পশ্চিমবঙ্গে কয়লা পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার কাছ থেকে মুখ বন্ধ রাখতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ইসিএলের কর্মকর্তারা। লালাকে জেরা করে এমন তথ্য পেয়েছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। এদিকে শুক্রবার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করার পর আরও এক ইসিএলের সাবেক জেনারেল ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সবমিলিয়ে এই মামলায় ৮ ইসিএলের কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
গত একুশের বিধানসভা ভোটের আগে সামনে আসে কয়লা পাচার কাণ্ডের কথা। রাজ্যে বেআইনিভাবে কয়লা পাচার সংক্রান্ত তদন্তে নেমে একাধিক প্রভাশালীকে চিহ্নিত করেন গোয়েন্দারা। বুধবারই গ্রেফতার করা হয় ইসিএলের সাবেক ও বর্তমান জিএমসহ ৬ কর্মকর্তাকে।
জানা গেছে, ইসিএলের এই কর্তারা কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত লালার কাছ থেকে নিয়মিত মোটা টাকার ঘুষ পেতেন। এই টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে তার তালিকা গোয়েন্দারা পেয়েছেন। তার থেকেই জানা যাচ্ছে, তার এই টাকা দিয়ে জমি, বাড়ি,গাড়ি ও গয়না কিনতেন। প্রতি মাসেই লালার কাছ থেকে এই টাকা তাদের কাছে গেছে।
লালার কাছ থেকে পাওয়া টাকা ইসিএল কর্তারা ব্যাংকের অ্যাকউন্টে রাখতেন না। তা দিয়ে সম্পত্তি কিনতেন। এই টাকার বিনিময়ে তারা কয়লা পাচার নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতেন। লালার লোকজনদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতেন। ইসিএল যেসব জায়গায় বিধি-নিষেধের কারণে কয়লা তুলতো না। সেখানে লালার লোকজনরা ইসিএল কর্তাদের ঘুষ দিয়ে বেআইনি ভাবে কয়লা তুলত। আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় বেআইনী ভাবে খনি থেকে কয়লা তুলে পাচার করত।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ইসিএলের কর্মকর্তাদের পদ অনুযায়ী এই ঘুষের টাকার পরিমাণ ঠিক হতো। ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজার সবচেয়ে বেশি টাকা পেতেন। তিনি পেতেন বছরে ৭-৮ কোটি টাকা পেতেন। লালার থেকে তারা যে টাকা নিয়েছেন তার পরিমাণ জানতে ইসিএল কর্তাদের অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা।
শুক্রবারই নিজাম প্যালেসে ইসিএলের আর এক সাবেক জিএম সুভাষ মুখোপাধ্যায় তলব করে সিবিআই। জেরা চলাকালীন তার কথায় অসঙ্গতি থাকার কারনে তাকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, বাকি ধৃতদের মতো সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরও ভূমিকা ছিল কয়লা পাচার কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালার ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
এদিকে, কয়লা পাচার কাণ্ডে ফের হাজিরা এড়ালেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটক। এই নিয়ে পরপর চারবার তাকে সিবিআই তলব করলেও একবারও ইডি দফতরে হাজিরা দেননি তিনি। এদিন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকেও তলব করা হয়েছিল। তিনিও হাজিরা দেননি।
ইডি সূত্রে খবর, শুক্রবার বেলা ১১টার মধ্যে দিল্লির ইডির দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল তাদের। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও হাজিরা দেননি তারা। এবারই শেষ নোটিস দেওয়া হয় মলয় ঘটককে। এবার হাজিরা না দিলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুক্রবার তিনি হাজিরা এড়ানোয়, ইডির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ৭ ফেব্রুয়ারিও মলয় ঘটককে তলব করা হয়েছিল। তার আগে ২ ফেব্রুয়ারিও হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল ইডি। কিন্তু বারবারই করোনার কারণ দেখিয়ে তিনি হাজিরা এড়িয়ে যান।
এদিকে একাধিক অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর নাম জানতে পেরেছে ইডি। তাই তাকে এদিন তলব করা হয়। কেন গেলেন না, এপ্রশ্নের জবাবে সুশান্ত জানিয়েছেন, তিনি মিটিং-এর জন্য কলকাতাতেই আছেন। এরকম কোনও নোটিস তিনি পাননি।