খোকসার পুজার একটা ভিডিও ফুটেজ
কবি জুয়েল খান :-২
আমাদের গড়াই নদী সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে
সে যেন অজানা দেশে পার হয় লোক জন পার হয় গাড়ি লাল সবুজ
নীল পালের ছালা তুলে তৈরি পাড়ি জমায় আপন নীড়ে…!!
কাঁশ ফুলে ছেয়ে আছে নদীর বামে,গড়াই শুকিয়ে যখন চর পরে যায় ,
বালুর কনা গুলি চিক চিক করে আর রোদে ঝলকায়,থেকে থেকে বকের ঝাক উড়ে উড়ে যায় ,
তাদের কষ্টে গড়া নিজের বাসায়,আমাদের গড়াই নদীর সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে
গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে সে যেন অজানা দেশে ।
নদীর ধারে পাগলা স্রোত প্রেম খেলে যায় প্রতি সকাল সাঝে
হাঁসের ঝাক সেথায় সাঁতরে বেড়ায় সূর্য ডুবার আগে আওলা বাতাস পাগলা হয়ে
সকাল সাঝে ভাসে রাতের বেলায় রুপালী চাঁদ মিটি মিটি হাসে …!!
সূর্য উঠে সকাল হলেই পাখির কলরবে আমাদের গড়াই নদী সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে ,
গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে সে জেন অজানা দেশে,সোনালী রোদ গায়ে মেখে
স্রতে স্রতে গড়িয়ে চলেছে সে যেন অজানা দেশে পাড় হয় লোক জন জেলে ধরে মাছ ।
গড়াই নদির ধারে হাজার পাখির কিচি মিচি রব
নদির খরতা স্রতে পালতুলে যায় মাঝিমাল্লারা ভাটিয়ালি গানের সুরে
আওলা বাতাস পাগলা ঢেও খেলে যায় সকাল বিকাল সাঝে ,
বসন্ত কালে অনেক ফুল ফোটে শাখে অনেক রং বে রংঙ্গের ফুল
রাখালীয়া বাশির সুর, সবুজ বনের ঝাক,গড়াইয়ের ধারে কাশ ফুলের সাদা বনে শিয়াল মামার হাক ।
পাখির গানের মধুর টানে মন যেন আজ ছুটে ছুটে যায়
কোন এক অজানা নেশায় দিন রাত ভেবে দিশে না পায়
প্রকৃতির সাথে প্রেমের নেশায় সবুজ ঘাসে হরেক ফুলে ,
আকাশের ওই সাদা মেঘে মন টা আজ নেচে নেচে যায়
মাঠ ঘাট আর বন পেরিয়ে প্রজাপতি আর ফরিং বেশে
মন টা যেন আজ উড়ে যেতে চায় কবির তোফাজ্জের ছোট ঐ গাঁয়ের গড়াই নদীর ছায়
সন্ধা হলেই রুপালি চাঁদ মিটি মিটি করে ফোকলা দাঁতে হাসে
চাঁদের জোছনায় পান কৈরির ঝাক গড়াইয়ের ধারে কানা মাছি খেলে
বাতাবি লেবুর বনে জোনাকির দল সন্ধা নামলে মিটি মিটি জ্বলে ,
সকাল হলে বকের ঝাক দল বেধে যায় সাদা মেঘের কোনে
নৌকার দার টেনে মাঝিরা দুর দেশেতে গুন গুনিয়ে ছুটে চলে
বিষ্টিতে টাপুর টুপুরে পালতুলে দিয়ে নায়ে ।
বাবুই পাখির ঝাক গড়াই নদীর বাকে বটের গাঁয়ে তাল গাছের ডালে বেঁধেছে তারা বাসা
অপরুপ কি দৃশ্য সে যেন ধূলায় লুটিয়ে আছে গড়াই নদীর বাকে
দু- ধারে তার কৃষি জমি ফসলে ভড়া মাঠ, সকাল হলেই গায়ের বধু কলশি কাখে হাটে
জল আনিতে চলে গড়াই নদীর ঘাটে,রূপ সন্দর্য যেন মায়া ভড়া তার বাংলা মায়ের বুকে
সন্ধ্য নামিলে দুর ঘন বনে শিয়াল হাকিছে বসে ঝিড়ি ঝিড়ি শিতল বাতাসে বহে …!!
রাতের বেলা রুপালী মাছ থেকে,থেকে ভাসে,জেলে ভাইয়েরা জারি গানের সুরে নদীতে জাল ফেলে
বাহারি রং বে রংঙ্গের ছিপ হাতে গায়ের ছেলেরা সকাল বেলায় মাছ ধরে নদীর ঘাটে
সবি ছিল এখন আর নেই বাকি আর নেই বাকি কোন কিছু
দুশন পানি
গড়াই নদী কেদে ভাসায় নদী বুক, যুরাইয়া দিয়াছ ছোট বেলাই আমাদের দেহ খানি ।
হাঁটতে শিখেছি তোমারি আঙ্গিনাতে দেখেছি কত রুপে সাজতে তোমাকে
যৌবন এসেছে কত জোয়ারে জোয়ারে কতো যে মাছ জেলেরা ধরেছে দু-হাত ভড়ে
তাদের মুখে দু-মুঠো অণ্য নিয়েছে তুলে সবি গিয়াছে এখন
আর নেই বাকী কিছু রুপ যৌবণ সব ফেলে দিয়ে পিছু ।।
পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় গড়াইয়ের দুই ধারে বর্তমানে ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। নদে বাঁধ দেওয়ার ফলে দুই পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও স্থাপনা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দখল ও দূষণ। ফলে একসময়ের খরস্রোতা গড়াই নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। এক নদে এত দখলের ফলে মরা লাশে পরিণত হয়েছে গড়াই নদী । কিন্তু এখন চর পরে বাঁধ হবার কারণে গড়াই নদীর কোথাও সামান্য জলাধার, কোথাও কিছু জলাবদ্ধতা, কচুরিপানার জঞ্জালের চিহ্ন নিয়ে টিকে রয়েছে। কোথাও গড়ে উঠছে দোকান পাট পাকা বাড়ি। গড়াই নদীর উৎপত্তি গঙ্গা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রধান শাখা। একই নদী উজানে গড়াই এবং ভাটিতে মধুমতি নামে পরিচিত। একসময় গড়াই-মধুমতি নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। কুষ্টিয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতু-এর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী গঙ্গা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি কুষ্টিয়া জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গণেশপুর নামক স্থানে ঝিনাইদহ জেলায় প্রবেশ করেছে। অতঃপর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে চাঁদর নামক গ্রাম দিয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ঝিনাইদহ-রাজবাড়ী, মাগুরা-রাজবাড়ী এবং মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মধুমতি পরবর্তী সময়ে পিরোজপুর জেলার মধ্য দিয়ে বলেশ্বর নামে প্রবাহিত হয়েছে এবং মোহনার কাছাকাছি হরিণঘাটা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগর-এ পড়েছে।
গড়াই অত্যন্ত প্রাচীন একটি নদী। অতীতে এর নাম ছিল গৌরী। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ভূগোলবিদ টলেমি তদানীন্তন গঙ্গা প্রবাহের সাগর সঙ্গমে পাঁচটি মুখের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ‘কম্বরী খান’ নামক মুখটিই প্রকৃতপক্ষে গড়াই বলে কেউ কেউ মনে করেন। গড়াই-মধুমতি নদীর গতিপথ দীর্ঘ এবং বিস্তৃত। অধিকাংশ গতিপথেই নদীটি এঁকে বেঁকে প্রবাহিত। উৎপত্তিস্থল থেকে কামারখালী পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও অন্যান্য ছোট নৌযান চলাচল করতে পারে, কিন্তু শুকনো মৌসুমে এ অংশ অনাব্য হয়ে পড়ে। কামারখালী থেকে নিম্নাংশ মোটামুটি নাব্য, প্রায় সারা বছর এখানে নৌপরিবহণ সম্ভব হয়। কামারখালীতে পানির প্রবাহ সর্বোচ্চ ৭,৯৩২ ঘন মিটার, তবে উৎসমুখ শুকিয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো সময় প্রবাহ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। উৎসমুখ থেকে বড়দিয়া পর্যন্ত গড় প্রস্থ ৪৫০ মিটার। এর পর নদীটির বিস্তার ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং নিম্নাঞ্চলে গড়ে ৩ কিমি। নদীটির মোহনা থেকে কামারখালী পর্যন্ত অংশ জোয়ারভাটা দ্বারা প্রভাবিত। কুষ্টিয়া শহরের সন্নিকটে গড়াইয়ের মুখ শীতকালে বন্ধ: হয়ে যায়।
গড়াই নদী ভাঙন প্রবণ। এর প্রবল ভাঙনের ফলে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত রেন-উইক কারখানা, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অফিস এবং কুষ্টিয়া শহরের বাণিজ্যিক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কুমারখালী বন্দর এবং জানিপুর বাজারও নদীভাঙন-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু গ্রোয়েন তৈরি করে উল্লিখিত শহর-বন্দরগুলি রক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
চলার পথে গড়াই-মধুমতি বহু শাখা-প্রশাখার জন্ম দিয়েছে এবং অন্যান্য অনেক নদীর সংস্পর্শে এসেছে। কুমার, কালীগঙ্গা, ডাকুয়া, বুড়ি গড়াই প্রভৃতি গড়াইয়ের শাখা নদী। চন্দনা গড়াই-এর উপনদী। নবগঙ্গা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, খুলনা-যমুনা, গলঘাসিয়া, এলেংখালী, আঠারোবাঁকী প্রভৃতি নদী কোনো না কোনো ভাবে গড়াই-মধুমতি নদীর সংস্পর্শে এসেছে।
