রহমত শেষে চলছে মাগফিরাতের দশক। এই দশকে তওবা ইস্তিগফারে ক্ষমা পাওয়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ। মহান আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। তিনি বান্দার ভুলত্রুটি, পাপতাপ, যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা ও মার্জনা করেন এবং দয়া করুণা বর্ষণ করেন।
আল্লাহ বান্দাকে নানানভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।” তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।
বান্দা ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করলে আল্লাহ আজাব দূর করে দেন। কোরআনের বর্ণনা, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)। মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে তার মধ্যে পাপ-পুণ্যের সম্ভাবনা দিয়ে রেখেছেন। তাই দোষে-গুণে মানুষ।
কোরআনে রয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাতে (মানব সত্তায়) অপরাধ প্রবণতা ও তাকওয়া বা সতর্কতার জ্ঞান দান করলেন।’ (সুরা শামছ, আয়াত: ৮)। ‘আর আমি তাকে (ভালো-মন্দ, সত্যাসত্য, ন্যায়-অন্যায়) দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছি (যাতে সে সঠিক পথ চিনে চলতে পারে)।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ১০)
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী, তাদের মাঝে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন-তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি)
মহান আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে (নবী মুহাম্মদ সা.)! আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯)।
হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক সত্তর বার অপরাধ করে এবং সত্তর বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ প্রিয় নবীজি (সা.) দৈনিক সত্তর বারের অধিক বা এক শ বার ইস্তিগফার তথা ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী-রাসুল ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কারণ, তওবা ও ইস্তিগফার স্বতন্ত্র ইবাদত; এতে আল্লাহ খুশি হন।
তওবা ও ইস্তিগফারের জন্য কোরআন ও হাদিসে বহু দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দোয়াটি হচ্ছে সাইয়েদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমার শ্রেষ্ঠ আবেদন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল-সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাতে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’
সাইয়েদুল ইস্তিগফার হলো: ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাততু, আউযু বিকা মিন শাররি মা ছনাতু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিযাম্বি; ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্ -যুনুবা ইল্লা আন্তা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সব অপরাধ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন; আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি: ৬৩২৩ ও মুসলিম)।