ইসলামে চার বিয়ের কথা সবাই জানে। এটা একটা মারাত্মক নারীবিরোধী প্রথা।
সুরা নিসা আয়াত নম্বর তিন (৪:৩) বলছে:
আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক্ আদায় করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।
বিরাট ফাঁকি লুকিয়ে আছে এর ভেতর। মুসলমান পুরুষের জন্য ‘সর্বোচ্চ চার স্ত্রী’ কথাটা কিন্তু ঘোর মিথ্যে। গোপন সত্যটা হল, একসাথে এক সময়ে সর্বোচ্চ চার স্ত্রী। তারপরে যে কোনো স্ত্রীকে বা চারজনকেই এক মুহুর্তে একসাথে তালাক দিয়ে আবার চার মেয়েকে বিয়ে করতে কোনোই অসুবিধে নেই। নবীর (সা) নাতি ইমাম হাসান এটা করেছেনও। তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল আশী থেকে তিন’শ, বিভিন্ন বই অনুযায়ী। সাধারণ মুসলমানেরা এটা করেন না, সেটা অন্য কথা। কারণ সব ধর্মের সাধারণ মানুষেরাই ভাল মানুষ। আশ্চর্য কথা হল, যখন এই আয়াত নাজিল হল, তখন অনেক লোকের চারের বেশি স্ত্রী ছিল। আল্লার নির্দেশ এসে গেছে সর্বোচ্চ চার, এদিকে ঘরে আছে চারের বেশি। কী করা যায় এখন! নবী (সা) কে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন, পছন্দসই চার জন রেখে বাকি বউগুলোকে তালাক দিয়ে দিতে। ব্যস। ইসলামী বিয়ে-আইনের প্রথম বলি হল সেই নাম-না-জানা কাব্যে উপেক্ষিতাদের দল, যাদের কোনোই অপরাধ ছিল না। অথচ তারা এক নিমেষে ঘর হারাল, স্বামী হারাল, আশ্রয় হারাল, সন্তান হারাল।
দেড় হাজার বছর পার হয়ে গেছে, সেই নিরপরাধ হতভাগিনীদের নিঃশব্দ আর্তনাদের জবাব আজও পাওয়া যায়নি। আজও হয়তো সেই ধু ধু মরুভূমির বালুতে কান পাতলে অস্ফুটে শোনা যাবে তাদের চাপা দীর্ঘশ্বাস, ভালো করে খুঁজলে আজও হয়তো বালুতে দেখা যাবে শুকিয়ে যাওয়া ক’ফোঁটা অশ্রুবিন্দু। আর্ত হাহাকারে তারা শোনাতে চাইবে না-বলা সেই করুণ কাহিনী। অথচ কী সহজেই না সমস্যাটার সমাধান হতে পারত!
কেন, সুরা নিসার ২৩ নম্বর আয়াতেই (৪:২৩) দুই বোনের এক স্বামীর সাথে বিয়ে হওয়া বাতিল করা হয়নি? বলা হয়েছে, যেন দুই আপন বোন একই লোককে বিয়ে না করে। এবং পরক্ষণেই বলা হয়েছে: ‘কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে।’’ অর্থাৎ এ পর্যন্ত যাদের সে-রকম বিয়ে হয়েছে, তারা সতীন হয়ে থাকতে পারবে, কিন্তু এর পর থেকে আর ও রকম বিয়ে চলবে না।
এক নতুন বউ ঘরে আনলে অন্য কোনো স্ত্রী তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে পারবে না। স্বামীর এই অধিকার কোনো স্ত্রীই খর্ব করতে পারবে না। এমনকি কোনো স্ত্রী যদি চায় যে, স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিক যদি সে অন্য স্ত্রীকে ঘরে আনে—সেটাও আল্লাহ্র নির্দেশের বিরুদ্ধে যাবে। এখানে স্বামীর স্ত্রীদেরকে পরস্পরের বোন বলা হয়েছে!