গড়াই-মধুমতি বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী। এর অববাহিকাও বিস্তীর্ণ। নদীটি কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এইসব এলাকার সেচ ও কৃষির উন্নতি এ নদীর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। কুমারখালি, জানিপুর, সেঁউরিয়া, গণেশপুর, কাতলাগাড়ী, খুলুমবাড়ী, লাংগলবন্দ, শচিলাপুর, নাকোল, লোহাগড়া, পাংশা, বালিয়াকান্দি, বোয়ালমারী, কাশিয়ানী, ভাটিয়াপাড়া, নাজিরপুর, পিরোজপুর, শরণখোলা, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা এবং মোরেলগঞ্জ প্রভৃতি গড়াই-মধুমতি নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থান। [মাসুদ হাসান চৌধুরী]ঐতিহ্যবাহী গড়াই নদী
ঐতিহ্যবাহী গড়াই নদী গড়াই নদী গঙ্গা তথা পদ্মার একটি প্রধান শাখানদী হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী।গড়াই নদীটি কুষ্টিয়া জেলার হাটশহরিপুর ইউনিয়নে প্রবহমান পদ্মা নদী হতে উৎপত্তি লাভ করে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদীতে পতিত হয়েছেকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছেন গড়াই-পদ্মা নদীর গোড়াই নদীর চর নূতন ধানের আঁচল জড়ায়ে ভাসিছে জলের পর একখানা যেন সবুজ স্বপন একখানা যেন মেঘ আকাশ হইতে ধরায় নামিয়া ভুলিয়াছে গতিবেগ … … … … দুপুরের রোদে আগুন জ্বালিয়া খেলায় নদীর চর দমকা বাতাসে বালুর ধূম্র উড়িছে নিরন্তর রাতের বেলায় আঁধারের কোলে ঘুমায় নদীর চর জোনাকি মেয়েরা স্বপনের দীপ দোলায় বুকের পরতীরে । তার লেখায় বহুবার এ নদী দুটির প্রসঙ্গ এসেছে।কিভাবে যাওয়া যায়:মাগুরা ঢাকার রোড় বাসস্ট্যাণ্ড থেকে অটোরিক্সা, বাস যোগে( ২৫) টাকা ভাড়া প্রদান করে ওয়াপদা মোড় নামতে হবে । ওয়াপদা মোড় থেকে ভ্যান অথবা অটোরিক্সা যোগে (৫) টাকা ভাড়া প্রদান করে গড়াই সেতুতে যেতে হবে । খোকসা বাস স্ট্যান্ড নেমেও গড়াই নদীতে যাওয়া য়ায়। রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক যুয়ান চুয়াং বাংলাদেশ ভ্রমণ করে যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তা থেকে জানা যায় যে তত্কালীন বঙ্গরাজ্য, কামরূপ, পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপি—পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল। কুষ্টিয়া অঞ্চল সপ্তম শতাব্দীতে শশাঙ্কের রাজ্যভুক্ত ছিল বলে অনুমিত হয়। শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের সীমান্ত থেকে কয়েক মাইল দূরে মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ছিল। কোনো রাজা রাজ্যের সীমান্তে রাজধানী স্থাপন করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমতট রাজ্যটি যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চল দিয়ে গঠিত ছিল। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় আবিষ্কৃত শিলালিপি থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে দক্ষিণবঙ্গে মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদের নামে তিনজন রাজার রাজত্ব করার কথা জানা যায়যে বিবরণ দিয়ে গেছেন তা থেকে জানা যায় যে তত্কালীন বঙ্গরাজ্য, কামরূপ, পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপি—পাঁচ ভাগে বিভক্ত ছিল। কুষ্টিয়া অঞ্চল সপ্তম শতাব্দীতে শশাঙ্কের রাজ্যভুক্ত ছিল বলে অনুমিত হয়। শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের সীমান্ত থেকে কয়েক মাইল দূরে মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত ছিল। কোনো রাজা রাজ্যের সীমান্তে রাজধানী স্থাপন করেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমতট রাজ্যটি যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চল দিয়ে গঠিত ছিল। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় আবিষ্কৃত শিলালিপি থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে দক্ষিণবঙ্গে মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য ও নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদের নামে তিনজন রাজার রাজত্ব করার কথা জানা যায়। ধর্মাদিত্যের একটি তাম্রশাসনে জানা যায়, তার রাজত্বকালে গৌড়ের অংশবিশেষের রাজা ছিলেন স্থানদত্ত। এ ‘গৌড়ের অংশবিশেষ’ স্থান কুষ্টিয়া অঞ্চল ছিল বলে মনে করা হয়। অষ্টম শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পালবংশের রাজত্ব ছিল। পাল রাজত্বের অবসানকাল (দশম শতাব্দীর শেষাংশ) পর্যন্ত এ অঞ্চল পাল রাজ্যভুক্ত ছিল বলেই অনুমিত। দশম শতাব্দীর শেষে ও একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে রাজত্বের অবসান পর্বে কয়েকজন সামন্তরাজ কর্তৃক কুষ্টিয়া অঞ্চল কিছুকালের জন্য বিক্রমপুর-হরিকেলে স্থাপিত চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। কুমার নদ কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছিল। কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিত্যাগ করলেই তার নাম হয়েছিল মধুমতি। সুতরাং কুষ্টিয়া অঞ্চল বাংলায় সেন রাজত্ব প্রতিষ্ঠার আগে বিক্রমপুর-হরিকেলের চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হওয়ার বিষয়টি সমর্থনযোগ্য।ছিলেন বিদ্রোহী এ মোগল সেনাপতি মাসুম খান কাবুলি। তিনি ঈশা খাঁ, উসমান ইত্যাদি বারভূঁঞার সঙ্গে মিলিত হন। তিনি নিজেকে স্বাধীন বাদশাহ বলে ফরমানে উল্লেখ করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মির্জা মুনীম ফতেহাবাদের (বর্তমানে ফরিদপুর) জমিদার মজলিশ কুতুবেরর সঙ্গে মিলিত হয়ে আবারো মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। অবশেষে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমে মোগল সেনাপতি শেষ হাবিবুল্লা, মির্জা মুনীম ও মজলিশ কুতুবকে পরাজিত করে কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। মোগল আমলে মূল কুষ্টিয়া ছিল সরকার ফতেহাবাদ ও সরকার ভূষণার (যশোহর) অন্তর্ভুক্ত এবং পরগনা ফতেহাবাদ (ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী অঞ্চল) বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। পরগনা ফতেহাবাদে মোগল-পাঠান সংঘর্ষের সময় কুষ্টিয়ার বাগোয়ান পরগনা সম্পূর্ণ মোগল অধিকারভুক্ত ছিল। মোগল নৌবহরে অধ্যক্ষ মীর্জা নাথানের ‘বাহিরিস্তান-ই-গায়েবী’ গ্রন্থে জানা যায় যে বাংলার বারভূঁঞাদের অন্যতম যশোরাধিপতি রাজা প্রতাপাদিত্য রায় গড়াই নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ২৪ পরগনা অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলেন। কুষ্টিয়ার মাহাদপুর-বাগোয়ান অঞ্চলে দ্রুত শাসক বদল থেকে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক গুরুত্ব প্রমাণ হয়। কুষ্টিয়া অঞ্চলে মোগল নৌবাহিনীর ঘাঁটি থাকায় এ অঞ্চলের নদ-নদীর অবস্থা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। রাজা প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে দিল্লির সম্রাটের অধীনে রাজা মান সিংহ পরিচালিত মোগলদের লড়াই পরিচালিত হয়েছে বাগোয়ান মাহাদপুর মোগল নৌঘাঁটি থেকেই, যে যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজিত হন। এ অঞ্চলের সামন্ত শাসকরা মোগল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করায় মোগল বাহিনী তাদের বিভিন্ন সময় দমন করে।হিসেবে শাসিত হয়েছে। ১৮৬৩ সালে পাবনা থেকে কুষ্টিয়া মহকুমা এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালী মহকুমা নদীয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮২৭ সালে খোকসা থানা যশোর থেকে পাবনার সঙ্গে এবং ১৮৭১ সালে তা নদীয়া জেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়।
