রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী জেলা জুড়ে দখলবাজি শুরু করেছেন বিএনপির একশ্রেণীর নেতাকর্মী বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে জনমনে তীব্রক্ষোভ,অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়,দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।অন্যদিকে এসব কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণের মাঝে বিএনপির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে,গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি)
মালশিরা গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির চাতাল জবরদখল করা হয়েছে।
এতে সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষের পাশাপাশি চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার মালশিরা গ্রামের দিলিপ কুমার মন্ডলের পুত্র সেতু কুমার মন্ডল বাদি হয়ে ভবানীপুর গ্রামের মৃত বদু হাজির পুত্র ও জেলা যুবদল নেতা শরীফ উদ্দিন মুন্সীকে বিবাদী করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর-১৮৪,মালশিরা মৌজার,খতিয়ান নম্বর ৩১৬,দাগ নম্বর ৬৬৩ ও ৬৬৪,শ্রেণী চাতাল,পরিমাণ ২০.৩৩ শতক। গত ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে দিলিপ কুমারের কাছে থেকে ক্রয় করেন তার স্ত্রী শ্রীমতি লিপি রানী ও পুত্র সেতু কুমার মন্ডল। উক্ত সম্পত্তির উপর চাতাল নির্মান রয়েছে। বর্তমানে উক্ত চাতাল বিবাদী জোরপূর্বকভাবে দখল করেছে। বিবাদীকে বিষয়টি বলতে গেলে উক্ত বিবাদী আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। উক্ত বিবাদী অত্যন্ত দুর্ধস্ব প্রকৃতির লোক। বিবাদীর সহিত দ্বন্দে লিপ্ত হইলে আইন ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। বিধায় সুষ্ঠ বিচারের আশায় আপনার সরনাপন্ন হইলাম। এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তিনি দিলিপ কুমার মন্ডলের কাছে থেকে জায়গা কিনেছেন এখানে জবরদখলের কিছু নাই।দিলিপ তাকে জায়গা বুঝে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।দিলিপের জায়গা কোথায় সেটা সে বুঝিয়ে দিক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সেতু কুমার মন্ডল বলেন,তার বাবার সঙ্গে শরিফ মুন্সীর কি হয়েছে,সেটা তাদের বিষয়।কিন্ত্ত বাবার অপরাধে তো স্ত্রী-পুত্রের জমি জবরদখল করা যায় না,তারা তাদের জমি ফিরে চান।
অন্যদিকে গত ৫ আগস্ট বিকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের হিজলগাছি গ্রামের দুলাল ঘোষ ও তার জামাতা কমল ঘোষের দুটি বাড়িতে দলবল নিয়ে হামলা করেন বিএনপি নেতা জয়দুল ইসলাম ফেন্সু ও তার লোকজন। তাৎক্ষণিক আধাপাকা বাড়ি দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তার আগে ফেন্সু ও তার লোকজন দুটি বাড়ির জিনিসপত্র লুট ও বাড়ির আশপাশের গাছগাছালি কেটে সাবাড় করেন। রাতারাতি দুটি বসতভিটা ট্রলি দিয়ে চষে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় বলেও আলোচনা রয়েছে।এলাকাবাসী জানায়, জয়দুল ইসলাম ফেন্সু মাটিকাটা ইউনিয়নের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য।
এবিষয়ে দুলাল ঘোষের কন্যা শিবা রানী ঘোষ বলেন, জমির সব কাগজপত্র আছে। বসতভিটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও)কাছে অভিযোগ করেছিলাম। ইউএনও আমাদের আদালতে যেতে বলেছিলেন। সেনাবাহিনীও এসেছিল কিন্তু দখলদারকে সরাতে পারেনি।
এবিষয়ে বিএনপি নেতা জয়দুল ইসলাম ফেন্সু বলেন, জমিগুলো আমাদের। আওয়ামী লীগ আমলে জমি উদ্ধার করতে পারিনি। এ জমির কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আমরা আমাদের জমি উদ্ধার করেছি।
এদিকে দুর্গাপুরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দোকানপাট দখল ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জেলা বিএনপির সদস্য এবং দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সাইদুর রহমান মন্টুকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছিল গত ৩১ আগস্ট। শোকজ নোটিশের জবাব পাওয়ার পর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার মন্টুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তি করেন। পরে মন্টুর ওপর থেকে সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। মন্টুর দাবি তিনি দলীয় কতিপয় নেতাকর্মীর ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছিলেন।
অপরদিকে চাঁদা না দেওয়ায় দোকান ভাঙচুর এবং দখলবাজির অভিযোগে গত ২৫ অক্টোবর কেশরহাট পৌর যুবদলের সদস্য সাদ্দাম হোসেন এবং দুই নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক শাহরিয়ার সাকিলের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়াও পুকুর দখল ও মাছ ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দুর্গাপুর পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম আজমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আজমকে গ্রেফতার করেন যৌথবাহিনী।
এদিকে বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন ইউপি বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন কয়েকজন পুকুর মালিক।
এদিকে দলের ব্যানারে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে দিয়েছেন দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো অপকর্মে জড়িত হলে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা রাজশাহীতেও এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণু) নীতি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।#
Post Views: 54
Like this:
Like Loading...
Related