প্রেমের, বিরহের, বিদ্রোহের কবি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর রচিত সাহিত্যে যেমন প্রেম রয়েছে তেমনি রয়েছে বিরহ। নজরুলের অসংখ্য গান ও কবিতায় বিরহ, অভিমান ও অতৃপ্তর রূপ ফুটে উঠেছে। প্রেমিক নজরুলের আসল পরিচয় মেলে তাঁর রচিত গান ও কবিতায়। নজরুলের প্রেমের সাথে কুমিল্লার রয়েছে নিরব সম্পর্ক।
কবি নজরুলের উল্লেখযোগ্য দুইটি প্রেমের সম্পর্ক ই ছিলো কুমিলাকে ঘিরে। এছাড়াও জীবন সঙ্গী প্রমিলাও কুমিল্লার মেয়ে।
অনেকের মতে নজরুলের প্রথম প্রেম ছিল সৈয়দা খানমকে নিয়ে। প্রেমিক নজরুল ভালোবেসে তার নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার দৌলতপুর গ্রামের মেয়ে ছিলেন নার্গিস। দৌলতপুরে এক বিয়ে বাড়িতে তাদের প্রথম দেখা। তারপর তা ভালোবাসায় রূপ নেয়। কবি এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি।
১৯২১ সালে নার্গিসকে বিয়ে করেন কবি। কিন্তু বাসর হলো না। এক অজানা অভিমানে বাসর রাতেই নার্গিসকে ফেলে চলে যান নজরুল। কিন্তু সেই অভিমানের কারণ কবি কোনো দিন কাউকে মুখ ফুটে বলেননি। আজ পর্যন্ত তা স্পষ্টভাবে খুঁজেও কেউ বের করতে পারেনি।
এরপর নজরুলের অপেক্ষায় ১৬টি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন নার্গিস। কবিকে একটি চিঠিও লিখেছিলেন। সেই চিঠির উত্তরে কবি লিখেছিলেন- ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই, কেন মনে রাখো তারে, ভুলে যাও ভুলে যাও তারে একেবারে।’
শেষ পর্যন্ত কবি নজরুলের জীবনসঙ্গিনী হয়েছিলেন প্রমীলা সেনগুপ্তা। পারিবারিক সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। প্রমীলার ডাকনাম ছিল দুলি। তবে অনেকেই বলেন, কুমিল্লায় থাকাকালীন সময়ে প্রমীলার প্রতি অনুরক্ত হয়েছিলেন নজরুল। প্রমীলার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের সঙ্গে প্রেমও হয়েছিল কবির। ‘বিজয়িনী’ কবিতায় কবির এই প্রেম প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে ১৪ বছর বয়সী প্রমীলার সঙ্গে কবির বিয়ে হয়। তখন কবির বয়স ছিল ২৩ বছর। অবশ্য ১৯২৩ সালের ১৫ অক্টোবরে প্রকাশিত দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত ‘দোদুল দুল’ নামক কবিতায় প্রমীলার সৌন্দর্য বর্ণনা করেছিলেন নজরুল।
নজরুল ভক্তদের মতে, কবি নজরুল গভীরভাবে ভালোবাসতেন প্রমীলাকে। অল্প বয়সে কবির স্ত্রী প্রমীলা যখন পক্ষাঘাতে অচল হয়ে পড়েন তখন তাকে সারিয়ে তোলার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন এবং প্রেমময় সঙ্গ দিয়ে গেছিলেন সর্বোতভাবে।
নজরুল গবেষক সাংবাদিক হুমায়ুন কবির রনি জানান, নজরুল শুধু বিদ্রোহী কবি ই নন তিনি প্রেমের কবি। আর নজরুলের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটেছে কুমিল্লায়।
‘অরুণ তুমি, তরুণ তুমি, করুণ তারও চেয়ে/ হাসি দেশের তুমি যেন বিষাদলোকে মেয়ে’ এই গানটি শয্যাশায়ী প্রমীলাকে নিয়েই লেখা
আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন’‘প্রিয় যাই যাই বলো না’ এ ধরনের গানে তার অপার্থিব প্রেমের উৎসরণ ঘটে।
এছাড়াও তোমারে বন্দনা করি, স্বপ্ন-সহচরী, লো আমার অনাগত প্রিয়া, আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া এ রকম অজস্র প্রেমের কবিতা ও গান রচিত করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাই তাঁকে প্রেমিক কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও অত্যুক্তি হবে না।