কুষ্টিয়া শহরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮২০ সালে প্রকাশিত হ্যামিলটনের ইস্ট ইন্ডিয়া গেজেটিয়ারে। এ সময় পদ্মা নদী কুষ্টিয়ার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হতো। আদি কুষ্টিয়া বর্তমান শহরের থেকে তিন মাইল উত্তরে অবস্থিত ছিল। ওই স্থান বর্তমানে পুরাতন কুষ্টিয়া নামে পরিচিত। নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হলে মজমপুর ও বাহাদুরখালী মৌজা নিয়ে পাট বিক্রির আদি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে কুষ্টিয়া শহর গড়ে ওঠে। নীলকরদের ওপর নজর রাখার উদ্দেশ্যে ১৮৬০ সালে কুষ্টিয়া মহকুমা স্থাপিত হয়। বাংলার তদানীন্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জন পিটার গ্রান্ট নীল বিদ্রোহজনিত কারণে ১৮৬০ সালে কলকাতা থেকে সোনামুখী জাহাজ যোগে কুষ্টিয়ার কুমার নদপথে জেলা সদর পাবনা গমন করেন এবং পাবনার নীলচাষী সমাবেশে তিনি কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রজাদের পাবনা গমনে অসুবিধা দূর করার জন্য কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। তার আগে কুষ্টিয়া ছিল একটি থানা এবং তা মজমপুর গ্রামে অবস্থিত ছিল। উল্লেখ্য, ১৮২৮ সালে পাবনা জেলা প্রতিষ্ঠার সময় কুষ্টিয়া থানা পাবনার অন্তর্ভুক্ত হয়। পাবনা জেলা গঠিত হওয়ার আগে মেহেরপুরের কিছু অংশ বাদে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার অধিকাংশ অঞ্চল রাজশাহী জমিদারি এলাকা ছিল। ১৮৫৭ সালে ফরিদপুর জেলার পাংশা ও বালিয়াকান্দি থানা এবং পাবনা জেলার খোকসা ও কুমারখালী নিয়ে কুমারখালী মহকুমা প্রতিষ্ঠা করে পাবনা জেলাভুক্ত করা হয়। কুমারখালী মহকুমার প্রথম মুন্সেফ নিযুক্ত হন ঈষাণ চন্দ্র দত্ত। ১৮৬২ সালে কুষ্টিয়া মহকুমার কাজ আরম্ভ হলেও কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়া জেলাভুক্ত হয় ১৮৬৩ সালে। ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কুষ্টিয়ার পৌরসভা।দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া পৌরসভা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আনোয়ার আলী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি ক্ষমতাশালী আওয়ামী লীগ। ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা কুষ্টিয়া মহকুমাভুক্ত করে নদীয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পাংশা ও বালিয়াকান্দি থানা ১৮৭১ সালেই ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। নদীয়া জেলার সদর ছিল কৃষ্ণনগরে। কুষ্টিয়া অঞ্চলের সাধারণ লোক কৃষ্ণনগরকে গোয়ারী বলত। কুষ্টিয়া মহকুমায় থানা ছিল যথাক্রমে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভালুকা, ভাদালিয়া, নওপাড়া ও দৌলতপুর। ভেড়ামারা থানা পরে স্থাপিত হয়। পরবর্তী সময়ে কুষ্টিয়া, কুমারখালী, ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা গঠিত হয়। কুমারখালীতে থানা প্রতিষ্ঠার আগে ভালুকায় থানা ছিল। ভালুকা থানা কুমারখালী থানার অন্তর্ভুক্ত। পোড়াদহে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনা চৌকি ছিল। ভাদালিয়াতেও নবাবি আমলে চৌকি ছিল। ১৮৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। কেউ কেউ অনুমান করেন, মেহেরপুর মহকুমা ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগে চুয়াডাঙ্গার সদর ছিল দামুড়হুদায়। পদ্মা নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে ১৮৭১ সালে এ মহকুমাকে নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৬২ সালে শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেললাইন খোলা হলে মহকুমার সদর অফিস চুয়াডাঙ্গায় স্থানান্তরিত হয়। বিখ্যাত ভারতহিতৈষী সিভিলিয়ান স্যার হেনরি কটন ১৮৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার মহকুমা হাকিম ছিলেন। তারই উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত সড়ক নির্মিত হয়। ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়া জুবিলি উপলক্ষে ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া হাইস্কুলে একাডেমিক ভবন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ হাইস্কুল যুক্ত করা হয়। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে জনসাধারণ আপত্তি করলে ১৮৯৭ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা মহকুমা পুনরায় স্থাপন করা হয়। তখন অবিভক্ত নদীয়া জেলার মহকুমা হয় কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এবং আয়তন ২ হাজার ৮৪১ বর্গমাইল। তার মধ্যে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার আয়তন ১ হাজার ৩৭১ বর্গমাইল আর পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার আয়তন ১ হাজার ৪৭০ বর্গমাইল। পশ্চিম বাংলার সঙ্গে কুষ্টিয়া জেলার ১৩২ মাইল সীমান্ত রেখা রয়েছে। দেশ বিভাগের পর বহু হিন্দু কুষ্টিয়া ত্যাগ করে ভারত চলে যাওয়ায় এখানে শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য নানা অসুবিধা দেখা দিয়েছিল। তেমনি পশ্চিম বাংলা থেকে বহু মুসলমান পরিবার ও বিহারি সর্বস্ব হারিয়ে কুষ্টিয়ায় আসায় তাদের পুনর্বাসন ও জীবিকার ব্যবস্থা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।(১৯৪২-৪৭) বিশিষ্ট মুসলিম নেতা খান বাহাদুর সামসুজ্জোহা নদীয়া জেলা বোর্ডের কাছ থেকে দাবি জানিয়ে সম্পদ ভাগাভাগি করে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, তিনি ১৮৯৯ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মির্জাপুর (গোদাপাড়া) গ্রামে জন্মেছিলেন। নবগঠিত নদীয়া জেলার বর্তমান কুষ্টিয়ার প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন নাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনিই নবগঠিত জেলার নাম নদীয়া রাখেন, কিন্তু দেশ বিভাগের পরবর্তী একটি মহকুমার শহরকে জেলা শহরে রূপ দেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি অফিস-আদালত ও সরকারি কর্মচারীদের বাসস্থান সমস্যা মেটানোর জন্য বহু লোকের বসতবাড়ি জরবদখল নেয়া হয়। কুষ্টিয়া হাইস্কুল তুলে দিয়ে দীর্ঘকাল পুলিশ লাইন করে রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুর্তাজা আলী প্রশাসনিক কাজের অসুবিধা ও চিঠিপত্র আদান-প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় নদীয়া নাম পরিবর্তন করে ‘কুষ্টিয়া’ রাখেন। তত্কালীন এসডিও মৌলবি আব্দুল বারী বিশ্বাসকে প্রধান করে কুষ্টিয়ায় ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। অতঃপর আরো বেশকিছু সরকারি অফিস কুষ্টিয়ায় স্থাপনের পর শহরটিতে পুনরায় উন্নয়ন শুরু হয়।
তথ্যসূত্র
১. কুষ্টিয়ার ইতিহাস, শ ম শওকত আলী
২. নদীয়া কাহিনী, কুমুদিনী মল্লিক, (সম্পাদনা মোহিত রায়)
৩. ভারতকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড
৪. আবুল আহসান চৌধুরী, কুষ্টিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য
২. কুষ্টিয়ার ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ এমদাদ হাসনায়েন ও সারিয়া সুলতানা
খোকসা উপজেলা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।
১। অবস্থান ও আয়তনঃ
খোকসা উপজেলার উত্তরে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা, পূর্বে পাংশা উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলা এবং পশ্চিমে কুমারখালী উপজেলা।
২। নাম করণের ইতিহাসঃ
৩। নদ-নদীঃ
খোকসা উপজেলায় ৩টি নদী রয়েছে। নদী ৩টি হচ্ছে গড়াই নদী, ইছামতী নদী ও সিরাজপুর হাওর নদী।
৪। প্রশাসনিক এলাকাঃ
খোকসা উপজেলা :- চেয়ারম্যান মোঃ বাবুল আকতার ক্ষমতাশালী আওয়ামী লীগ.
খোকসা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে; এগুলো হলোঃ
পৌরসভাঃঃ খোকসা পৌরসভা একটি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম ক্ষমতাশালী আওয়ামী লীগ.
