কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটককে গণধর্ষণের অভিযোগে যে মামলা হয়েছে, তা তদন্ত করতে গিয়ে বিভ্রান্তিকর নানা তথ্য সামনে আসছে। অভিযোগকারীদের দেওয়া তথ্যে বড় ধরনের কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা। এতে তৈরি হয়েছে রহস্য, সেই জট খুলতে চেষ্টা করছেন তারা।
পুলিশের দাবি, স্বামী-সন্তানসহ ওই নারী কক্সবাজার এসেছেন প্রায় তিন মাস আগে। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে ছিলেন। এ ছাড়া মামলার মূল আসামি আশিক তাদের পূর্বপরিচিত। জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী বিষয়টি শিকার করে নিয়েছে
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শনিবার সকাল পর্যন্ত মামলার ৭ আসামির কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসামিদের ধরতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, ওই নারী গত বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। তারা ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকালে যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কাধাক্কি হয়। সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে কয়েক যুবক তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। আর তিন যুবক আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নিয়ে গলফ মাঠের পেছনের নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ওই নারীকে নেওয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের একটি হোটেলে। সেখানে তাকে ঘটনা কাউকে না জানানোর হুমকি দেওয়া হয়। এর পর হোটেলকক্ষের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা চলে যায়।
মামলায় আশিক, বাবু, ইসরাফিল ইসলাম জয়া ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটনসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ যেসব তথ্য পেয়েছে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই এজাহারের সঙ্গে মিলছে না। অভিযোগকারী নারী ও তার স্বামীকে পৃথক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য পেয়েছে।
সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, মামলার সব কাগজ ট্যুরিস্ট পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রুহুল আমিন মামলাটি তদন্ত করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, দু-একদিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও তার স্বামীকে পৃথকভাবে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ওই নারী তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তারা অনেক হোটেলে ছিলেন। কী কারণে এসব হোটেলে ছিলেন, কক্সবাজারে তাদের আগমনের কারণ, ব্যয়বহুল একটি শহরে কিভাবে কাটিয়েছেন, তাদের সাথে কার কার যোগাযোগ ছিল- এসব বিষয় সামনে রেখে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘কক্সবাজার সদর আদালতে ওই নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। যেহেতু ওই নারী ও তার স্বামীর নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে, সে কারণে দুজনকে আমাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। ওই নারী কক্সবাজার সদর মডেল থানায় আরও দুবার অভিযোগ করেছেন গত ৩ মাসে।’
ওই নারীর বরাত দিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘কক্সবাজার শহরের পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে বুধবার রাতে র্যাব তাকে উদ্ধার করে। এর পর কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের রিসোর্টে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।’