আপনি যা- সন্তানও তাই; তার অধিক!

 

বাচ্চাদের হ্যান শেখান, ত্যান শেখান অথচ বড়দেরও তো অনেক শেখার বাকি!- তা
কেউ বলে না! বড়রা আদর্শবান না হলে, উত্তম চরিত্রের ধারক না হলে বাচ্চারা
জীবনেও ভালো কিছু শিখবে না! পারিবারিক শিক্ষায় আলো থাকলে ছোটরা আপনা-
আপনি ভালোটুকু শিখবে!

তখন অভাব এবং আভিজাত্য, ভদ্রতা এবং বেয়াদবি- কোনটাই আলাদা করে
শেখানো লাগবে না। ছোটরা অনুসরণের চেয়ে বেশি অনুকরণ করে! আপনারা যা
বেডরুমে বসে বলেন বাচ্চারা তা বাইরে এসে বলে দেয়! ওরা সরল যে! নিজেদের যে
চরিত্র ঘরে দেখান সেই চরিত্রই ওরা বাইরে দেখায়! ছোটরা সাহসী যে!

স্বামীকে কিভাবে ট্রিট করেন, স্ত্রীর সাথে কেমন আচরণ করেন, শ্বশুর-
শাশুড়িকে কোন চোখে দেখেন- বাচ্চারা এসব খুব যত্নের সাথে শেখে! যে ধরণের
জটিলতায় ভোগেন সেই কুটিলতা তাদেরকেও সংক্রমণ করে!

আপনি শিশুদের অভিনয় করে কিছুই শেখাতে পারবেন না। আপনি বাস্তবে যা করেন
আপনার সন্তান সেটা হুবহু নকল করে। আপনি মুরুব্বিদের সালাম দিলে আপনার
সন্তানও সালাম দেয়া শিখবে! আপনি কাউকে শালা বললে আপনার সন্তানও
অন্যকে শালা বলে! আপনার জিহ্বা যদি অশ্লীলতার গোডাউন হয় তবে সন্তানের
মুখ হবে অশ্লীলতার কারখানা! কাঁচমালে যা দিবেন উৎপাদনের সেটার বৈশিষ্ট্যই
পাবেন।

শিশুদের জন্য প্রাতিষ্ঠনিক শিক্ষার চেয়ে পারিবারিক শিক্ষা জরুরী। পিতা-মাতা
ভালো হলে সন্তান বিপথে গেছে এমন চাউর এই সমাজে খুব কম! কেউ কেউ বলেন,
শিক্ষকদের সন্তান মন্দপথে যায় কদাচিৎ!- যদি শিক্ষক আদর্শিক হন!

আপনারা বদলে যান সন্তান বদলে যাবে। ঘুষ খাইয়েন না, দুর্নীতি কইরেন না,
মানুষকে ঠকাইয়েন না, মানুষের অধিকার হরণ কইরেন না! সন্তানের শরীরে
হারামের বিষ ঢুকাইয়েন না! এরপর আপনার আর কিছুই করা লাগবে না! প্রকৃতির
পাঠশালার সন্তান মানুষ হয়েই বেড়ে উঠবে! সন্তানকে কী শেখাবেন- সেটা নিয়ে
আর টেনশানের দরকার নাই!

শিশুদের সামনে বেশি বেশি দান-সদকাহ করেন। শিশুদের আসরে অন্যের নামে
প্রশংসা করে। দোষ গোপন রাখেন। শিশুরা এসব শিখবে। আপনি কাউকে সম্মান
দেখালে আপনার শিশুও তাকে সম্মান দেখাবে। মিথ্যা বললে মিথ্যা বলবে। বাবা-মা
সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠান। কাজেই শিশুদের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা
করুন।

যা আপনি না তা যতোই শেখান, যদি ব্লেন্ড করেও ঢোকান তবুও কাজের কাছ
কিছুই হবে না। আপনার চরিত্রের বাইরে সন্তান যেতে পারে খুব কম- যদি সে
এতিমখানায় বেড়ে ওঠে তা ভিন্ন কথা! কিন্তু আপনার সংস্পর্শে থাকলে
আপনাকে ছাড়িয়ে যাবে! সেটা মূলের ভালোতে হোক কিংবা মন্দতে!

আপনি যা সন্তান তার ছায়ালিপি হবে। যা করবেন তার রক্তেও সেটা প্রবাহিত
হবে! আপনি প্রকৃত মানুষ হলে সন্তান অমানুষ হবে না। শুধু খেয়াল রাখবেন,
সন্তান যাতে মন্দ সঙ্গে না পড়ে! কোন নেশায় না ডোবে! তবেই সন্তান মানুষ
হবে। আপনিও সন্তানের পরিচয় দিয়ে গর্বিত হবেন। আপনি ভালো হলে সন্তান
ভালো হতে বাধ্য!- সমাজ সেটাই চিত্রে এঁকে দেখিয়েছে!

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

Exit mobile version