ইউনিয়নঃ আমবাড়ীয়া, ওসমানপুর, খোকসা, গোপগ্রাম, জয়ন্তীহাজরা, জানিপুর, বেতবাড়ীয়া, শিমুলিয়া এবং শোমসপুর।
৫। জনসংখ্যাঃ
জনসংখ্যা ১,৩৪,০১১ জন (প্রায়), পুরুষ ৬৯,৬৮৬ জন (প্রায়), মহিলা ৬৪,৩২৫ জন (প্রায়)।
৬। শিক্ষাঃ
১। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৭ টি,
২। জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ০৪ টি,
৩। সরকারি সহ উচ্চ বিদ্যালয়(সহশিক্ষা) ১৬ টি,
তার মধ্যে খোকসা-জানিপুর জানিপু সরকারি বহু মূখি উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিরান্ময় বিশ্বাস ।
৪। সরকারি সহ উচ্চ বিদ্যালয়(বালিকা) ০২ টি,
৫। দাখিল মাদ্রাসা ৫ টি,
৬। আলিম মাদ্রাসা ০২ টি,
৭। ফাজিল মাদ্রাসা ০১ টি,
৮। কামিল মাদ্রাসা ০০ টি,
৯। কলেজ(সহপাঠ) ০৪ টি,
১০। কলেজ(বালিকা) ০১ টি,
শিক্ষার হার ৫৬.৮৫ %।[৫]
৭। অর্থনীতিঃ
প্রধানত কৃষি অর্থনীতি ছাড়াও তাত শিল্প, মৃৎ শিল্প, বয়ন শিল্প, এবং ছোট ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
৮। যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
পাকা রাস্তা ১২৭.৪৭ কি.মি., অর্ধ পাকা রাস্তা ৭.৫২ কি.মি., কাঁচা রাস্তা ১৩৮.০২ কি.মি.।
৯। দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনাঃ
১। খোকসা কালী পূজা মন্দির, খোকসা।
২। ফুলবাড়িয়া পুরাতন মঠ, ফুলবাড়িয়া।
৩। আলাউদ্দিন শেখ এর বাঁশ বাগান, জয়ন্তী হাজরা।
৪। হেকি দেওয়ান ও বাগী দেওয়ান এর মাজার শরিফ, উথলী।
৫। বিঃ মির্জাপুর মাছের হ্যাচারী।
৬। হাওয়া ভবন খোকসা, ইছামতী নদী
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের আগে “
নদীয়া জেলায় কুষ্টিয়ার খোকসা শহরে বসে,
বন্ধু সাহিত্যিক বিশিষ্ট্য স্বজনদের নিয়ে
ভাবছিলেন মোদের দেশের নাম কি নাম করন দেবেন ।
কবি নজরুল বঙ্গবন্ধুকে ডাকিয়া কয় মুজিব
মোদের সোনালী মাখা ছয় ঝতুর দেশ রুপশি বাংলা
দিলে মুজিব লাগবে যেন ডের….!
লালন ফকির বলেন মুজিব দেশের নাম পদ্মা-মেযনা হলে চলে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন হেঁসে বঙ্গ দিলেই হবে ।
গুনি জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনসুর আলী বিশ্বাস শেখ মুজিবকে বলেন
অপুরুপ মোদের দেশ যে নামে ডাকলে আমাদের অন্তর ভরে যাবে
সেই নামের মাধুরি মেশান নাম দিলেই সুন্দর হবে ,
আমি একখান দিতে চাই নাম যদি সবাই অন্তরে নেন গাঁথে
বঙ্গবন্ধু বলেন বলেন দেখি শুনি ভালো হলে নামটি আমি রেখে দিতেও পারি ।
নামটি সবুজ বাংল হতে পারে মায়ের জম্ম ভূমি
মির মোশারফ বল্লেন তখন ওরে ভাই মূজিব সোনার বাংলা দিলে কেমন হয়
মুজিব বড্ড চিন্তিত মনে মনেভাবছিলেন সবার মাঝে বসে ,
করিলেন নিজেই উপায় বের করে কিছুক্ষন ভাবনা চিন্তার পরে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন হেঁসে ভাই সকল বন্ধু সকল আমার
বাংলাদেশ নামটি আমি মনে নিয়েছি গেঁথে
দেশ স্বাধীন হলে মোদের দেশের নাম “বাংলাদেশই” হবে
সবাই খুশি দিয়ে কর তালি লাফিয়ে উঠে উচ্চসরে ধন্য ধন্য
মুজিবকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিলে
গর্ভে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুক কানায় কানায়
পুর্ন হয়ে ।
ছুটলেন বঙ্গবন্ধু আর যে নেই থামা দেশকে স্বাধিন করবে
সেই নেশায় পাগলের মতন পথ চলা ,
ইতিহাসে, ইতিহাসে যখন বাংলাকে নিয়ে করছে কানা কানি
তুমি আমি মহাশুখে করছি বাহাদুরি
স্বাধীন দেশের ইতিহাস অনেকেরই ছিল অজানা ।
কবিতার মাঝে কে,এম,তোফাজ্জেল হোসেন জুয়েল লিখে গেলাম কিছু কথা
বাংলা স্বাধীনের অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
কুঁড়ি থেকে ফুল হতে যাওয়া অনুষ্ঠানে রেখেছিলেন এই দেশটির নাম
দিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের মান পশ্চিম বঙ্গে বসে কুষ্টিয়া শহর থেকে
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে
আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত
করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশ দিবস’ বা ‘বাংলাদেশের নামকরণের দিবস’ হিসেবেই পালিত হয়।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালের পাঁচ ডিসেম্বরে মৌখিকভাবে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের নাম হয়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর থেকে কাগজে-কলমে পূর্ব-পাকিস্তান লিখলেও মুখে সবাই কুষ্টিয়ার এই অঞ্চলকে বাংলাদেশই বলতেন।
সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য
তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ
বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাইকো মোদের জানা
‘বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত স্মরণসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
মোদের দেশটির স্বাধীনের পর নাম বাংলাদেশ রাখা হবে।
এমনকী সেদিন স্লোগানও স্লোগানে বলেছিলেন আমার দেশ, তোমার দেশ-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’।’’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও পূর্ব-পাকিস্তান বলতেন না, তিনি সবসময় ‘পূর্ব-বাংলা’ বলতেন।
১৯৫৮ সালের একটি ঘটনায় ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮, বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘
‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর ১৯৪৭ সালে বঙ্গ-প্রদেশ ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হয়
সে সময় পাকিস্তানিরা পূর্ব-বাংলার নাম দিতে চাইলো পূর্ব-পাকিস্তান
এই নিয়ে সে সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয় বাংলা আর হচ্ছেনা বাংলা আমার বাংলাদেশ
আন্দোলনের আন্দোলনে ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলা দেশের নাম
১৯৫৭ সালে করাচিতে পাকিস্তানের গণপরিষদের তরুণ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান
বক্তৃতা দেওয়ার সময় ‘পূর্ব-পাকিস্তান’ নামটির প্রতিবাদ করে , পূর্ব-বাংলা নামের একটি ইতিহাস লাগাম টেনে ধরে
ঐতিহ্য হারিয়ে বাংলাকে যদি পূর্ব-পাকিস্তান নাম রাখতেই হয়,
তাহলে বাংলার মানুষের জনমত যাচাই করতে চাই ।
তারা নামের এই পরিবর্তন মেনে নেবে মেনে নেবে কিনা- সেজন্য গণভোট করতে হবে।’’
বিবিসি’র ওই রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ’ শব্দের উৎপত্তিগত ব্যাখ্যা দেন তাদের কাছে।
যেখানে ‘বাংলা’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ‘বঙ্গ’ থেকে।
আর্যরা কুষ্টিয়াকে ‘বঙ্গ’ বলে এই পশ্মিম অঞ্চলকে অভিহিত করতো বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়।
তবে বঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানরা এই ‘বঙ্গ’ শব্দটির সঙ্গে ফার্সি ‘আল’ প্রত্যয় যোগ করে।
এতে নাম দাঁড়ায় ‘বাঙাল’ বা ‘বাঙ্গালাহ্’। ‘
আল’ বলতে জমির বিভক্তি বা নদীর ওপর বাঁধ দেওয়াকে বোঝায়।’’
ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের উদ্ধৃতি দিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন কই
‘মুসলমান শাসনামলে বিশেষ করে ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে
১৫৭৬ সালে মোঘলরা বাংলা দখল করার পরে এই অঞ্চলটি বাঙাল বা বাঙালাহ নামেই পরিচিতি হই ’
সোহরাওয়ার্দীর ওই স্মরণসভায় এই নাম দেওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন
১৯৫২ সালে সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাংলা ভাষা থেকে-বাংলা
এরপর স্বাধীন দেশের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে-দেশ
এই দুটি ইতিহাস ও সংগ্রামকে এক করে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করা হয়
এ সম্পর্কে ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার উদ্ধৃতি হয়ে আছে
এক সময় এই দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে
. বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোনও কিছুর নামের সঙ্গে বাংলা কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় কি সহজে
.জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব-পাকিস্তান এর পরিবর্তে হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ
ধর্মভিত্তিক ধারণা রোয়ার মিডিয়া’ নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক ম্যাগাজিনের আট ডিসেম্বর, ২০১৯ এ প্রকাশিত
মোদের বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশ নামটি যেভাবে আমাদের হলো’
শীর্ষক ‘বাঙালির ইতিহাস’ বইয়ে ড. মোহাম্মদ হাননান, ১৭৬৮-১৭৮৮ সালের মধ্যে গোলাম হোসায়ন সলীম জইদ পুরী রচিত ‘হয়
রিয়াজ-উস-সালাতীন’ গ্রন্থ হতে ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি উৎপওি স্থল হয়৷।
মহাপ্লাবন পরবর্তী সময়ে হযরত নূহ (আঃ) তার স্ত্রী, সন্তানসহ ৮০ জন নর-নারী আল্লাহর হুকুমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন,
সেখানে বংশবৃদ্ধি শুরু করেন, এবং তাদের বংশধররাই পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজান। নূহ (আঃ) এর এক পুত্র হাম অর্থাৎ খোকাশাহ নামে পরিচিত এশিয়া অঞ্চলে বংশবৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত তিনি খোকসা অঞ্চলে বসবাস গড়ে তোলেন তারই এক পুত্র হিন্দের নামানুসারে ‘হিন্দুস্থান’, সিন্ধের নামানুসারে ‘সিন্ধু’, আর বঙ্গের নামানুসারে ‘বঙ্গদেশ’ নামের উৎপত্তি হয়।
আবার বঙ্গ নামকরণের পেছনে হিন্দুদের পৌরাণিক তত্ত্বও বিদ্যমান
পৌরাণিক মতে, বঙ্গের নাম এসেছে রাজা বালির পুত্রের নাম থেকে
রাজা বালির এক পুত্র অঙ্গ শাসন করতেন পশ্চিমবঙ্গ, কুষ্টিয়া খুলনা ও বরিশাল অঞ্চল
আরেক পুত্র বঙ্গ শাসন করতেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরা অঞ্চল।
সর্বশেষ পুত্র পুন্ড্র শাসন করতেন উত্তরবঙ্গ ও আসাম অঞ্চল
এই পুত্রের নামানুসারেই তাদের….
