সাবিহা বেলকনির এক কোনে চুপচাপ বসে নিজের জীবনের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত কিছুতেই যেনো সে নিজের জীবনের হিসাব মেলাতে পারছে না, বরাবরের মতো সে ব্যর্থ। কেনো বার বার তার সাথে একই ঘটনা বার বার ঘটে চলেছে,, কেনো তার অতি কাছের মানুষগুলো চলে যায় তাকে নিসঙ্গ করে দিয়ে।
***চলে গেছে ৪ দিন,,
সাবিহা আর অফিস যায় নি। যাবেই বা কিভাবে অফিস থেকে রিজাইন লেটার দেওয়া হয়েছে সাবিহাকে (অফিস থেকেই তাকে রিজাইন দিতে বলা হয়েছে)
সব হারাতে হারাতে সাবিহা যেনো নিঃস্ব হয়ে গেছে,, না এই কয়েকদিনে রিদিতা খবর নিয়েছে আর না রাতিয়ান। ( যে মানুষটা সকাল বিকাল খবর রাখতো সেই মানুষটারও কোনো খবর নেই রিদিতাও আমায় একা করে দূরে চলে গেলো)
রুপসাঃ সাবিহা এখানে কেনো বসে আছো তুমি রুমে আসো। আর সব সময় কেনো বেলকনিতে থাকো তুমি? (রাতে বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা যেনো সাবিহার নিত্যদিনের কাজ হয়ে গেছে )
রুপসার কথায় সাবিহা ভাবনা থেকে বের হয়,,
সাবিহাঃ হুম এমনি ,, তুমি কি অফিস যাবে এখন?
রুপসাঃ হুম, সাবধানে থেকো আর হ্যা দরজা লাগিয়ে দিও কেমন আসি। চলে যেতে নিলে সাবিহা ডেকে উঠে,
সাবিহাঃ রুপসা ,
রুপসা ফিরে তাকিয়ে বলে, হুম বলো
সাবিহাঃ কখন আসবে আজকেও কি অনেক রাত হবে।
না মানে সিমা আপু তো নেই একা বাড়ীতে থাকতে,,( ইতস্তভোধ করে বলে)
রুপসাঃ জানোই তো সাবিহা অফিসে অনেককাজের চাপ ফিরতে রাত হবে।
সাবিহাঃ ও আচ্ছা,,, আচ্ছা তুমি যাও তোমার লেট হয়ে যাচ্ছে,
রুপসাঃ আচ্ছা তুমি ব্রেকফাস্ট করে নিও আর সাবধানে থেকো বায়।( রুপসা অফিস চলে যায়)
(গত ৪ দিন যাবৎ রুপসা কাজে ভিষণ ব্যাস্ত অফিস থেকে আসতে অনেক রাত হয়ে যায় এদিকে সিমা ও নিজের বাড়ীতে গেছে সাবিহাকে বাসায় একা থাকতে হয় আর সে একা থাকতে ভিষণ ভয় পায়)
রুপসা চলে যাওয়ার পরেই সাবিহা কেদে উঠে আর বলতে থাকে আমি আর পারছি না মা আমায় নিয়ে নাও তোমার কাছে , আমায় কেনো একা রেখে তোমরা চলে গেলে।
কয়েক দিনেই মেয়েটা কেমন হয়ে গেছ ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করে না ঘুমায় না মাঝরাতে উঠে কান্না করে রাতিয়ানের কথা মনে করে সে অঝরে কেদে যায়।
সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পেলো না,,
আর যে মানুষটার মাঝে বাবার ছায়া দেখতে পেতো তাকেও হাড়িয়ে ফেললো।
কান্না করতে করতে বেলকনির কোনেই বসে থাকে,,,,
______________________
দুপুর ২ টা এখনো সাবিহা বেলকনিতেই বসে সে ব্রেকফ্রাস্ট পর্যন্তও করেনি কলিংবেলের শদে সে বেলকনি থেকে রুমে চলে আসে, রুমে এসে ভাবতে থাকে এই সময়ে কেউ তো আসার কথা না,, দরজা খুলে রুপসাকে দেখতে পায়।
সাবিহাঃ রুপসা তুমি?
রুপসাঃ হুম আজকে ছুটি নিয়ে নিলাম ভাবলাম আজ তোমার সাথ কিছুক্ষণ থাকি।
সাবিহাঃ ও আচ্ছা,
আচ্ছা তুমি যাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।
রুপসাঃ হুম চলো,ওহ, সাবিহা তুমিও ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও আজকে তুমি আর আমি দুজনে ঘুরতে যাবো আর প্লিজ না করতে পারবা না।
সাবিহাঃ কই যাবো রুপসা আমি কোথাও যাবো না ভালো লাগছে না।
রুপসাঃ( চোখ রাঙিয়ে বলে) সাবিহা তোমার একটা কথা ও শুনতে চাই না তুমি আমি ঘুরতে যাবো ব্যাস। এখন যাও রেডি হও বলে (সাবিহাকে জোড় করে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয়)
____
রুপসা সাবিহা ফ্রেশ হয়ে নেয়, রুপসা হালকা সাজুগুজু করছে আর সাবিহা পাশেই বসে আছে,
রুপসাঃ আচ্ছা সাবিহা এভাবে বসে আছো কেনো রেডি হবা তো নাকি?