দেখা যাক, সহি বুখারিতে কী বলা হয়েছে ইসলামী বহুগামিতা সম্পর্কে।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ৭: সাঈদ বিন জুবায়ের হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: ইবন আব্বাস আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি বিবাহিত?” আমি উত্তর দিলাম, “না।” তিনি বললেন, “বিয়ে করে নাও, কারণ এই উম্মার সবচাইতে উত্তম ব্যক্তির [অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা)] সর্বাধিক স্ত্রী ছিল।” (সূত্র ২)
উপরের হাদিসে নবী (স) যে-উদাহরণ রেখে গেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
আরও দেখুন:
সুনান দাউদ; খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২১৭১: আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন কোনো স্ত্রী তার বোনকে (অর্থাৎ অন্য স্ত্রীকে) প্ররোচিত করতে পারবে না যে, স্বামী তাকে (বোনকে) তালাক দেয় যাতে করে স্বামী তার শূন্যস্থানে অন্য নারীকে বিবাহ করে নেয়। তার (বর্তমান স্ত্রীর) জন্য যা নির্ধারিত হয়েছে, তাই হবে। (সূত্র ১৯)
স্বামী যে অল্পদিনের মেহমান, কোনো স্ত্রীর উচিত হবে না বহুগামিতার জন্য স্বামীকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করা। দেখা যাক এই হাদিস।
বাংলা সুনান ইবন মাজাহ্, খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২০১৪:
আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবন যাহ্হাক (র)…মুআয ইবন জাবাল (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: যখন কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকে: ‘ওহে আল্লাহ্ তোমার সর্বনাশ করুন। ওকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার কাছে অল্পদিনের মেহ্মান। অতি সত্বর সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।” (সূত্র ২৫)
না, চারের বেশি বউদের বেলায় তা বলা হয়নি, করা হয়নি। তালাক হয়ে গেছে, তারা কেউ জানে না, নীরবে নিঃশব্দে কতটা কেঁদেছে বিচারের বাণী। হায়রে মানবতার ধর্ম, সাম্যের ধর্ম!
এর পরেও আছে। পরিবারিক মূল্যবোধের ওপর প্রচণ্ড বক্তৃতার পরে স্বামীর অবাধ অফুরন্ত যৌবনের ব্যবস্থা আছে। শুধু একই কুয়োর বাঁধা পানিতে সারাজীবন নাইতে কি ভালো লাগে কারো? পুরুষের খাসলতটাই যে তা নয়। মেয়েমানুষের শরীর যে তার চাই-ই চাই। সে জন্য সে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল মন্থন করবে, হাজারটা আইন বানাবে, হাজারটা আইন ভাঙবে, দরকার হলে ধর্মগ্রন্থের ওপরে পা রেখে দাঁড়াবে। আর তার অনেকটাই সে করবে আল্লার নামেই। হিন্দুধর্মেরও একই অবস্থা ছিল। ইসলামে আল্লার বিধানে মুসলমানদের উত্তপ্ত বিছানার জন্য আছে অফুরন্ত ক্রীতদাসীর ব্যবস্থা, এ বইয়ের ‘ক্রীতদাস’ অধ্যায়ে (ইসলামে যৌনতা পর্বে) দেখুন। শুধু তা-ই নয়, সেই সাথে আরও আছে অগণিত যুদ্ধবন্দিনীর ব্যবস্থা। একের পর এক যুদ্ধ জয় করে পরাজিতদের শত-লক্ষ নারীদের নিয়ে তারা কী নৃশংস অপকর্ম করেছে, ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সেই সব লক্ষ হতভাগিনীর মর্মান্তিক অভিশাপে চির-কলংকিত হয়ে আছে ইসলামের ইতিহাস। অস্বীকার করতে পারবেন কোনো মওলানা?
এর পরেও আমাদের শুনতে হয় ইসলাম মানবতার ধর্ম। পরিহাস আর কাকে বলে!
কখনো ভেবেছেন, মওলানারা চিরকাল জন্মনিয়ন্ত্রনের বিরোধী কেন? একেই তো আমাদের গরীব দেশ, মানুষে মানুষে সয়লাব। আফ্রিকার মুসলমান দেশগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। অন্ন-বস্ত্র-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-চিকিৎসা সবকিছুরই এত টানাটানি। সম্পদের তুলনায় মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে, কিছুদিন পরে মানুষে মানুষ খাবে। কিন্তু তবু জন্মনিয়ন্ত্রন শব্দটা শুনলেই মওলানাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। আল্লাই নাকি মানুষকে খাওয়াবেন। অথচ আমরা ইতিহাসে দেখেছি, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে কোটি কোটি লোক স্রেফ না খেয়ে মরে গেছে। সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমাদের বাংলার বেয়াল্লিশ-তেতাল্লিশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা মনে নেই? আর সেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তর? পর পর আট বছর বৃষ্টি হয়নি বাংলায়, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মোট তিন কোটি লোকের এক-তৃতীয়াংশ, এক কোটি লোক মরে গিয়েছিল খেতে না পেয়ে।
অতি সম্প্রতি চারদিক দেখে-শুনে যদিও তাঁরা এ ব্যাপারে তর্জন-গর্জন করাটা বাধ্য হয়েই বাদ দিয়েছেন, কিন্তু চিরটা কাল এটা ছিল তাঁদের একটা কৌশল। কিসের কৌশল? আমরা যারা পশ্চিম দেশগুলোতে থাকি, তারা এটা ভালই জানি। এসব দেশের সরকারগুলোর দয়া-দাক্ষিণ্যে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ‘ছুটির দিনের ইসলামী স্কুল আর মাদ্রাসা’। সেগুলোতে বাচ্চাগুলোর মাথায় এই আসল মতবলবটা একটু একটু করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। বিশ্বাস হচ্ছে না? পড়ে দেখুন যে কোনো জায়গার খবরের কাগজগুলো, টরন্টো স্টার-এর ২রা ডিসেম্বর, ২০০১ এর সংখ্যা। এই মতলবটা হল দুনিয়া জুড়ে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করা। তা করতে হলে দুনিয়া জুড়ে অন্য সবাইকে সমূলে উচ্ছেদ করে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া উপায় নেই।
কীভাবে সেটা সম্ভব?