ব্রিটিশ আমলের শুরুতেই খোকসার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত জানিপুর পুরাতন বাজারের পার্শ্বে গড়ে উঠে একটি পতিতালয় বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবাদে । সে সময় এখানে একটি ছোটখাট বন্দর ছিল। পরবর্তীতে ওখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে খোকসা জানিপুর নতুন বাজার টি প্রতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম মনসুর আলী বিশ্বাস যা এখন খোকসা জানিপুর বাজার নামে পরিচিত । গড়াই নদীর বুক চিড়ে ষ্টিমার এসে ভিড়ত। শাল কাঠেব আড়ত ছিল। বাদাবন থেকে ধান আসত। ধানের হাট বসত নিয়মিত। গড়াই নদীর কড়াল গ্রাসে এসব বিলীন হয়ে গেলে ১৯৪০ সালের দিকে পতিতালয়টি স্থানান্তরিত হয়ে কালীবাড়িতে স্থাপিত হয়।খোকসার পতিতালয়, পতিতাবৃত্তি ও উচ্ছেদের ইতিহাস!কুষ্টিয়ার খোকসা একটি প্রাচীন জনপদ। যতদুর শোনা যায় ‘খোকা শাহ’ নামের এক সাধকের নাম থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি হয়েছে। আবার কারও কারও মতে ‘খোকসা’ নামক গাছ থেকে খোকসা শব্দের উৎপত্তি। তবে ‘খোকসা’ নামক গাছ অনেক আগেই বিলুপ্ত হলেও বর্তমান রংপুর অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় খোকসা নামক গাছ এখনও আছে।
জীবনধারণের যতগুলি উপায় প্রাচীনতম, তার মধ্যে বেশ্যাবৃত্তি অন্যতম। ব্রিটিশ আমলের শুরুতেই খোকসার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত জানিপুর পুরাতন বাজারের পার্শ্বে গড়ে উঠে একটি পতিতালয়। সেসময় এখানে একটি ছোটখাট বন্দর ছিল। গড়াই নদীর বুক চিড়ে ষ্টিমার এসে ভিড়ত। শাল কাঠেব আড়ত ছিল। বাদাবন থেকে ধান আসত। ধানের হাট বসত নিয়মিত। গড়াই নদীর কড়াল গ্রাসে এসব বিলীন হয়ে গেলে ১৯৪০ সালের দিকে পতিতালয়টি স্থানান্তরিত হয়ে কালীবাড়িতে স্থাপিত হয়।
কুষ্টিয়ার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. আবুল আহসান চৌধুরী কর্তৃক রচিত ‘অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা’ বইটিতে তিনি লিখেছেন ‘বেশ্যাবাজি ছিল বাবু সমাজের সাধারণ ঘটনা। নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়েরও রক্ষিতা ছিল। এমনকি ওই রক্ষিতার গর্ভে তার একটি পুত্রও জন্মে ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন। মরমি কবি হাসন রাজা, কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও পতিতালয়ে যেতেন। নিষিদ্ধ পল্লীতে গমনের ফলে রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস আক্রান্ত হওয়ার খবর তার জীবদ্দশাতেই ‘বসুমতী’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল।
সব যুগে, সব সভ্যতায়, বেশ্যাদের নিন্দা করা হয়েছে। আবার তাদের প্রতি মুগ্ধতায়ও ছড়িয়ে রয়েছে সমাজের সর্বস্তরে। খোকসার মানুষ হিসেবে সেসময় যৌনপেশায় নিয়োজিত মানুষগুলো, তাদের সুখ-দুঃখ, কাজের পরিবেশ জানতে ও জানাতেই আমার ছোট্র এই নিবন্ধ। তবে বেশ্যাদের জীবনসত্য থেকে যায় আলো-অধারীতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরিত তথ্য রয়েছে এ নিবন্ধে। শিরোনাম বিষয়ে এমন পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এই প্রথম বলে দাবীও রাখি।
পতিতাবৃত্তির অপর নামসমূহ গণিকাবৃত্তি, যৌনবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি। ইতিহাসের আদিকাল থেকে এদের বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। যেমন- দেহপসারিণী, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী, জারিণী, পুংশ্চলী, অতীত্বরী, বিজজব্রা, অসোগু, গণিকা, কুলটা, বারণবণিতা, কুম্ভদাসী, নটি, রূপজীবা ইত্যাদি। এ পেশায় নিয়োজিতরা নিজদেহ নিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থাৎ নিজদেহ স্বেচ্ছায় অপরকে ভোগ করার সুযোগদানের বিনিময়ে অবৈধপন্থায় অর্থোপার্জন। জর্জ স্কট তার ‘পতিতা বৃত্তির ইতিহাস’ নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- ‘পতিতারা হলো সেই সম্প্রদায়ভুক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের দেহ দিয়ে জীবিকা অর্জন করে।’ অক্সফোর্ড ডিকশনারি মতে বেশ্যা হলো একজন নারী যে তার দেহ ভাড়া দেয় যথেচ্ছ যৌন-সংসর্গের জন্য।
প্রতিদিন সকাল হয় ঝিঝিরি বাতাস গড়াইয়ের ঢেউর শ্নানে
সূর্য -উঠে আঁধার- কেঁটে সোনালী রোদ গাঁয়ে- মেখে- টাকার
পাহার -দালান- কোঠায় সূখ কি -মেলে -কভূ- সূখ- যদি -চাও
খোকসায় এসো সূখ পাবে তুমি বহু সকাল হলেই ঘূম ভাঙ্গায়
সবার মোয়াজ্জেমের আজানের সুর বাড়ি বাড়ি হৈ চৈই পড়ে
নামাজ -পড়ার ধূম -গড়াই -নদির- ধারে -হাজার পাখির -কিচি
মিচি রব -নদির -খরতা -স্রতে- পালতুলে -যায়- মাঝি -মাল্লারা
ভাটিয়ালি- গানের -সুরে -আওলা- বাতাস পাগলা ঢেও খেলে
যায় সকাল বিকাল- সাঁঝে -বসন্ত -কালে -ফুঁল -ফোটে -শাঁখে
অনেক রং বে রংঙ্গের ফুঁল রাখালীয়া বাঁশির সুর সবুজ বনের
ঝাঁক -কাঁশ- ফুঁলের- সাদা -বনে শিয়াল -মামার- হাঁক -পাখির
গানের মধুর টানে মন যেন- আজ ছুটে ছুটে -যায় কোন -এক
অজানা নেশায় দিন রাত ভেবে দিশে না পায় প্রকৃতির সাথে
প্রেমের নেশায় সবুজ ঘাসে হরেক ফুঁলে আকাশের ওই সাদা
মেঘে -মন- টা -আজ -নেচে -নেচে -যায় -মাঠ -ঘাট- আর -বন
পেরিয়ে প্রজাপতি আর ফরিং বেশে মন টা যেন আজ উড়ে
যেতে চায় খোকসা উপজেলার জানিপুর বাজার সন্ধা হলেই
রুপালি -চাঁদ- মিটি- মিটি করে -ফোঁকলা দাঁতে -হাসে -চাঁদের
জোছনায় পান কৈরির ঝাক কানা মাছি খেলে বাতাবি লেবুর
বনে জোনাকির দল- সন্ধা নামলে- মিটি -মিটি -জ্বলে -সকাল
হলে বকের ঝাঁক দল বেঁধে যায় সাদা মেঘের কোনে নৌকার
দাঁর টেনে মাঝিরা দুর দেশেতে গুন গুনিয়ে ছুটে চলে বিষ্টিতে
টাপুর টুপুরে পালতুলে দিয়ে নায়ে বাবুই পাখির ঝাক বটের
গাঁয়ে তাল গাছের ডালে বেঁধেছে তারা বাসা অপরুপ কি দৃশ্য
সে -যেন -ধূলায় -লুটিয়ে -আছে -সেথা -তুমি -দেখতে -পাবে
খোকসা এলে সেথা -সূখে সূখে ভরে -উঠবে- তোমার -পোড়া
