ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল পরিবার

জ্ঞান-গবেষণায় খ্যাতি অর্জন করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ ও গৌরবময় করবে।

মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

মানব জীবন রক্ষা ও জীবন উন্নয়নের জন্য শিক্ষা একটি মুখ্য হাতিয়ার। আবার শিক্ষা, নিজেদের মধ্যে ভাব-ধারণা,কৃষ্টি,সংস্কৃতি, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করার মাধ্যম এবং উত্তরসূরীদের নিকট ঐতিহ্য হস্তান্তর করার বাহন। শিক্ষার পরিণত ফল হল সভ্যতা, যা মানুষকে পশুত্বের স্তর থেকে মানব সত্তায় উন্নীত করে। শিক্ষা বিহীন মূর্খ লোক পশুর সমান ও নিকৃষ্ট প্রাণী। আর ইসলামী শিক্ষাই হচ্ছে সর্বোত্তম শিক্ষা। ইসলামী শিক্ষার প্রধান উৎস হচ্ছে- পবিত্র কোরআন ও রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে ইলম অর্জন এবং শিক্ষাদানকারীর জন্য অগণিত মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)।
সারাবিশ্বে বর্তমানে হতাশাগ্রস্থ মানুষের কছে যখন শান্তির নামে অশান্তিতে ভরে তুলেছে তখন বিশ্ববাসী আজ আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসালামী জীবন ব্যবস্থাকে মানার জন্য । তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসালমী অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আর এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইসলামিক স্টাডিজের ভূমিকা অগ্রগণ্য ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মাসে আরবি ও ফার্সি বিভাগ নামে যাত্রা শুরু হয়। তবে এর আগে “প্রাচ্য ভাষা” বিভাগের অধীনে ছিল। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে প্রফেসর ড. এম এ গফুর (১৯৭৭-১৯৮০) বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ড. এ এম শরফুদ্দীন (১৯৮০-১৯৮৩), প্রফেসর ড. এম এম আব্দুল গফুর চৌধুরী (১৯৮৩-১৯৮৬), প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রশিদ (১৯৮৬-১৯৮৯), ড. মুফিজ উদ্দীন (১৯৮৯-১৯৯২), প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক খতিবী (১৯৯২-১৭/০৯/১৯৯৫) পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগের নাম “আরবি ও ফার্সি” হলেও ফার্সি পড়ার মত কোন শিক্ষার্থী না থাকায় এই বিষয়ে কোন কিছু সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। ফলে বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ ফার্সি স্থলে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে পাঠদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির বৈঠকে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সর্বসম্মত সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে পেশ করা হয়। প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় “আরবি ও ফার্সি” অধীনে ১৯৮৮-১৮৮৯ সেশন আরবি খ হিসেবে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে ভর্তি করানো হয়। অনার্স ১ম বর্ষ ও ২য় বর্ষ আরবি “খ” নামে ইসলামিক স্টাডিজের মার্কশীট ও ফলাফল তৈরী করা হয়। বিভাগীয় শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় শিক্ষার্থীরা আরবি খ এর স্থলে ইসলামিক স্টাডিজ লিখা ও স্বতন্ত্র বিভাগ খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবী পেশ করেন। দাবী বাস্তবায়নের নিমিত্তে শিক্ষার্থীরা সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং,মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রভৃতির মাধ্যমে জোরালো আন্দোলন করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ১৮-০৯-১৯৯৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় “আরবি ও ফার্সি ” এর স্থলে “আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ” নামকরণ করা হয় এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীর সার্টিফিকেট দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক খতিবী (১৮/০৯/১৯৯৫-২৬/০৯/১৯৯৫) ০৯ দিন বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ড. এফ এম আমিনুল হক (২৭/০৯/১৯৯৫-১৯৯৮), ড. রফিক আহমদ (১৯৯৮-২০০১), ড. হাফেজ মুহাম্মাদ বদরুদ্দোজা (২০০১-২০০৪), ড. আ ক ম আব্দুল কাদের (২০০৪-২৫/০৫/২০০৫) পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২৬/০৫/২০০৫ তারিখ থেকে আরবি বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে “ইসলামিক স্টাডিজ ” নামে কলা অনুষদের অধীনে নব উদ্যোমে পথচলা শুরু করে। চট্টগ্রামের সূর্যসন্তান ড. আনোয়ারুল হক খতিবীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামিক স্টাডিজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার্থীদেরকে মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্মপরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ, সাহস,দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়টি শুধু মাদ্রাসা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। এটি স্কুলের বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সবাই সমভাবে পড়তে পারে। আল কুরআন ও তার প্রখ্যাত তাফসীর গ্রন্থাদি উলুমুল কুরআন,উলুমূল হাদীস, সিহাহ সিত্তাহ,মুসলিম বিশ্বের ইতিহাস, ফিকহ গ্রন্থাদি, ইসলামী অর্থনীতি,রাষ্ট্রনীতি,ইসলামে ব্যাংকিং পদ্ধতি, ইসলামের সমাজ, পরিবার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনীতি, হিউম্যান রাইটস, ইসলামিক বিধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইসলাম ও অন্যান্য মতবাদের তুলনামূলক আলোচনা ইত্যাদি বিষয় ইসলামিক স্টাডিজে পড়ানো হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন যারা।

