অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান কে যেমন দেখেছি

           মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
ইলম মহান আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।যাকে ইলম দান করা হয়, সে পরম সৌভাগ্যমান।মহান আল্লাহ তায়ালা আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে ইলম তুলে নিবেন। (সহীহ্ বুখারী)
এই হাদিসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখতে পাই প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ও বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন  ঢাকা আলিয়ার মুহাদ্দিস ও সিলেট সরকারি আলিয়ার অধ্যক্ষ আল্লামা ফখরুদ্দীন (রহ) এর ভাতিজা ও বড় জামাতা আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক চট্টলার উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, ইসলামিক স্কলার,লেখক,গবেষক, বহু গ্রন্থের প্রণেতা ও  অনুবাদক জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার  অধ্যক্ষ  আমিনুর রহমান সাহেব এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। হযরতের মৃত্যুতে আমি মর্মাহতো হয়ে গিয়েছিলাম। মৃত্যুর সংবাদ শুনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গিয়েছিলাম।এভাবে শোক-সাগরে ভাসিয়া চলে যাবে কখনো কল্পনা করিনি। হযরতের সাথে বহুস্মৃতি জড়িত।সফরসঙ্গী হিসেবে অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। অধ্যক্ষ  আমিনুর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ইন্টারভিউ দিলেন, মাদ্রাসা ছাত্র বলে পরীক্ষক ভর্তি নিতে অনিহা প্রকাশ করে বলেন, ” You could not”. হুজুর প্রতুত্তরে বললেন, “l can almight of Allah”. এই বাক্য শুনার পর পরীক্ষকমন্ডলী আচার্য হয়ে গেলেন।
গাছবাড়িয়া কলেজ মাঠে খেলার ম্যাচ চলতো।এই মাঠ হুজুরের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।বাল্যকালে একদা হুজুর বাড়ি থেকে গাছবাড়িয়া কলেজ ময়দানে খেলা দেখতে গিয়েছিল। এই সংবাদ দাদার কর্ণগোচর হলে,ওনাকে ভৎসনা করাতে আর কোনো দিন খেলাধুলা করে সময় নষ্ট করেননি। একদিন আমি মাদ্রাসার মাঠে আমার হাত থেকে  বল ছুটে গেলে তখন হুজুর এটা দেখে আমাকে এই কথাটি বলেছিল।
অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান (রহঃ) উর্দু, ফারসি, আরবি,হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা সহ প্রভৃতি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি একজন সফল আরবীবিদ, শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন। কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, উসুল, আরবী, উর্দু ও ফার্সি ইত্যাদি ইসলামী শিক্ষায় অগাধ পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
যখন মরহুম হুজুরের সাথে মাদরাসা শিক্ষক  অধ্যাপক মোহাম্মদ  মামুন ও অধ্যপক মাওলানা আমজাদ হোসেন আরবীতে কথোপকথন হতো উপস্থিত  শিক্ষার্থীরা খুবই উপভোগ করতো।সংলাপে তাদের ব্যক্তির আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি,শিষ্টাচার শিক্ষনীয় বিষয় ছিল।
আমিনুর রহমান (রহঃ) প্রায় ৭০টির  অধিক গ্রন্থপ্রণয়ন করেছেন। সেই গ্রন্থগুলো অধ্যায়ন করে আমি বিমোহিত হই।একজন ব্যক্তির মধ্য বহুপ্রতিভার সমাহার। তাঁর  লিখিত পুস্তকসমূহ অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় ওনি কত বড় গবেষক ও লেখক।
অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান( রহঃ) দুনিয়াবিমূখ ও নিরহংকার ব্যক্তি ছিলেন। বিন্দু পরিমাণ এই মহান মনীষীর জীবনে আমি লক্ষ্য করিনি। পথ, মত,ধর্ম নির্ভিষেসে সকলের নিকট গ্রহনীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কারও মধ্যে ভেদাভেদ করতেন না। সকলকে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। ছোট-বড়, ধনী- গরীব, সাদা-কালো, মালিক – শ্রমিক সবাই হজরতের চোখে সমান। এর প্রমাণ হলো হুজুরের জানাজার দৃশ্য ।অতিথিপরায়ণতা হুজুরের অন্যতম একটা গুন।হুজুরের অফিসে কোন মেহমান আসলে খালি মুখে কেউ যেত না।সাধ্যমত আতিথেয়তা  করাতেন। এমনকি কেউ সাথে বাজারে গেলে চায়ের দোকানে বিল দিছে এরকম বলা অকল্পনীয়।
এই মহান মনীষী ৭ই ডিসেম্বর ২০২২ ইং রাত ৮.৩০ এর সময়  মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার প্রিয় হুজুরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুক। একই সাথে  মাগফিরাত কামনা করছি। আমিন সুম্মা আমিন।
Exit mobile version