বুকে আমাদের খোকসায় ঘিজি ঘিজি ঘর থাকি সেথা সবে
মিলে -সবাই মোড়া আপন -খোকসার সকল -ছেলে মেয়েরা
সবাই -ভাই বোন এক- উপজেলায় খেলি- আর স্কুলে -যাই
আমাদের খোকসা উপজেলা মায়ের সমান আলো দিয়ে বায়ু
দিয়ে বাঁচাই প্রাণ মাঠ ভরা ধান তার জল নদী চাঁদের কিরণ
লেগে করে ঝিকিমিকি আম গাছ জাম গাছ বাঁশ ঝাড় যেন
মিলে – মিশে -আছে -ওরা- একে- অপরের -আত্মীয় -সকালে
সোনার রবি পুব দিকে -উঠে পাখি -ডাকে বায়ু বয় নানা- ফুল
ফুটে আমাদের খোকসায় আছে ছোট বড় ইটের বাড়ি গাঁয়ের
পথে- পাড়ে আছে -শুপারি গাছের সারি -গাঁয়ের- পাশ -দিয়ে
গড়াই নদী বয়ে চলে অবিরাম ধারায় গাছের সবুজ ছায়ায়
ঘেরা আমাদের এই জানিপুর বাজার দূর গাঁয়ের প্রান্তে বটের
ছায়ায় -চারপাশে তার আঁকা- বাঁকা গলি -পথ গড়াই- নদীর
ঘোলা জলে রোজ ছেলেরা সাঁতার কাটে গাঁয়ের জেলে মাছ
ধরে- পুকুরেতে রোজ জাল -ফেলে শংখচিল উড়ে -চলে দূর
আকাশে ডানা মেলে পাহারাদার লণ্ঠণ হাতে রোজ সারা রাত
দেয় পাহারা আমার -খোকসা -আমার অহংকার -সর্ব দেশের
সেরা সে যে আমার জম্ম ভূমি কোথায় গেলে এমন ভূমি পাবে
তুমি বল কাঁশ বনেতে -ঘেড়া গড়ায়ের -তীর সবুজে ভড়া তার
চার পাশ এমন সুন্দর গড়াই নদীর তীর আর কোথাও পাবে
কি নদীর -দু’পারে- চিকি- মিকি বালুর- চর -সোনালী -রংঙে
খেলায় -মাতে সবুজ -বনানী পুস্পকানন -পাখীর কূজন -রবে
নদীনালা- খাল -বিল হাওড় -বাওড়ে ভরা -আমাদের খোকসা
মায়ের বুক বর্ষায় ভরা নদী জোয়ার ভাটার যৌবণে মনে পাই
বড় সুখ ধানক্ষেত বাঁশ ঝাড় ফুল ফলে সাজানো গ্রাম বাংলার
মায়া প্রতিকৃতির মায়া ভড়া মূখ একদিকে আকাশ অন্যপাশে
সমতল -ভূমি- কত -অপরূপ -সব -প্রকৃতি মুগ্ধ- নয়নে -দেখি
আমার জম্ম ভূমির কত রূপের গর্বে ভরে ওঠে মন আমরা
সবাই একে একে গলা গলি ধরে পথ চলি সুখে দূঃখে সবাই
আমরা -সারা-জীবন -এক -সাথেতে -রই -জন্ম- নিয়ে- এই
খোকসায়- আনন্দ- উচ্ছাসে -বড়- হই -আমাদের -প্রিয় রূপসী
খোকসাকে -সারা-জীবন -আমরা -সবাই -যেন- সুখে -দূঃখে
ভালোবেসে পাশা পাশি- রই এ খোকসা -আমাদের জন্ম -ভূমি
খোকসা আমাদের অহংকার সর্ব দেশের সেরা সে যে আমার
জম্ম ভূমি ।।
আদিম যুগ থেকে যৌনমিলনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর সাধনার পথে মানুষ যাত্রা শুরু করেছে। নিজেদের শরীরই ছিল তাদের প্রথম ও প্রধান উপাচার। যে কথা বলছিলাম স্থানান্তরের পর নতুন স্থানে জৌলুস হারায় বেশ্যাবৃত্তি। খোকসার কালীমন্দিরে ঢুকতেই শচীন মাষ্টারের যে বর্তমান বাড়ি সেখানেই নতুন করে গড়ে উঠে পতিতালয়টি। মাত্র ১৫-২০ কাঠা জমির উপর। সেসময় ঘর ছিল মাত্র ১০-১৫টি। পতিতাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০-২৫ জন। কুমুদিনী নামক একজন যৌনকর্মী বাড়িওয়ালা হিসেবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৬৯ সালের দিকে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ ও মুসলিমলীগের কু দৃষ্টি পড়ে এ বেশ্যালয়ের উপর। অবশেষে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। খোকসার বেশ কিছু মানুষ ওই সব পতিতাদের স্ত্রী করে ঘরে তুলে নেন। সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পতিতালয় উচ্ছেদকারী জামাত নেতা ও পতিতাদের স্বামীর নাম প্রকাশ করা হলো না।
বাংলা পিডিয়া তথ্য সূত্র মতে মহাভারতে উল্লেখ আছে, একজন বেশ্যা ভালো প্রকৃতির হলে উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। এ জীবিকা সম্পর্কে বৌদ্ধ ধর্মেরও একই মত। মহাভারতের যুগে অপরাপর সম্মানজনক বৃত্তিগুলোর মধ্যে পতিতা বৃত্তিই ছিল অন্যতম। রাজদরবারে ও বিবিধ রাজকীয় অনুষ্ঠানে পতিতাদের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। বিশিষ্ট প্রত্নতত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ড. অতুল সুর তার দেবলোকের যৌনজীবন বইয়ের ৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল’।
রোমান ইতিহাস মতে, পৃথিবীতে প্রথম বেশ্যাবৃত্তি পেশার মতো লাইসেন্স বা নিবন্ধন দেওয়া ও কর ধার্য করা হয় রোমান আমলেই। সপ্তম শতকের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন বানভট্ট। বানভট্ট তার ‘কাদম্বরী’ গ্রন্থে লিখেছেন, সেকালে বেশ্যারাই দেশের রাজাকে স্নান করাতো। এমনকি রাজার পরনের সব পোশাক বেশ্যারাই পরিয়ে দিত।
অবশেষে বাড়িওয়ালা কুমুদিনী দেবী এসে আশ্রয় নেন খোকসা থানার পাশে বর্তমান যে স্থানটি ফিটুর মেস নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ওই জমিটি কিনে নেন জনৈক আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এভাবে খোকসার পতিতাবৃত্তির ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে।
ডা. লুৎফর রহমান তার ‘মহাজীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘এই সমাজে যদি তাদের (গণিকাদের) প্রয়োজন নাই থাকত তাহলে তারা অনেক আগেই হারিয়ে যেত।’ প্রবীর কুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘কালিকা পুরোনোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি’ বইয়ের ৭২, ৮৬, ১০৮, ১২৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত, হিন্দুরা মনে করে, বেশ্যারা এ সমাজকে নির্মল রাখে। আর সেই কারণেই দুর্গাপূজার সময় বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। দুর্গাপূজার সময় দশ ধরনের মাটি প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য।
অবশেষে যে কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। বেশ্যাদের অমর্যাদা দূর করতে কি বেশ্যাবৃত্তি পেশাটাকেই মুছে দেওয়া দরকার ছিল সে সময় মুসলিমলীগ নেতাদের, না নিষ্পেষণ দূর করে, তাদের কাজকে অন্য পাঁচটি পেশার মতো মর্যাদা দেওয়াটা জরুরী ছিল। পাঠকই এর জবাব দেবেন।
আমাদের ভূমিষ্ঠর পরে মিশে আছে যে ভাষা তার নাম বাংলা
ভাষা শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমার বাংলা
ভাষা যে ভাষায় আমি কথা বলি উঠতে বসতে শুনি তারি
