মানুষ কি মানুষের ভালো চায়? কারো জীবনে উন্নতি আসুক, কেউ সুস্বাস্থ্যের
অধিকারী থাকুক কিংবা কেউ সম্মানিত হোক সেটা বাঙালি মনেপ্রাণে কামনা
করে? যারা এগিয়ে গিয়ে কাঠি করে, যারা গোপনে ক্ষতি করে কিংবা পিছনে বদনাম
করে- তারা অপরের ভালো চায় সেটা বিশ্বাস করতে বলেন? এই সমাজে? এখনো?
কারো ভালো কেউ সহজভাবে সহ্য করে? কারো তরতরিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় ক'জনের
সাপোর্ট থাকে? বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু নিয়ে প্রচলিত যে গল্প আছে
তা তো আপনি নিশ্চয়ই জানেন!
জাতীয় শোক হা-হুতাশ নিয়েও কথা বলতে ইচ্ছা করে কিন্তু সে প্রসঙ্গ থাক।
আচ্ছা, কেউ বিড়ি ফুঁকে- এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় কিংবা নিষেধ করে না-
এমন মানুষ ক'জন? কেউ ঘুষ গ্রহন করে, দুর্নীতিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখে- এটার
প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে না- এমন ক'জন পাবেন? কেউ চরিত্র বিকিয়ে দিলে-
সমাজশুদ্ধ লোক সেটা মেনে নেবে? কেউ নামাজ পড়ে না, ধর্মকর্ম মানে না- এটা
পছন্দ করে এমন মানুষ ক'জন মিলবে? প্রথম প্যারায় যে ভালো চায় না- সে
বিষয়ক কথা বলেছি এবং দ্বিতীয় প্যারায় ভালো চায় সেটা দেখিয়েছি- বিষয়গুলো
পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়ে গেলো না? এর পিছনেও ছন্দময় দ্বন্দ্ব আছে।
কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে অন্য কারো কাছে জিজ্ঞেস করুন- ভালোর
চেয়ে মন্দ বেশি শুনবেন। তবে সিগারেট ফুঁকতে নিষেধ করে কেনো? যদি উপকার না
চায় তবে ক্ষতি থেকে ফিরিয়ে রাখতে চায় কেনো? কেউ কোন অপরাধ করলে তাকে
সেটা লোকসমাজে বলে লজ্জিত করা গেলে নিজেকে বাহাদুর বাহাদুর মনে হয়!
দুর্নীতিবাজ-ঘুষখোরকে গালাগাল করতে পারলে লোকের মনোযোগ পাওয়া যায়!
কখনো কখনো দেখবেন অন্যায়কারী আরেকজন অপরাধীকে শনাক্ত করে।
ঘুষখোর দুর্নীতিবাজকে গালাগাল করে। এসবে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়!
ভালো মানুষ মানুষের ভালো চায়। ভালো মানুষ চেনার উপায় কি? আমি আসলে জানি
না। তবে যদি দেখেন কারো বেতনের টাকায় টেনেটুনে সংসার চলছে তাকে ভালো
মানুষ ভাবতে পারেন। আপনার জানা কোন সত্য সম্পর্কে কেউ যখন মিথ্যা কিছু
বলে না তখন তাকে ভালো মানুষ হিসেবে ধরতে পারেন। কারো কাছে আমানত রাখলে
সেটা যদি ঠিকঠাক ফেরৎ দেয়, বিশ্বাসর অমর্যাদা করে না- তবে তাদেরকে
ভালো মানুষের খাতায় রাখতে পারেন। পোশাক দেখে, সার্টিফিকেট পড়ে কাউকে
ভালো মানুষ ভাবা ঠিক হবে না। তবে চরিত্র দেখে, আচরণের চিত্রায়ণ দেখে এবং
কথা-কাজের মিল দেখে কাউকে না কাউকে ভালো মানুষ হিসেবে পাওয়ার আশা
করতে পারেন। পাওয়া যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস সুন্দর মানসিকতা। স্রষ্টা এরচেয়ে উৎকৃষ্ট
কিছুই সৃষ্টি করেনি। যাকে আমরা পছন্দ করি, যার ওপরে আমাদের ভক্তি কিংবা
যার জন্য সম্মান-শ্রদ্ধা চলে আসে- সে একজন সুন্দর মনের মালিক। হাসি দিয়ে
কথা বলে, পারস্পরিক সম্মান রাখে এবং ব্যথা দেয় না বলে সে নিমিষেই আপন
হয়ে ওঠে। যার মন সুন্দর, যার ভাবনা সুন্দর তাঁর সব সুন্দর।
অনেক কিছু না থাকার, না পাওয়ার তৃষ্ণা সুন্দর মানসিকতা দ্বারা মিটিয়ে দেওয়া
যায়। আঘাত ঘুচিয়ে দিতে, ক্ষত সারিয়ে নিতে একটা সুন্দর মন খুব দরকার।
সুন্দর মানসিকতাকে সঙ্গী করা গেলে সময় হেসে ওঠে, চাপ কমে যায় কিংবা
বিরক্তি থাকে না। সুন্দর মনের মানুষ পাওয়া মানে ভাগ্য বদলে যাওয়া। সঙ্গী
থেকে সহকর্মী, বস থেকে যাত্রার সঙ্গী- মানসিকতায় ভালো হলে সময় উপভোগ্য
হয়। জীবনের আয়ু খুব সংক্ষেপিত মনে হয়।
সম্পদ খোঁজ করার চেয়ে, রূপের তালাশের চেয়ে মনের সৌন্দর্য মেপে নেওয়া
উচিত। সুন্দর মন মানে একটা সুন্দর জীবন। যেখানে বিশ্বাস আছে, যেখানে ভরসা
আছে। মনের মধ্যে যদি কুৎসিত মতলব থাকে তবে ধনসম্পদ, যৌবন-তরঙ্গ
এসব মনের যন্ত্রণা নেভাতে পারে না। মন ভালো থাকলে কোন আঘাত-ব্যথা,
অভাব-অনটনের দুঃখ মাথায় থাকে না। ভালো মানুষ হওয়া খুব জরুরি। আবার
জীবনে ভালো মানুষ পাওয়াও বড্ড দরকারি। জীবনটা ফুল-ফসলের হলে মরণ
খাটিয়াতেও স্বস্তি বজায় থাকবে। নয়তো দহন-জ্বালা।
সবকিছু পচে গেছে- বলছি না। তবে পচনের স্রোত তীব্রভাবে গতিময়। যেকোনো
সময়ে যে কাউকে ভাসিয়ে নিতে পারে। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো যেমন পাপ
হবে তেমনি মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করলেও সেটা মহাপাপ হবে! যে বারবার
ধোঁকা দেয়, যার চরিত্র নাই তাকে বিশ্বাস করে, বারবার সুযোগ দিয়ে দুঃখের
দরিয়ায় সেচ দেওয়া ঠিক হবে না। জীবনে অল্প মানুষ থাকুক, তাও কয়েকজন
ভালো মানুষ আসুক। ভালো মানুষ চিনবেন কী করে? লিখে এসেছি। খুঁজে নিন।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com