সাবিহাঃ আমি তো রেডি রুপসা আর কি রেডি হবো।
রুপসাঃ তুমি কোথায় রেডি হয়ছো শুধু তো জামাটা পড়ছো, (সাবিহা খয়েরি কালারের একটি গাউন পড়েছে আর কমর পর্যন্ত চুলগুলো আলতো করে বেনুনী করেছে )
দেখি এদিকে আসো বলে রুপসা সাবিহাকে জামার সাথ ম্যাচিং করে হালকা খয়েরি লিপস্টিপ আর কাজল দিয়ে দেয় । ব্যাস আর কিছু করতে হবে না খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
নাও চলো এখন বের হই।
সাবিহাঃ কিন্তু আমরা কোথায় যাবো রুপসা।
রুপসাঃ আহ সাবিহা আগে চলো পড়ে দেখতেই পারবে
(দুজন মিলে বের হয়ে পড়ে)
__________________________
সাবিহাদের রিকশা এসে থামে একটি বাসার সামনে, রিকশা থেকে নেমেই সাবিহা দেখে তারা রাতিয়ানদের বাসার সামনে
(সে আৎকে উঠে রুপসাকে বলে উঠে)
সাবিহাঃ রুপসা আমরা এখানে কেনো আসলাম,
আমি এখনি বাসায় চলে যাবো । আংকেল আমায় দেখলে খুব কষ্ট পাবে রুপসা আমি চাই না আংকেল আমার জন্য কষ্ট পাক।
আমি আবার আংকেলকে আমার থেকে দুরে সরে যেতে দেখতে পারবো না রুপসা।( বলেই সাবিহা উলটো হাটে সাবিহা কিন্তু রুপসা হাত ধরে নেয় )
রুপসাঃ দেখো আমি জানি না রাতিয়ান স্যার কেনো তোমায় এখানে আসতে বলেছে শুধু বলেছে তোমার সাথে স্যারের নাকি কিছু কাজ ছিলো মানে কিছু পেপারস এ নাকি তোমার সাইন লাগবে ।
চলো ভিতরে চলো বলে দুজন গেইটের ভিতর চলে যায়,
( আর সাবিহা ভাবতে থাকে বাসাটা কি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে আচ্ছা এই বাড়ীতে কি কোনো অনুষ্ঠান আছে।
স্যারেরই বা আমার সাথে কিসের কাজ ,, কিসের সাইন আচ্ছা স্যার কি আমার সাথে ডিবোর্স করতে চায়ছে ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠে সাবিহার। ডিবোর্স তো চায়তেই পারে আমি তো তার যোগ্য না আমার উচিত স্যারের জীবন থেকে সরে যাওয়া আমাদের রেজিস্টি তো স্যারের জেদের কারনে হয়েছে হয়তোবা স্যার এখন মুক্তি চাইছে আমার থেকে )
____________
সাবিহা, রুপসা বাসার সদর দরজায় এসে দাড়ায় সাবিহার পা যেনো থেমে গেছে তার কেমন যেনো কষ্ট লাগছে চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে
আরে সাবিহা চলো না দাড়িয়ে পড়লে কেনো বলে দরজা হালকা করে ধাক্কা দিয়ে হাত টেনে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা পারাতেই সিড়ি থেকে হুংকার দিয়ে কেউ বলে উঠে, তুমি, তোমার সাহস কি করো এভাবে আমার বাসায় প্রবেশ করার?
সাবিহা ভয় পেয়ে চট করে ভিতরে সিড়ির দিকে তাকায়,
সিড়িতে সিরাজ চৌধুরীকে দেখতে পায় সাবিহা সিরাজ চৌধুরীকে দেখে।
সিরাজ চৌধুরী সিড়ি দিয়ে নেমে ড্রয়িংরুমে এসে চোখ পাকিয়ে বলে ধমকে বলে উঠে,
তোমার সাহস তো কম না, তুমি আমার বাসায় এভাবে আসার সাহস পাও কোথায়?
সাবিহার দৃষ্টি মেঝেতে সীমাবদ্ধ সে মেঝের দিকে তাকিয়ে অঝরে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে,,,,
Post Views: 247
Like this:
Like Loading...
Related