রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: বিশেষায়িত রংপুর শিশু হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম শুরু নিয়ে অনিশ্চিত প্রহর গুনছে রংপুরসহ এ অঞ্চলের মানুষ। ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালটি নির্মাণের ৩ বছর অতিবাহিত হলেও শুরু হয়নি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রংপুর শিশু হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা আলোর মুখ দেখবে কবে? আড়াই মাস আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালটি উদ্বোধন করে গেলেও এখনো স্বাস্থ্য সেবা শুরু হয়নি। বর্ণিল সাজে সজ্জিত রংপুর শিশু হাসপাতাল ভবনে যেন নির্জন এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আবাসিক চিকিৎসক, ৪ জন নার্স এবং নিরাপত্তা প্রহরীরা কর্মহীন অলস সময় কাটাচ্ছেন। হাসপাতাল চত্ত্বরে শিশুদের জন্য নির্মিতি বিভিন্ন খেলার রাইডে জমে আছে ধুলার আস্তর। প্রায় ২ কোটি মানুষ অধ্যুষিত রংপুর বিভাগের শিশুদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্রে পুরাতন সদর হাসপাতাল চত্ত্বরের প্রায় ১ দশমিক ৭৮ একর জমির উপর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৩ বছর আগে রংপুর শিশু হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ স¤পন্ন করা হয়। করোনাকালে হাসপাতালটিকে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু করোনার প্রার্দূভাব কেটে গেলেও অজ্ঞাত কারণে শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অবশেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেশ জাঁকজমকভাবে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে যে শিশু হাসতালটির স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম আলোর মুখ দেখবে। তবে মানুষের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংযোগ কিংবা জনবল নিয়োগ করে শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। রংপুর শিশু হাসতালটি চালু হলে এ অঞ্চলের শিশুরা বিনামূল্যে জটিল অপারেশনসহ বিশেষায়িত উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে। কিন্তু হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় রংপুর অঞ্চলের শিশুদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমানে এ অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবলসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণে বেশ নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। রংপুরের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তিনতলা বিশিষ্ট মূল হাসপাতাল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ বর্গফুট। পুরো ভবনের মোট আয়তন ৬২ হাজার ৮৪৬ বর্গফুট। হাসপাতালের প্রথম তলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের চেম্বার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যবরেটরির ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও ব্রোন ইউনিট এবং তৃতীয় তলায় শিশু ওর্য়াড এবং কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও চিকিৎসক, স্টাফ ও নার্সদের জন্য ছয়তলা আবাসিক ভবন, সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার তিনতলা ভবন, গ্যারেজ ও ড্রাইভার কোয়ার্টার দুইতলা ভবন, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম, বিদ্যুৎ সাব স্টেশন, পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ সড়কসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিশু হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল পাওয়া গেলেই হাসপাতালটি চালু করা হবে। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, রংপুরে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসতালটির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং জনবলের চাহিদা র্নিধারণ করে মন্ত্রনালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।