হাতে প্রচুর অ্যাটম বোমা থাকলে কাজটা সহজ হত। কিন্তু সেটা যখন ‘শত্রুর’ হাতেই বেশি, তখন ভোটাভুটি-ই হল একমাত্র পথ। আর ভোট মানেই হল জনসংখ্যা। মিলছে এবার হিসেবটা? আসলে এটাই হল জামাত-এ ইসলামী ধরনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য। বুকে হাত দিয়ে বলুক কোনো মওলানা, আমার কথাটা ভুল।
বিবাহের জন্যে বেছে নিন সর্বোৎকৃষ্ট মাল—ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী
জনসংখ্যার চাপে মানুষ মরে যাক না খেয়ে, তবু শরিয়া প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রন বে-ইসলামী, তাই জনসংখ্যা বাড়াতেই হবে। কথাটা কি আমার? মোটেই নয়, কথাটা সহি হাদিসের।
দেখুন।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১ হাদিস নম্বর ২০৪৫:
মাকিল ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবীকে (সা) বলল “একটা উচ্চবংশের সুন্দরী মেয়ে আছে, কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিয়ে করতে পারি?” নবী (সা) বললেন,”না।” সে তাঁর কাছে আবার এল। নবী (সা) আবার তাকে নিষেধ করলেন। সে তৃতীয়বার তাঁর কাছে এলে নবী (সা) বললেন: “সেই মেয়েদের বিয়ে কর, যারা প্রেমময়ী এবং উৎপাদনশীল। কারণ আমি তোমাদের দিয়ে সংখ্যায় অন্যদের পরাস্ত করব”। (সূত্র ৪)
এটাই হল আসল ব্যাপার। সবাই মিলে-মিশে শান্তিতে থাকার কথাটা ইসলামের শুধু মুখ-মিষ্টি বুলি, আসলে যত দিক দিয়ে সম্ভব অন্যদের “পরাস্ত” করাটাই দুনিয়াভর বহু মওলানাদের মাথায় সর্বদাই নড়চড়া করছে।
আরও দেখুন।
এহিয়া উলুম আল দীন; খণ্ড ১, পৃ ২২৮:
নবী (সা) বলেছেন, উর্বর এবং বাধ্য মেয়েদের বিয়ে কর। যদি সে অবিবাহিতা হয় এবং অনান্য অবস্থা জানা না থাকে, তবে তার স্বাস্থ্য এবং যৌবন খেয়াল করবে, যাতে সে উর্বর হয়। (সূত্র ৭)
ইসলামে ‘নারী’ কথাটার মানে কি? উপরের হাদিসগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে, তারা হচ্ছে বাচ্চা বানানোর যন্ত্র বা মাল মাত্র। সম্মান, অধিকার, মর্যাদা সমস্ত কিছুই ওই একটা না-বলা কথায় বন্দী।
এটাই স্পষ্ট হয়েছে ইমাম গাজ্জালীর বইতে, এহিয়া উলুম আল দীন, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৬- ২২৮-এ। দেখুন, কাকে বিয়ে করতে হবে, সে-ব্যাপারে কী রকম উদ্ভট পরামর্শ দেয়া আছে:
তাকে অসুন্দরী হলে চলবে না, হতে হবে সুন্দরী। তার স্বভাবটাও হতে হবে সুন্দর। এবং আরও: নবী বলেছেন: সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তাকালে স্বামী তৃপ্ত হয়, স্বামীর যে বাধ্য, এবং স্বামীর অবর্তমানে যে নিজের এবং তার সম্পদ রক্ষা করে। যে সব মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না, তারা হল, বিবাহিতা, ধর্মত্যাগিনী, নাস্তিক, নারীবাদী, স্বাধীনচেতা, অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক, অশ্লীল যৌনাচারে অভিযুক্তা, তা সে প্রমাণিত হোক বা না-ই হোক, এবং এ ছাড়া কোরানে যাদের নিষেধ করা হয়েছে আত্মীয়তার কারণে।
আরও শুনবেন?
