভাবছি। যদি না টাঙাই আরেকটা ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। আড়মোড়া দিয়ে উঠে মশারি টাঙিয়ে নিলাম। সে এসে ফোঁসফোঁস করে ফুলতে লাগলো। তার তালগোল বাঁধানো ভাবসাব দেখে বললাম, ‘আবার কী হয়েছে?’
‘সব কাজই যদি তোমাকে করতে হয়, তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন? আমি কি সামান্য মশারিও টাঙাতে পারি না!’
তার ১৮০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পল্টি মারা দেখে আমার যারপরনাই অবস্থা হলো। সে আজ থেকে আর আমার সঙ্গে শুবে না। কিছুতেই না। এক ঘণ্টা আধ্যাত্মিক তেল মারালাম। তারপর পর কিছুটা শান্ত হলো। কী যেন কী মনে করে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো। নতুন বউ, পাশে শুয়ে আছে। অথচ আমার মাথার মধ্যে কোনোপ্রকার আদর-সোহাগ, ভালোবাসার চিহ্ন-ই নাই, গতকালই মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলেছি। তারমতে শাড়ির কুচি যেহেতু খুলছি আমি, পরিয়েও আমাকে দিতে হবে। কী মুসিবত! রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কুচিই ধরে গেলাম, কাজের কাজ কিছুই হলো না। আমি অপারগ হয়ে বললাম—
‘দেখো, কুচি ভালোভাবে ধরতে না পারা আমার জিন গত সমস্যা। আমার বাপেরও ছিল। তিনিও কুচি ধরতে পারতেন না, আম্মুর বকা খেতে হতো। শুনেছি আমার দাদারও একই সমস্যা ছিল। সমস্যা বেশ পুরনো, বংশগত, আমাকে এবারের মতো ছেড়ে দাও। আর জীবনেও শাড়ি টানাটানি করবো না।’
সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙলো। একটু পরে রেডি হবো, অফিসে যাবো। নাস্তার কথা বউকে বলবো কি না ভাবছি। সে দেখি বড়ো ভাবির ছোটো পোলাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করে দিচ্ছে। বাহ, কী সুন্দর দৃশ্য। কত না লক্ষ্মী বউ আমার। হুদাই তাকে ভুল বুঝি।
বউর কাছে গিয়ে দেখি পোলাটায় চোখ বুজে কাঁদছে। সে-ও হাঁটু গেড়ে কী যেন কী করছে। আমি বললাম, ‘কী সমস্যা? ও কাঁদছে কেন?’
বউ আমায় আমতা আমতা করে বললো, ‘ইয়ে, না মানে প্যান্টের চেইনে তার ইয়েটা আটকে গেছে।’
আমিও মুখ ফস্কে বলে ফেললাম, ‘কীভাবে?’
সে তখন আমার প্যান্টের চেইন নিচের দিকে এক টানে খুলে আবার উপর দিকে আরেক হেঁচকা টান দিয়ে বললো, ‘এভাবে।’
জিহবা বের করে দিলাম এক ভয়ংকর চিৎকার। চোখ খুলে দেখি হাসপাতালে ভর্তি। বংশের বাতিঘরে অনেকগুলো ব্যান্ডেজ মারা। অসহ্য ব্যথায় কাতরাচ্ছি। একটু আগে আমার শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ ডক্টর কবজ এ হুদা আমাকে দেখতে এসেছেন। মনের দুঃখে ওস্তাদকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘ওস্তাদ, মানুষ বিয়ে করে কেন?’
ডক্টর হুদা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘মানুষ বিয়ে কেন করে, এটা জানার জন্য আমিও একবার বিয়ে করছিলাম। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরে ভুলে গেছি, বিয়ে কেন করছিলাম!’