ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ঘটে গেলে হুলুস্থুল কাণ্ড। দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে লোকসভায় পড়লেন দুই তরুণ। তাদের হাতে ধরা টিনের কৌটা থেকে বের হলো হলুদ রঙের ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় ভরে গেলে লোকসভা। তাদের মুখে স্লোগান, ‘তানাশাহি নেহি চলেগি’ (স্বৈরতন্ত্র চলবে না)। হকচকিত সবাই। সঙ্গে সঙ্গে মুলতবি করে দেওয়া হয় সভার কাজ।
২২ বছর আগে ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, ঠিক এই দিনে ভারতের সংসদ ভবন আক্রমণ করেছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সেই বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন দিল্লি পুলিশের ছয় সদস্য, সংসদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুজন ও বাগানে কর্মরত এক মালি। ঘণ্টাখানেকের সেই বন্দুকযুদ্ধে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয়েছিলেন।
গতকাল বুধবার বেলা একটা নাগাদ লোকসভায় জিরো আওয়ার চলাকালে ঘটনাটি ঘটে। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মালদহ উত্তর থেকে নির্বাচিত বিজেপি সদস্য খগেন মুর্মু তার নির্বাচনী এলাকায় প্রস্তাবিত বিমানবন্দর নিয়ে কিছু দাবি জানাচ্ছিলেন। হঠাৎই দেখা যায়, দর্শক গ্যালারি থেকে একজন সভাকক্ষে ঝাঁপ দিয়ে সদস্যদের আসন টপকে স্পিকারের দিকে এগোচ্ছেন। অন্য একজন গ্যালারি থেকে ঝুলতে ঝুলতে লাফ দিলেন। হাতে রংমশালের কৌটা থেকে বেরিয়ে আসছে হলুদ রঙের ধোঁয়া, ঠিক যেমন ফুটবল খেলার মাঠে দেখা যায়।
এ সময় হট্টগোলের মধ্যে শোনা যায় হিন্দিতে দেওয়া ওই যুবকদের স্লোগান, ‘তানাশাহি (স্বৈরতন্ত্র) নেহি চলেগি’। মুহূর্তের মধ্যে মুলতবি করে দেওয়া হয় অধিবেশন। কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নিরাপত্তাকর্মী তৎপর হয়ে জাপটে ধরেন দুই তরুণকে।
সংসদের দায়িত্বে থাকা ‘ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড’ নিরাপত্তাকর্মীরা দুই তরুণকে পাকড়াও করতে দেরি করেননি। সংসদ ভবনের বাইরে থেকেও দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের একজন নারী। এই চারজনই এক গোষ্ঠীর কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়েছেন, ওই ধোঁয়া কোনো বিষাক্ত গ্যাস নয়।
২২ বছর পর সেই একই দিনের সংসদ ভবনে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার কারও কাছে অবশ্য অস্ত্র ছিল না। হাতে ছিল রংমশালের কৌটা, মুখে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী স্লোগান। এভাবে বিক্ষোভ কারা দেখালেন, কেনই-বা দেখালেন, কোন উদ্দেশ্যে, বিকেল পর্যন্ত পুলিশ অবশ্য তা জানায়নি।
দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। তবে মনে হচ্ছে, দুই জায়গার বিক্ষোভকারীরা সম্পর্কযুক্ত। পুলিশ আটক করার পর নীলম বলেন, ‘তিনি ছাত্রী। সাধারণ মানুষ। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তার অভিযোগ, এই সরকার কারও কোনো অভিযোগ শোনে না। ছাত্র, তরুণ, কৃষক, শ্রমিক কারও প্রয়োজন খেয়াল করে না। দাবি জানাতে গেলে লাঠি খেতে হয়। তাই প্রতিবাদ। পুলিশের সামনেই তিনি স্লোগান দেন, ‘তানাশাহি নেহি চলেগি’। এই ঘটনায় সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ঘিরে আরও একবার প্রশ্ন উঠে গেল।