মধুর ধ্বনি যে ভাষায় আমি পথ চলি আমি নানান স্বপ্ন মাখি
যে ভাষায় আমি আঁকি ছবি সকাল সন্ধ্যাবেলা যে ভাষায়
আমার হাজার — আশা সে –ভাষা আমার –বাংলা ভাষা
ভিন্ন ভাষা খাইলো চুষে বাংলা ভাষার মৌ আম্মা থেকে মাম্মি
হল ওয়াইফ হয়েছে বউ কেদারা যখন হইলো চেয়ার হান্ড্রেড
হইল একশ আর দশ হয়েছে টেন দুঃখিত টা মরে গেল সরির
চাপে পড়ে থ্যাঙ্ক ইউ টা বসল চেপে ধন্যবাদের ঘাড়ে শিক্ষা
গুরু টিচার হল বিদ্যালয় হইলো স্কুল না পিত ভাইয়ের সাইন
বোর্ডে হেয়ার হল চুল যে ভাষায় করি আমি সারা রাতি দিনে
রোজ প্রার্থনা যে ভাষায় মাখি আমি বাংলা মাটির ধূলি কণা
যে ভাষায় ডাকি আমি আমার মমতা জননি কে মন থেকে
করি আমি হৃদয়ের উপমা আন্তর্জাতিক সম্মান না যে ভাষার
জন্য শহীদ হয়েছে বরকত, রফিক, রক্ত দিয়েছে গুনি জনেরা
পাঠান বা প্রেরণ শব্দ হয়ে গেল রোমাটি কতায় সেন্ট বন্ধু
বান্ধব দোস্তরা সব হয়ে গেল ফ্রেন্ড অংশ শব্দ ধ্বংস হয়ে গেল
পার্টস শুশ্রু সেবা প্রদানকারি সেবিকারা নার্স সঠিক শব্দ
রাইট হলো আর ভুলটা হলো রং শক্তিশালী শব্দটা আজ হয়ে
গেল স্ট্রং ভাষার পথের প্যাচালী তে রাস্তা হল রোড চাকরি
বাকরি জব হলো আর খাবার হল ফুড বিজ্ঞাপনে সাবান শব্দ
হল বিউটি সোপ যাতায়াত টা জার্নি হল স্টপ হয়েছে চুপ যে
ভাষায় আমার ভালবাসা সে ভাষা আমার বাংলা ভাষা যে
ভাষায় শিখি আ-কার, উ-কার,সে ভাষা আমার অহংকার
আমার সংস্কৃতি,আমার সম্প্রীতি, মন-প্রাণ খুলে হাসা,হাসি
সে ভাষা আমার বাংলা ভাষা ভ্রমণ শব্দ ট্যুর হলো আর জুতো
হল সু মোবাইল ফোনে এক দুইয়েরা হইল ওয়ান আর টু
বাঙালির ভাত রাইস হয়েছে প্রাইচ হয়েছে দাম প্রেসক্রিপশনে
ইংরেজিতেই হইল আমার নাম বই বিতানের নাম করনে বই
হয়েছে বুক চালক থেকে ড্রাইভার হল হাজার হাজার মানুষ
এই হল আজ ভাষার প্রতি বাঙ্গালীদের আনেক টান কথায়
কথায় সবার মুখে ভিন্ন ভাষার গান ভাষার প্রতি আমরা
আজি এতই উদাসীন নিজের ভাষা রেখেও করি অন্য ভাষা
ঋণ মায়ের ভাষা ভাসিয়ে দিয়ে সাত সাগরের জলে গর্ব করে
ভিন্ন ভাষায় যাচ্ছি কথা বলে আনন্দে মেতে উঠে রাখালী
আমার আমি বাঙালি যে ভাষায় করি আমি সৃষ্টিকর্তায় ভরসা
নিই আমি সবুজের ঘ্রাণ যে ভাষার জন্য জীবন উৎস্বর্গ
ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আসুন করি পণ মায়ের ভাষায়
করবো মোরা সকল আলাপন যত দূরেই যাচ্ছি বাংলা ভাষার
শব্দ পাচ্ছি তোরা আমার সঙ্গ ছাড়িস না বলছে হঁসে বাংলা
মা আঁচল পেতে আছেন বসে ঐ আমাদের গাঁ একজোটে ঐ
দুঃখিনীটির ঘরের দাওয়ায় যাব খুঁদকুড়ো যা পাই, সব্বাই
মিলে এক সাথে তা খাবো মানুষ এখন টাকার নেশায়
নিজের ভাষা নিজের দেশ হারিয়ে জংলা ঐখানে ঠায়
আছেন বসে মোদের দুঃখিনী জমম ভূমি মা বাংলা মায়ের
সাদা দুধের মতন সরল ভাষা ঐ বাংলা এবার থেকে হোক
আমাদের নিত্যি দিনের চাওয়া সুদ্ধ ভাষায় কইব কথা যাচ্ছি
মানে আসছি দূর থেকে কার পায়ের শব্দ শ্রবণে টের পাচ্ছি
যতই আকাশ গর্জায় তোদের আমার অস্থি মাংস মজ্জায়
ফিনিক দিয়ে উঠছে তবু বুকের বাংলা ভাষা এবার থেকে
ঐখানে হোক নিত্যি যাওয়া-আসা ও আমার সোনার বাংলা
তোমায় ভালোবাসি নোংরা ভাষা ছেড়ে ছুরে শুদ্ধ ভাষায়
মাখি হাত ঘড়ির নাম ওয়াস বলে বাংলাকে মর্মাহত করব না
কুষ্টিয়া ভাষার রাজধানী যদি সুদ্ধ ভাষাকে চিনি তবে কুষ্টিয়া চিনি চির কাল
কুষ্টিয়া উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন জেলাগুলোর একটি। হ্যামিলটনের গেজেটিয়ারে বর্ণিত এ পাললিক ভূখণ্ড সময়ের পরিক্রমায় অতিক্রম করছে নানামুখী ইতিহাস; বয়ে নিয়ে চলেছে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। বিভিন্নভাবে সম্পর্কযুক্ত এসব বিষয় কুষ্টিয়াকে দিয়েছে ইতিহাসের একটি অত্যুজ্জ্বল ঐতিহ্যগত মাত্রা। বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশের মূল সংস্কৃতির ধারাকে নানাভাবে প্রতিনিধিত্ব, প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ করে আসছে এ জেলা। এরই মধ্যে জেলাটি দেশ ও দেশের বাইরে ‘সংস্কৃতির জনপদ’ (বহুল ব্যবহূত ‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’) নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। আরো মূল্যবান যে বিষয়টি তা হলো দেশের প্রমিত ভাষাতাত্ত্বিক যে লোকজ ঐতিহ্য সেই মূলধারায় কুষ্টিয়ার অবদান স্বীকৃত।
লাল সবুজের পতাকা যখন আনলো স্বাধীনতা কেড়ে
উড্ডণ হলো পথম কুষ্টিয়া মুজিব নগরের আকাশে
স্বাধীনতা ঘোষনা ঘিরে হাজার হাজার কৃষক যারা
আনন্দে লুটিয়ে পড়লো শুনে স্বাধীনতার ঘোষনা
অশিক্ষিত কৃষক ফলায় ফসল ছেড়া লুঙ্গি গাছা পড়ে
শহরের বাবুরা নিচ্ছেল লুফে টাকার বলে আদর করে
সেই কৃষক দিন মজুর ছেড়া লুঙ্গি গামছা পড়ে এনে
ছিলো স্বাধীনতা বড় বড় শিক্ষিত কোট টাই প্যান শার্টে
আজ স্বাধীনতাকে রং দিয়ে নানান ডিজাইনে মাখে
দামি দামি তুলির ক্যানভাসে এইতো আমাদের স্বাধীনতা
হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে শিশুদের ঝাঁজালো
কান্নার সরে হাজারো নারী ধর্ষিত কোলাহলের সবকিছুকে
পিছে ফেলে বাটপারের আজ খাচ্ছে লুটে মিষ্টি কুমড়ার
ফালি করে আলু পটলের নিরামিষে এ যেন ভরছে না তাদের
পেট পান্তাভাতে ঘি ঢেলে পেঁয়াজ-মরিচ ঠিক ডলে স্বাদ
নিচ্ছে বডড ডের আমাদের স্বাধীনতা ভেসে যাচ্ছে আজ ঘি
আর পান্তাভাতের থালে থালে এমনি করে ওই মেশিনগানের
রব ওই গেনেটের শব্দ ধুয়ে মুছে যাচ্ছে দূরে বহুু দূরে সাগর
যেমন মনের সুখে খল খলায়ে হাসে নিজ স্বাধীনতা পেয়ে
বাংলাও তেমন নিজ স্বাধীনতা পেয়ে ভরে পুশপ কাননে
স্বাধীনতা রক্ষায় কুষ্টিয়ার সব ঝপিয়ে পড়েছিলো বাংলায়
বুকের তাজ রক্তে দেশ স্বাধীন করেছিল কুষ্টিয়ার শহর
আজও কালের সাক্ষি হয়ে কথা কয় আবাল বুড়ো ছোট
বড় কেউ ছিলো আর বাঁধ সেই স্বাধীনতার রাজধানী কুষ্টিয়া
ও ভেঙে হচ্ছে তছ নচ বাংলা ভাষার জন্য যার দিয়ে ছিলো
সেদিন পান আমরা কোন দিনও ভূলব তাদের ভূলবনা
যার স্বাধীনতাকে বধ হজম করে খাচ্ছে লুটে পুটে তারা
রাজাকার সামস আলবদর ছাড়া কিছু তারা কিছু না !!