প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক খতিবী (রহ):
বাংলাদেশের আরবী ও ইসলামী শিক্ষায় উজ্জ্বল নক্ষত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক খতিবী (রহ) একজন সফল শিক্ষাবিদ এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার পশ্চিম কলাউজান গ্রামের প্রসিদ্ধ খতীব পরিবারে জন্ম তাঁর। ১৯৭৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ফার্সী বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ক্রমাগতভাবে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ১৯৯২ সালে উক্ত বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব কৃতিত্ব সহিত নিবিড়ভাবে পালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের এই সূর্যসন্তানের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়কাল ছিলো ২০০৫-২০০৮ পর্যন্ত। ২০১২ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রভুর ডাকে না ফেরার দেশে চলে যান।তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ পরিবার শুধু একজন শিক্ষককে নয় একজন অভিভাবককেও হারিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে এই পরিবার আজও শোকাহত।
প্রফেসর ড. এ এফ এম আমিনুল হক :
প্রফেসর ড. এ এফ এম আমিনুল হক প্রচার বিমুখ সাদা-সিধে জীবনযাপনকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি বিভাগের নিবেদিত প্রাণ ওস্তাদ হিসেবে সর্বত্র সমাদৃত ও সম্মানিত। তিনি একজন উঁচুমানের গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ। গবেষনাধর্মী তাঁর রচিত অসংখ্য প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নাল ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সেমিনারে কি-পেপার উপস্থাপন করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি ২০০৮-২০০৯ পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সৎ, কর্মনিষ্ঠ, বিনয়ী, নম্র,সদা হাস্যোজ্জ্বল অথচ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রফেসর ড. এ এফ এম আমিনুল হক চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অহংকার ও বর্তমান তরুণ প্রজন্মের প্রেরণার উৎস,যা ভবিষ্যতে আরও সাহসী,আত্মপ্রত্যয়ী ও উদ্যোগী সুনাগরিক তৈরির মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

প্রফেসর ড. হাফেজ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা :
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলাধীন বড়হাতিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মোজাফফার আহমদ মাতা মরহুমা মোহসেনা খাতুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে লেকচারার পদে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত দক্ষতার সহিত বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান পর্যন্ত কর্মরত আছেন। প্রফেসর ড. হাফেজ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা একজন উঁচুমানের গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ। গবেষনাধর্মী তাঁর রচিত অসংখ্য প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নাল ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ:
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ রামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, অনুবাদক ও সাহিত্যিক হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। লেখক হিসেবে আহসান সাইয়েদ নামে পরিচিত তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি ১৯৮৯ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তিনি ২০১২-২০১৫ পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সমাদৃত ব্যক্তিত্ব। এ যাবত তাঁর লিখিত ১০টির বেশী গল্প,কবিতা,উপন্যাস, নাটক,সংগীত ও ইসলামী গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত ৪টি ক্যাসেট নির্দেশক ও উপস্থাপকের ভূমিকায় কাজ করেছেন যেগুলো দর্শক মনে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ইসলামী ভাবধারা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ২০০৩ সালে “নবছন্দ” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশজুড়ে রয়েছে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে যোগদান করেন। গত ৪ জানুয়ারী ২০১৯ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন।