ওই একই পৃষ্ঠায়:
নবী বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হল সে-ই, যার চেহারা সুন্দর আর বিয়েতে স্ত্রীধন কম। অর্থাৎ যে কিনা দামে সস্তা।
আরও শুনুন:
নবী বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তাকালে স্বামী তৃপ্ত হয়, স্বামীর যে বাধ্য, এবং স্বামীর অবর্তমানে যে নিজের এবং তার সম্পদ রক্ষা করে।
বটেই তো, বটেই তো! সুন্দর মুখের তো জয় সর্বকালে সর্বত্র, এমনকি ইসলামেও। আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, মওলানা ইমামেরা কি একবারও ভেবে দেখেননি যে, সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে এভাবে কথা বললে অসুন্দরীদের অপমান করা হয়? অসুন্দর কিংবা কম সুন্দর মেয়েদের বানালো কে? চেহারার সৌন্দর্য কি এতই গুরুত্বপুর্ণ?
অসুন্দরী হওয়া কি ইসলামে পাপ? এসব কথা ধর্মের বইতে কেন, সেটাও প্রশ্ন। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হল: দুনিয়ার সব পুরুষ কি উত্তমকুমার (ভারতীয় বাঙালি ভীষণ জনপ্রিয় চিত্রতারকা, এখন প্রয়াত) আর দেবানন্দ (এক কালে হিন্দু ছায়াছবির মহানায়ক)? তাহলে অসুন্দর পুরুষদের কী হবে?
সেটাও বলেছেন ইমাম গাজ্জালী, একই বইতে, পৃষ্ঠা ২৩৫:
আমি তাকে (এক মেয়েকে) জিজ্ঞাসা করলাম, এমন একটা লোককে (অসুন্দর লোককে) তুমি বিয়ে করলে কেন? সে বলল: ‘চুপ কর, বাজে কথা বলো না! স্রষ্টার কাছে সে হয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই তার জন্য আমি হয়ত স্রষ্টার পুরস্কার। আর আমি হয়ত স্রষ্টার কাছে সর্বনিকৃষ্ট, তাই সে আমার জন্য স্রষ্টার শাস্তি।’
দেখুন, মেয়েদের কী রকম মাথা খাওয়া হয়েছে? এরই নাম ইসলামী ইমান! এখনও অনেক মেয়ে আছেন, যাঁরা ইসলামে মেয়েদের অত্যাচারের সাংঘাতিক সমর্থক। ওটাই নাকি তাঁদের জন্য ভালো।
আশ্চর্য! আরও শুনবেন?
ঐ বই। খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২২৯:
জাবের যখন এক পূর্ব-বিবাহিতাকে বিয়ে করল, তখন নবী (সা) বললেন: “কোনো কুমারীকে বিয়ে করলে আরও ভালো হত, কারণ তাহলে তোমরা পরস্পরের সাথে আরও উপভোগ করতে পারতে।”
ওটাই কথা, উপভোগই হল ইসলামে নারীর সর্বপ্রধান পরিচয়। বিদ্যাসাগর মশাই এত যে চেষ্টা-চরিত্র করে বিধবা-বিয়ের আইন চালু করলেন, বিধবা হতভাগিনীগুলো তাদের ছিনিয়ে নেয়া মানবাধিকার ফিরে পেল, এই ইসলামী কথা শুনলে তিনি কী ভির্মিই না খাবেন!
ইসলামে নারীরা যে মালামাল ছাড়া আর কিছু নয়, তার আরও উদাহরণ নিম্নের হাদিসে দেখুন। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, এক স্বামী যার দুই স্ত্রী বা মাল ছিল, সে তার অতিথিকে তার এক স্ত্রীকে দান‑খয়রাত করতে কোন কুণ্ঠা করছে না।
বাংলা বুখারি শরীফ; খণ্ড ৪, হাদিস নম্বর ১৯২০:
আবদুল আযীয ইব্ন আবদুল্লাহ্ (র.)…আবদুর রাহমান ইব্ন আওফ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসি, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আমার এবং সা’দ ইব্ন রাবী’ (রা.) এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন। পরে সা’দ ইবন রাবী’ বললেন, আমি আনসারদের মাঝে অধিক ধন‑সম্পত্তির অধিকারী। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে ভাগ করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বল, আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব। যখন সে (ইদ্দত পূর্ণ করবে) তখন তুমি তাকে বিবাহ করে নেবে। আবদুর রাহমান (রা.) বললেন, এ সবে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা‑বাণিজ্য করার মত কোনো বাজার আছে কি? তিনি বললেন, বানু কায়নুকার বাজার আছে। পরের দিন আবদুর রাহমান (রা.) সে বাজারে গিয়ে পনীর ও ঘি (খরিদ করে) নিয়ে এলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া‑আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আবদুর রাহমান (রা.)‑এর কাপড়ে বিয়ের মেহেদি দেখা গেল। এতে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে? তিনি বললেন, জনৈকা আনসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? আবদুর রাহমান (রা.) বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম (সা.) তাঁকে বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর। (সূত্র ১৭)