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতভাগের সূত্র ধরে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা পাকিস্তানের অংশ হয়ে পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়। তার আগে ছিল মহকুমা হিসেবে অবিভক্ত বাংলার প্রেসিডেন্সি বিভাগের অন্যতম নদীয়া জেলার অংশ। পেছনে রয়েছে আরো ইতিহাস।
ইতিহাসবিদ কুমুদনাথ মল্লিক তার ‘নদীয়া কাহিনী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘কুষ্টিয়া জেলার প্রাচীন ইতিহাস জানা যায় না।’ কুষ্টিয়া নামকরণেও প্রচলিত নানা কথা। ১৮২০ সালে হ্যামিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে যে স্থানীয় জনগণ একে ‘কুষ্টি’ বলে ডাকত, সেজন্য নাম হয়েছে কুষ্টিয়া। অনেকের মতে ফারসি শব্দ ‘কুশতহ’ যার অর্থ ‘ছাই দ্বীপ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ‘কুষ্টা’ (পাট) জন্মায় বলে এ নামের সৃষ্টি হতে পারে। সম্রাট শাহজাহানের (১৫৯২-১৬৬৬) আমলে স্থানটি গড়ে উঠেছিল পাট ব্যবসাকেন্দ্রিক নৌবন্দর হিসেবে এবং ওই সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উত্পত্তি ঘটেছে। পাটের স্থানীয় পরিভাষা এখনো কুষ্টা। অনেকে মনে করেন, কুষ্টা থেকে কুষ্টিয়া নামের উত্পত্তি। কুষ্টিয়া নামকরণের ব্যাপারে বেশকিছু যুক্তি আছে। এ জেলার অনেক মানুষ এখনো কুষ্টিয়াকে ‘কুইষ্টে’ বা ‘কুষ্টে’ বলে অভিহিত করে। তাই ধারণা করা যুক্তিযুক্ত যে কুষ্টে শব্দ থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। ইতিহাস বলছে, এ অঞ্চলের ও অবিভক্ত নদীয়া জেলার আদি বাসিন্দাদের মুখের ভাষার সঙ্গে আধুনিক প্রমিত বাংলার ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। নদীয়া জেলায়ও এ মহকুমাকে ‘কুষ্টে’ বা ‘কুইষ্টে’ নামে ডাকার দীর্ঘ প্রচলন লক্ষ করা
পাকিস্তানি হানাদার নরপিচাশ রাজাকারের সাথে তুমুল
যুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তর মেশিন গানের বুলেটে বুলেটে আমার
ঝাঁঝরা বুকের উপরে ফুটে উঠেছে যে মানচিত্র—তার নাম আমার রূপসী বাংলা আমার জন্মভূমি আমার প্রতিটি রক্তের
ফোঁটা দিয়ে চা-বাগিচায় সবুজ খেতে পাহাড়ে-অরণ্যে লেখা হয়েছে যে ভালোবাসা—তার নাম সোনার বাংলা আমার
মাতৃভূমি আমার অশ্রুর বারিধারায় এ খুনীর চেয়েও রুক্ষ কঠোর মাটিতে বোনা হয়েছে যে-অন্তহীন ভালোবাসার
গানের স্বপ্ন ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি তার নাম সবুজ বাংলা আমার ঠাণ্ডা বুকের
ভেতরএখন গাঢ় হয়ে জমে আছে কপাল থেকে মৃত মায়ের বুকের রক্ত মুছে ফেলে আমাকে বুকে ক’রে তুলে নিতে
এসেছে স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা হতে জয় বাংলা’ স্লোগানে স্লোগানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিটি
ধর্ষিতা বাঙালি যুবতীর শোক নয় ক্রোধের আগুনে দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে আজও আমাদের বিবেক ভরাট গর্ভের মত
আকাশে আকাশে কেঁপে উঠেছিল পূর্ণিমার মেঘ তার একটু পরেই প্রতিটি মরা খাল-বিল-পুকুর কানায় কানায় ভরে
উঠেছিল আমার মায়ের চোখের জলে প্রতিটি পাথর ঢেকে গেল সেদিন লাল রক্তের চুম্বনে সুদূরে মিলায় সবুজ
ফসলের মাঠখানি সবুজ আর সোনালী মিশে একাকার মন যে সুদূরে নিল টানি পশ্চিমা সূর্যের কিরণে ঝিকমিক
সোনালী ফসলের মাঠ সোনা রোদের ঝিলিক স্নিগ্ধতায় মুগ্ধতায় দুচোখ খুশিতে চিকমিক পাখিরা করে কলরব
গাছের শাখে শাখে ঝির ঝির হাওয়া বয় পথিক ঝিরোয় ছায়ায় ফেরিওয়ালা হাক পাড়ে ওই পথের বাঁকে কুয়াশার
চাদর বিছায়েছে দেখ কচি ঘাসের মাথায় শিউলীরা ভালবেসে শিশিরের গায়ে দেয় চুম্বন আহ! ফুলের আঘাতে
গলে গেল শিশির ব্যথায় টুপটাপ টুপটাপ শিশির ফোটা টিনের চালে বহে হিমেল বায় মনোরম আবেশ যেন প্রকৃতি
গান গায় তালে তালে রাতের জোছনা ঝরা আকাশে মিলি তারা আর জোনাকীদের সাথে প্রাণ ভরে নি:শ্বাস নেই উন্মুক্ত
বাতাসে আমার প্রিয় বাংলাদেশ হাজার স্বপ্ন দিয়ে সাজাই তারে স্বপ্নের তো আর নেইকো শেষ ঋতু বৈচিত্রের সুন্দর
জন্মভূমি আমার বিচিত্র রূপ তার শস্য শ্যামল ক্ষেত খামার প্রিয় জন্মভূমি মা হৃদয়ের গভীর থেকে তোমায় ভালোবাসি !!
খোকসা উপজেলা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।১। অবস্থান ও আয়তনঃ খোকসা উপজেলার উত্তরে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা, পূর্বে পাংশা উপজেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলা এবং পশ্চিমে কুমারখালী উপজেলা।২। নাম করণের ইতিহাসঃখোকসা নামের উৎপত্তি কোথা থেকে আল্লাহর গায়েবী খোকসা নামক গাছের থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি। ৩। নদ-নদীঃখোকসা উপজেলায় ৩টি নদী রয়েছে। নদী ৩টি হচ্ছে গড়াই নদী, ইছামতী নদী ও সিরাজপুর হাওর নদী।৪। প্রশাসনিক এলাকাঃখোকসা উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে; এগুলো হলোঃপৌরসভাঃঃ খোকসা পৌরসভা
ইউনিয়নঃ আমবাড়ীয়া, ওসমানপুর, খোকসা, গোপগ্রাম, জয়ন্তীহাজরা, জানিপুর, বেতবাড়ীয়া, শিমুলিয়া এবং শোমসপুর।৫। জনসংখ্যাঃ জনসংখ্যা ২ লাখ (প্রায়), পুরুষ ৬৯,৬৮৬ জন (প্রায়), মহিলা ৬৪,৩২৫ জন (প্রায়)।৬। শিক্ষাঃ১। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৭ টি, ২। জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ০৪ টি, ৩। উচ্চ বিদ্যালয়(সহশিক্ষা) ১৬ টি, ৪। উচ্চ বিদ্যালয়(বালিকা) ০২ টি, ৫। দাখিল মাদ্রাসা ৫ টি, ৬। আলিম মাদ্রাসা ০২ টি, ৭। ফাজিল। খোকসা উপজেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট খোকসা উপজেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্টিত হয় তৎকালীন সময়ে হাজী জালাল উদ্দিন মিয়া ও সৈয়দ মাসুদ রুমির হাতে। আর বৃহত্তম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত হয় খোকসা উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের হাতে তারই হাত ধরে সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নানা অঙ্গসংগঠনের সৃষ্টি । আগে খোকসা উপজেলায় সাবেক জাতীয় দলের সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী এমপিতো দাপটের সাথে পালন করলেও বর্তমানে এখন খোকসার উপজেলার বর্তমান এমপি বৃহত্তম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার আলতাফ হোসেন জজ এ এলাকার আপামর জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত .বর্ধমান খোকসা উপজেলার অসংখ্য কৃতি সন্তান সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারী তে নিয়োজিত আছেন যেমন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান পি এস দুই আল মামুন মোর্শেদ জয় আরো নাম-না-জানা অসংখ্য সুধি ব্যক্তিবর্গ গন দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিষ্ঠান নাম উজ্জ্বল করেছেন । আছেন গুনি অসংখ্য কবি-গায়ক এডভোকেট শিক্ষক ব্যবসায়ী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অভিনেতা অভিনেত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকসহ নানান শ্রেণীর আপামর কর্মজীবী মেহেনতি মানুষ ।
Post Views: 309
Like this:
Like Loading...
Related