প্রফেসর ড. আহমদ আলী:
বাংলাদেশের প্রথম সারি ইসলামী লেখক ও গবেষকদের অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আহমদ আলী স্যার। তিনি একজন সফল আরবীবিদ, শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক। একজন সুক্ষ্ম বিশ্লেষকও বঠে। দক্ষিন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। তিনি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েও প্রাধান্য দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে মার্চ ১৯৯৬ সাল হতে মার্চ ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই যুক্ত হন। তিনি ১৯৯৯ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে এবং ২০০৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০০৮ সালে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি ২০১৫-২০১৬ পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান পর্যন্ত কর্মরত আছেন।

প্রফেসর ড. এনামুল হক:
প্রফেসর ড. এনামুল হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি ২০০২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে সর্বপ্রথম প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তিনি ০১ জানুয়ারী ২০১৭-ডিসেম্বর২০২০ পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বহুমুখী প্রতিভাধর একজন জ্ঞানপিপাসু শিক্ষাবিদ। বিদগ্ধ গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে জননন্দিত একজন মানুষ গড়ার কারিগর। দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তানের মূল্যবান তথ্য সম্বলিত অসংখ্য গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নাল ও ম্যাগাজিনে পাবলিশ হয়েছে।

প্রফেসর ড. ইলিয়াছ সিদ্দিকী:
প্রফেসর ড. ইলিয়াছ সিদ্দিকী ০১ মার্চ ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার পদুয়ার তেওয়ারীখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৪ সালে চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তিনি ২০০৬ সালে সহকারী অধ্যাপক ২০১২ সালে সহযোগী অধ্যাপক আর ২০১৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৫ সালে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১৬-২০১৮ পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ২০১৮ সালে ডীন পদে পদোন্নতি লাভ করে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে পুনরায় যোগদান করে ২০২০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সদস্য বর্তমানে ১৭ জন প্রফেসর ড.আ ন ম আব্দুল মাবুদ, প্রফেসর ড. মমতাজ কাদেরী, প্রফেসর ড. নুরুল আমিন নূরী , প্রফেসর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন , এনামুল হক মুজাদ্দেদী ও ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল হক, এরা দু’জন সহযোগী অধ্যাপক। মোহাম্মদ নছিম, ড. মুহাম্মদ মানজুরুর রহমান এবং মুহাম্মদ আবুল হোসেন, এরা তিনজনেই সহকারী অধ্যাপক।
তাছাড়া এই বিভাগে প্রায় ৭০০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। ২০০৯ সালে বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের প্লাটফর্ম এর জন্য আমি অধম নিজেই স্যোসাইল মিডিয়া Islamic Studies CU (ইসলামিক স্টাডিজ চবি) নামে ফেইসবুক গ্রুপ Islamic studies cu নামে ফেইসবুক পেইজ খুলেছিলাম। এর আগে এই রকম প্লাটফর্ম কোন স্যোসাইল মিডিয়ায় কোন আইডি কিংবা গ্রুপ ছিলো না। তবে ব্যাচ ভিত্তিক অনেক গ্রুপ ছিলো এখনো আছে। পরবর্তীতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ আরো বড় পরিসরে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এবং বিভাগীয় শিক্ষকদের নিয়ে “ইসকপ Islamic Studies Communication Platform (ISCP)” নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপ খোলা হয়। ইতোমধ্যে এটিই বিভাগের অফিসিয়াল গ্রুপ হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। একইসাথে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বহুদিনের প্রত্যাশিত ” ইসলামিক স্টাডিজ এ্যালামনাই,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (Alumni: Islamic Studies Alumni Association, CU)” এবং অধ্যায়নত বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে “ইসলামিক স্টাডিজ সমিতি (Islamic Studies Samity)গঠন করা হয়।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বিভাগ। খুবই অল্প সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ হতে এই বিভাগটি জ্ঞান-গবেষণায় খ্যাতি অর্জন করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ ও গৌরবময় করবে।

লেখক :
সদস্য, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।
মিডিয়া সম্পাদক, ইসলামিক স্টাডিজ এ্যালামনাই এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Exit mobile version