ইবাদতের আগে হকের হিসাব!

 

 

কারো অভিশাপ নিয়ে, হক মেরে কিংবা অধিকার কেড়ে সিজদা না দিলেও হয়! আবার ভাববেন না সিজদা দিতে নিষেধ করছি। তবে সিজদা কবুল হওয়ার শর্তগুলো বলার চেষ্টা করছি। আল্লাহবান্দাহের থেকে তাঁর নিজের হক আদায়ের আগে একজন বান্দাহ অন্য বান্দার ঋণ শোধ করেছে, ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছে এবং অহংকারছেড়েছে- এটা দেখতে চান।

 

যাকাতে কত শাড়ি দিবেন, দান-সদকা করবেন- তাতে কিছুই যায় আসে না যদি ফুফুদের উত্তরাধিকার বুঝিয়ে না দেন কিংবা খালাদের ঋণ পরিশোধ না করেন। আত্মীয়-স্বজনদের অভাবের সময়ে রহম না করে নাম কামানোর জন্য দানখয়রাত করাতে বিন্দুমাত্র ফায়দা নাই। যাকাত দিবেন ভালো কথা কিন্তু ঘুষের টাকায়, সুদের টাকায় কিংবা কারো হক মেরে কামাই করা টাকায় যাকাত দেওয়ার দরকার নাই। আল্লাহর ক্রোধ আর বাড়াইয়েন না।

 

সিজদা দিতে দিতে কপালে দাগ না ফেললেও কিংবা তাবলিগে সময় না লাগালেও কিংবা হজ না করলেও আল্লাহ তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম না মানার সব পাপ মাফ করে দিতে পারেন। তিনি রহিম, তিনি রহমান। যে হক আল্লাহর সাথে যুক্ত তা আদায় না করেও আপনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারেন- যদি দয়াময়আল্লাহ চান।

 

কিন্তু প্রতিবেশীদের কষ্ট দিলে, ইয়াতিমদের সম্পদ হরণ করলে, অধীনদের প্রতি অবিচার করলে কিংবা কাউকে অধিকার বঞ্চিত করলে আপনি ক্ষমা পাবেন- এমন নিশ্চয়তা স্বয়ং প্রভুও দেননি। বরং তখন খোদা কাহহারের ভূমিকা নেবেন। যাকে কষ্ট দিয়েছেন, যাকে কাঁদিয়েছেন কিংবা যাদের থেকে অভিশাপ কামিয়েছেন তারা ক্ষমা না করলে আপনার মুক্তি নাই। লিখে রাখুন নতুবা মনে রাখুন। তখন আপনার জন্য স্রষ্টাকে করুণাময় হিসেবে পাবেন না।

 

যাদের রিজিকের সাথে হারাম মিশে যায় তাদের মত দুর্ভাগা দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নাই। কাউকে ঠকানো এবং ঠেকানো- আমলনামারপুণ্যগুলো দিয়ে শোধ করতে হবে। সম্পদের ঋণের চেয়ে কথার ঋণ কোনোভাবেই ছোট দায় সৃষ্টি করে না। বরং কখনো কখনো শরীরে আঘাত করার চেয়ে অন্তরে আঘাতের ক্ষতচিহ্ন খোদার কাছে বড় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

 

অনুচিত জেনেও অন্যকে কথার আঘাতে জর্জরিত করি, বিশ্বাস ভেঙে যাদের চোখের পানি ঝরাই- এসব বেহিসাব যাবে না। বাহ্যিক সাজগোজে সাধু অথচ আল্লাহর আদালতে কত শত অপরাধে জর্জরিত হতে হবে। শুধু মানুষ নয় বরং কেউ যদি জন্তু-জানোয়ার কিংবা বৃক্ষরাজির সাথেও অন্যায় করে তবে শেষ বিচারে আটকে যাবে। কারো দীর্ঘশ্বাস কিংবা কারো অভিশাপ- দায়ীদের স্বপ্নকে তছনছ করে দেবে।

 

অল্প হোক তবু সৎ পথে অর্জিত রুজি হোক। দুনিয়ায় ভোগ-বিলাসিতা যদি কাউকে অহংকারী করে, দাম্ভিক করে গড়ে তোলে তবে ত্যাগের পথে চলাই শ্রেয়। মানুষকে সম্পদ দেওয়া হয় পরীক্ষার জন্য। যিনি দিতে পারেন তিনি নিঃসন্দেহে কেড়েও নিতে পারেন।

 

অন্যায়ভাবে এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ সাময়িকভাবে দুনিয়ার রাজত্ব কায়েম করিয়ে দিতে পারে কিন্তু চিরস্থায়ী সুখ দেবে না। ভোগ সর্বদাই স্থূল সুখ সৃষ্টি করে যা দুঃখের চেয়েও ভারী ও ভয়াবহ। কারো মনঃকষ্টের কারণ হলে সব অর্জন ম্লান হতে থাকবে। যারা ভালো মানসিকতা পোষণ করে, চিন্তায় শুদ্ধতা ধারণ করে তাদের অল্প ইবাদতওবরকতময়। কোটি টাকা দান করার চেয়ে বরং এক টাকা ঋণ পরিশোধ করা রবের কাছে বেশিপছন্দনীয়।

 

কারো সমালোচনা করা, নিন্দা করা- এসব  পুণ্য কেটে নেয়। কারো বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা কিংবা কারো ক্ষতির চিন্তা করা নিজের পতনের ফাঁদ তৈরি করে। এই জীবনে কতভাবে মানুষের উপকার করা যায়। হাসিমুখে কথা বলা, ভালো আচরণ করা কিংবা উপকারী পরামর্শ দেওয়া- এসব সদকা তুল্য।

 

কারো ক্ষতি করে কেউ চিরস্থায়ীভাবে টিকে না। অন্যের ক্ষতি করা মানে পাপের লোন লওয়া। যতদিন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতের খতিয়ান বহন করবে ততদিনআমলনামা থেকে সওয়াব কাটা যাবে। অন্যের অশান্তি সৃষ্টি করে নামাজ-রোজা, দান-সদকাকবুলবিহীন যাবে। সুতরাং সর্বত্র সাবধান হওয়া আবশ্যক- কথা ও কাজে, আচরণ ও বিচরণে। মানুষ কত সহজে মুক্তি পেতে পারে অথচ লোভের মোহে তারা জীবনকে জটিল করে ফেলে। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির   সংযোগ না ঘটলেও যে রুহ্ সন্তুষ্ট তাকে তা ঐশ্বরিক মদদপুষ্ট।

 

রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক।

raju69alive@gmail.com

Exit mobile version