জানতে পারলো তার বাবা বেচে আছে।
স্নেহা ঢাকা শহরেই বড় কোম্পানিতে চাকরি করে।মা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়িয়েছে।গ্রামের কয়েক শতক জমি বিক্রি করে ব্যাবসা শুরু করে স্নেহার মা।তারপর কাপড়ের ব্যাবসা করেন তিনি।
মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্নেহা চলে আসে গ্রামে।অসুস্থতার তিন দিনের মাথায় মারা যায় তার মা।মারা যাওয়ার আগে বলে,
__তোমাকে এতদিন আমি মিথ্যে বলেছি মা।তোমার বাবা বেচে আছে।কিন্তু কখনও আমাদের খোঁজ নিতেন না।উনি কেমন আছে জানতে খুব ইচ্ছে হতো।অনেক খুঁজেছি তোমার বাবাকে।তোমার যখন বয়স পাঁচ তখন আমি তার খোঁজ পাই।কিন্তু আমার যে দেরি হয়ে যায় মা।তোমার বাবা আরেক বিয়ে করেছেন।সন্তান আছে তার।তাকে আমি বলিনি তোমার কথা।আমি চেয়েছিলাম তুমি প্রতিষ্ঠিত হলে তোমাকে তার সামনে নিয়ে যাবো।আমি মনে হয় বাঁচবো না।তোমার বাবার পরিচয় পত্র এবং কোথায় থাকেন সব কিছু আমার ডায়েরিতে আছে মা।
মায়ের কবর জিয়ারত করা ও বিভিন্ন কাজ শেষে মায়ের ঘরে আসে স্নেহা।ডায়েরি হাতে নিয়ে পড়তে থাকে।ডায়েরি পড়ে জানতে পারে বাবা মায়ের বিয়ে ছিলো ভালোবাসার বিয়ে।স্নেহার দাদা দাদী মেনে নেয় না আরো অনেক কিছু।ডায়েরির শেষের পাতায় বাবার যুবক বয়সের ছবি দেখলো স্নেহা।চোখ বেয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা পানি।এক প্রথম দেখলো বাবার ছবি।
এক সপ্তাহ পর রওনা দিলো ঢাকার পথে স্নেহা।গন্তব্য বাবা নামক অচেনা লোককে দেখার।পেয়ে গেলো সকল ঠিকানা।পৌঁছে গেলো বাবার বাড়িতে।গিয়ে দেখলো একটি জয়েন্ট ফ্যামিলি।সবাই কত হাসিখুশি আছে।সবাই সুখে আছে শুধু সুখে নেই স্নেহা।না এত সুখ তো তাদের দেওয়া যাবে না।তার মা তো তাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে।কতশত রাত্রিতে তার মা নীরবে কান্না করে গেছে। নিঃস্ব জীবন যাপন ছিলো স্নেহার মায়ের।এর শাস্তি তো স্নেহার বাবাকে দিতেই হবে।বাবা বলে পার পাবে না লোকটি।বাবা যেমন তার রক্তের মা তো তার গর্ভে ধারণ করেছে।
চলে গেলো বাবার সামনে।লোকটি চিনলো না মেয়েটিকে।স্নেহা বললো,
__চিনতে পারছেন না নিশ্চয়ই আমাকে।
__না মা কে তুমি?
__তা চিনবেন কেনো বউ বাচ্চা গ্রামে রেখে এসে বড়লোক বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করে ফুর্তি করছেন তো।জীবনটা রঙিন কাগজে মুড়িয়ে নিয়ে আমার মায়ের জীবন রংহীন করে এখন তো সন্তানকে চিনবেন না।মেয়েরা নাকি বাবার চেহারা পায় তো বলুনতো আমি কার মত হয়েছি?আপনার মত নাকি আমার মা নিশি আক্তারের মত?
নিশি নামটি শুনেই বুকের ভিতর কম্পন দিলো লোকটির।তাকালো স্নেহার দিকে।অবাক হলো পরিবারের সকল সদস্য।আজ পরিবারের বড় মেয়ের বিয়ে।সম্পর্কে স্নেহার সৎ বোন।স্নেহার বাবা বললেন,
__তুমি আমার আর নিশির মেয়ে?
স্মিত হাসলো স্নেহা তাকালো বাবার দিকে সেই বাবা যাকে সে কোনোদিন দেখেনি।উপলব্ধি করলো বাবা তার বাবা।কিন্তু মন টানে এই বাবার প্রতি কিভাবে টানতে মন লোকটি যে প্রতারক।
__হ্যা দুর্ভাগ্য বসত আপনার মত নির্দয় ব্যাক্তি যার কোনো মনসত্ববোধ নেই যে পারেনি তার প্রথম বউকে নিয়ে সংসার করতে যে পারেনি তার প্রথম সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে আমি তারই মেয়ে স্নেহা।
সবাই তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে বরপক্ষরা ক্ষিপ্ত হলো স্নেহার বাবার উপর।নির্দয় লোক এই লোকের তো ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না। যার বাবা কুমর্ম করে তার মেয়ে কেমন শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এমন ধারণা দিয়ে বিয়ে ভাঙলো তারা।আশেপাশের প্রতিবেশীরা ছিঃ ছিঃ করতেছে তাদের নিয়ে।অসহায় হয়ে পড়লো স্নেহার বাবার পরিবার সহ্য স্নেহার বাবা।তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো স্নেহা।বললো,
__পাপ কাউকে ছাড়েনা আজ যেটা হলো আপনার কর্মের ফল।আজ আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। আর আমি জানি আমি এখান থেকে গেলে পুরো সমাজ আপনাকে আর আপনার এই বড়লোকি পরিবার নিয়ে কি কি মন্তব্য রাখবে।আমি এতেই তৃপ্তি,পুরুষ বলে এক অসহায় নারীকে তিক্ত জীবন দিয়েছিলেন আপনি আজ আপনার রক্ত আপনাকে তিক্ত জীবন দিলো।ভালো থাকবেন না না ভালো থাকার ব্যবস্থা তো আমি শেষ করে দিলাম।
বলেই চলে গেলো স্নেহা।স্নেহার যাওয়ার পর অনেকে অনেক কথা বলছে তাদের পরিবারকে।সহ্য করতে পারলো না লোকটি হাঁটু গীরে বসে পড়লো ফ্লোরে কেউ আসলো না তার কাছে কে আসবে সবাই যে শোকে আছে সবার মুখে এক কথা কর্মফল পেয়েছে তিনি ঠিক করেছে প্রতিবাদী মেয়েটা একদম ঠিক।
Post Views: 208
Like this:
Like Loading...
Related