শাসন না শাস্তি: জাতির ভবিষ্যৎ কোন পথে?

 

 

শুনলে আপনার খারাপ লাগবে হয়ত কিংবা লেখককে কঠোর হৃদয়ের ভাববেন- তবুও বলি, বাংলাদেশের জনগণের জন্য মার মহৌষধ। এখানে ভদ্রতাকেদুর্বলতা মনে করা হয়। অনুরোধকে কৌতুকের মত শুনে, কতক্ষণ হেসে, সব উড়িয়ে দেয়। প্রত্যেকটি সেক্টরের দিকে তাকান- বুঝিয়ে বললেও বুঝবে না। রাস্তায় ট্রাফিকিং থেকে শুরু করে মসজিদে এবাদত- সর্বত্র কিছুই আমলে না নেওয়ার একটা পার্টি আছে। না বুঝে মানছে না- ঘটনা তেমনটাও নয়। জেনে শুনেই মানছে না- প্রমাণ করতে চাচ্ছে- তিনি একটা মহা হ্যাডম। আদর করে, মাথায় হাত বুলিয়ে এদেরকে ভালো কিছু বললেও শুনবে না। মার দেন- আগাগোড়া সোজা হয়ে যাবে। প্রমাণ চান?

 

দেশের একই জনগণ। স্বৈরাচারের আমলে সোজা থাকে। সেনাশাসনের সময়ে নড়াচড়া পর্যন্ত করে না কিন্তু তারাই সুযোগ ও স্বাধীনতা পেলেই অন্যের স্বাধীনতাকে বাঁশ দিয়ে ছেড়ে দেয়। বক্তার ওয়াজ থেকে শুরু করে রাস্তার ক্যানভাসার, মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন, কাউকে ঠিক দেখছেন? বলার স্বাধীনতা পেলে এরাএতকিছু বলে, যা শুনলে মনে হয় অসভ্যগুলো এতদিন চুপ করে ছিল কেমনে? ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দিন। ভণ্ডরা ভদ্র হয়ে থাকবে।

 

মারের ওপর ঔষধ নাই। কারা যেন বলেছিল শিক্ষার্থীদেরকে মারা যাবে না! ফলাফল পাচ্ছেন তো! ওরে দাদু, ঢাকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী আর ফরিদপুরের চরাঞ্চলের একজন শিক্ষার্থী- সমান কিংবা একই মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে না! তাদের মনের প্রকৃতিতেই ভিন্নতা আছে। আপনারা কার দিকে তাকিয়ে নীতি প্রণয়ন করেন কে জানে! দেশের সফলদের ওপর গবেষণা করুন। আচ্ছা, আমলাদেরকেই বিবেচনায় নিন। দেখবেন, এদের সিংহভাগ উঠে এসেছে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত জনপদ থেকে।  কেমনে? প্রাইমারি আর হাইস্কুলের শিক্ষকদের বেত্রাঘাত খেয়ে! বাবা-মায়ের কড়া শাসনে। যদি সে-সব না পেতো তবে অনেকেই জন্মভিটায় মুদির দোকান দিতো!

 

কোটি মানুষের মধ্যে একশ মানুষ উল্লুক হলে সকল মানুষের জীবনযাপনঅনিরাপদ হবে। ওই একশ অমানুষের মধ্যে নসিহত করলে হয়ত ১০ জন মানুষ হবে! বাকিরা? মহাশয়, মারের ওপর ঔষধ নাই। সাইজ করলেই সমাজ শান্ত হয়ে যাবে! আমি দুর্নীতি করছি? প্রমাণসহ ধরে কায়দা মত মার দিন। আমি তো আমি, আমার বংশের কেউ, পরিচিত কেউ আর দুর্নীতি করবে না, করতে সাহস পাবে না। ওরে ভাই, বুঝালেও সবাই বুঝবে না! গ্রাম বাংলায় ওয়াজ-নসিহত-কীর্তন কি কম হয়? প্রত্যেক ক্লাসেই তো ইসলাম ধর্ম আর হিন্দু ধর্ম বইটি অবশ্য পাঠ্য ছিল!  ভালো সবার সহ্য হয় না। কিছু মানুষ উলটা বুঝবেই! ওরা সবার শান্তি নষ্ট করবেই! এদেরকে দুদুদুদু করা বাদ দিন। শাল্টিং দিলে সাধুতে পরিণত হবে। অন্তত শীতনিদ্রায় থাকবে।

 

মার প্রচলনের কথায় খুব আহত হলেন! এই যে ভালো-মন্দ বুঝতেছেন, উচিত-অনুচিত শিখেছেন- ছোটবেলায় মার না খেলে, শাসন না পেলে গোরু হতেন। শিক্ষকের বেত কেড়ে নিলেন! মায়ের জুতা আর বাবার বকা বন্ধ করতে পেরেছেন? শাসন বজায় রাখুন। প্রজন্ম শিখবে। এই প্রজন্মের কজন খারাপ আর কতজন ভালো- কর্মকাণ্ড দেখে আন্দাজ করতে পারছেন? জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাচ্ছে- সেটা বুঝতে পারছেন? সর্বত্র সুশাসনফিরিয়ে আনুন। ভালো হবে। উপকার পাবেন। ছোটবেলায় মার না খেলে লেখক এখন নিয়ম করে গাঁজা খেতেন!

 

সন্তান মাত্র একটি/দুটি! আদর করেই কুল পান না আবার শাসন! দুটোই দরকার আছে। আপনি যেদিন এটার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন সেদিন হয়ত সংশোধনের সুযোগ নাগালের বাইরে চলে যাবে। সমাজের প্রতিনিধিত্বশীলব্যক্তিবর্গের কাছে যতদিন লাঠি ছিল ততদিনন্যায়বোধ উন্নত ছিল। শিক্ষকদের হাতে যতদিন বেত ছিল ততদিন শিক্ষা মানসম্মত ছিল। কেউ কারো ব্যক্তিগত শত্রু নয়। সমৃদ্ধ জীবনের জন্য, ন্যায়বোধজাগ্রতের জন্য শাসন দরকার। তবে অপশাসন কিংবা দুঃশাসন নয়। কর্তৃপক্ষ বুঝলে বদলাবে দেশ। নিরাপদ হবে জনপদ। ভালোর সামনে ভালো থাকা এবং মন্দের জন্য কঠিন হওয়া খুব জরুরি- বুঝেছেন।

 

রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক।

raju69alive@gmail.com

Exit mobile version