চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহতের রেশ না কাটতেই তার পরের দিন রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে শিরিণ ম্যানশনে বিস্ফোরণে ৩ জন নিহত হন। এ দুটি ঘটনা ঘটে চলতি সপ্তাহের শনি ও রোববার। বিস্ফোরণ দুটির ভয়াবহতায় হতবাক দেশের নিরিহ মানুষ। কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
কিন্তু তাদের সেই ঘোর না কাটতেই পবিত্র শবেবরাতের দিন মঙ্গলবার বিকালে পুরান ঢাকার কুইন স্যানিটারি মার্কেটে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। যা ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের আরাও দুটি ভবন। বাদ পড়েনি রাস্তায় থাকা যানবাহন ও পথচারীরা। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত হন ১৯ জন।
আহত শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩০ জন। এদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সার্বিক এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কেন ঘটছে এ ধরনের বিস্ফোরণ। যদিও ঘটনাটি নাশকতা না দুর্ঘটনা সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত নন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে নীতিমালা মানা হচ্ছে না। নির্মাণে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের দিকে নজর দেওয়া হয় না। ঢাকার গ্যাসলাইনগুলো জরাজীর্ণ। এর সঙ্গে রয়েছে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। এ খোঁড়াখুঁড়ির সময় মাটির নিচের লাইনগুলো প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে লিকেজ তৈরি হয় এবং গ্যাস বের হয়। কর্তৃপক্ষগুলো যেমন কোনো তদারকি করছে না, তেমনি ঝুঁকি রোধে কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না।
গ্যাস লিকেজ বন্ধে তিতাসকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা রোধে বিএসটিআই, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। এদিকে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা অনেকে মনে করেন, নিরাপদ পথে নির্গমণের ব্যবস্থা না থাকায় স্যুয়ারেজ লাইনের গ্যাস বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বদ্ধ জায়গায় এ গ্যাস জমে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল।
অথচ সচেতনতামূলক তৎপরতা না থাকায় সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে অন্ধকারেই রয়ে গেছে। বড় দুর্ঘটনার পর এ নিয়ে সতর্ক হলেও কিছুদিন গেলেই পুরোনো উদাসীনতা চোখে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরের তরল বর্জ্য পরিবহনের জন্য যে নর্দমা বা স্যুয়ারেজ লাইন আছে, তাতে বিভিন্ন জৈবিক পদার্থের পচনের ফলে হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়াসহ আরও কিছু কিছু গ্যাস তৈরি হয়, যাকে বলা হয় ‘স্যুয়ার গ্যাস’। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে স্যুয়ারেজ লাইনের ত্রুটির কারণে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। স্যুয়ার গ্যাস নিরাপদ পথে নির্গমনের জন্য স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগ স্থলের ম্যানহোলের ঢাকনায় বেশ কয়েকটি ছিদ্র রাখা হয়। ড্রেনের কংক্রিটের স্লাবেও কিছু দূর পর পর ফুটো থাকে।
এছাড়া বাসাবাড়িসহ সব ধরনের স্থাপনার স্যুয়ারেজ লাইনের গ্যাস নির্গমনের জন্য আলাদা পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। তবে কোনো কারণে নির্গমনের এসব পথ বন্ধ হয়ে গেলে পয়োনালা থেকে নির্গত গ্যাস অনেক সময় শৌচাগারের পাইপ দিয়ে ওপরে উঠে কোনো স্থানে জমতে পারে। যা বদ্ধ জায়গায় তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। এতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রসায়নবিদরা জানান, হাইড্রোজেন সালফাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি বর্ণহীন, পচা ডিমের গন্ধযুক্ত গ্যাস, এটা বাতাসের থেকে ভারী, বিষাক্ত, ক্ষয়কারক, দাহ্য এবং বিস্ফোরক পদার্থ। জলাশয় এবং স্যাঁতসেঁতে স্থানে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জৈব পদার্থের ব্যাকটেরিয়া ভাঙনে হাইড্রোজেন সালফাইড উৎপন্ন হয়। আগ্নেয়গিরীর গ্যাসে, প্রাকৃতিক গ্যাসে, কূপের জলে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এটি বাতাসের মিশ্রণে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
অন্যদিকে মাটির নিচে বড় গর্তও বিপজ্জনক গ্যাসের উৎস হয়ে উঠতে পারে। যা বিভিন্ন সময় বিস্ফোরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর আফতাব আলী শেখ বলেন, মাটির নিচে গর্ত বদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকলে তার ভেতর নানা ধরনের ক্ষতিকারক বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। সেখানে অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইডসহ সালফারের অন্যান্য গ্যাস, মিথেন, এমনকি বিষাক্ত কার্বন মোনোক্সাইড তৈরি হতে পারে। বদ্ধ থাকার ফলে এসব গ্যাস ক্রমশ ঘন হতে থাকে এবং সেই সঙ্গে অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হতে থাকে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি বাস কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে সিদ্দিক বাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে হতাহাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে ছুটে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা। পাশাপাশি মাঠে নামানো হয় র্যাব ও পুলিশের বোম ডিস্পোজাল টিমের সদস্যদের। তবে কি কারণে এ বিস্ফোরণ তা এখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোম ডিস্পোজাল টিমের ধারণা ঘটনাটি ভবনের বেজমেন্টে ঘটতে পারে। তবে ভবনের ধ্বংসস্তূপ, আহত ও নিহত হওয়ার ধরন দেখে বোমা ডিস্পোজাল টিমের প্রাথমিক ধারণা, ভবনের বেসমেন্টের বদ্ধ কোনো কক্ষে গ্যাস জমে সেটি ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হয়েছিল। সেখানে যে কোনো উপায়ে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য পাঁচটি উপায়ে গ্যাস জমতে পারে বলে মনে করছে তারা। সেগুলো হচ্ছে, ভবনের মাটির নিচে পানির ট্যাংক থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; দুটি ভবনের মাঝখানে একটি সেপটিক ট্যাংক ছিল, সেখান থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে; বিচ্ছিন্ন হওয়া কোনো গ্যাসের লাইন থেকে গ্যাস জমতে পারে বা দেয়ালে মিথেন গ্যাস জমে থাকতে পারে; পয়োনিষ্কাশন লাইনের পাইপ লিকেজ হয়ে গ্যাস জমতে পারে এবং ভবনে থাকা বড় জেনারেটর থেকেও কোনোভাবে গ্যাস জমতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিম্পোজাল টিমের পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রাম ও সিদ্দিক বাজারের ঘটনায় এন্ট্রি টেরোরিজম ইউনিটের দুটি পৃথক টিম কাজ করছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যমতে, সীতাকুণ্ডের সীমা রি-রোলিং মিলের অক্সিজেন প্লান্টের ভেতরে অনুমোদনহীন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার ছিল। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের জন্য এসব সিলিন্ডার দায়ী হতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান বলেন, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সীমা অক্সিজেন প্লান্টে ‘অক্সিজেন’ ছাড়াও অনুমোদনহীন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার ছিল। এগুলো বিস্ফোরণের জন্য দায়ি কিনা সেটি তদন্ত করে জানা যাবে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানান, অক্সিজেন প্লান্ট থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সেসব আলামত পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ অক্সিজেন প্লান্টের গ্যাস সেপারেশন কোলাম যেটি, সেখান থেকেই এ বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে। তবে এটির অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে— বলছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের জাহাজগুলো কাটার জন্য গ্যাস ও অক্সিজেনের প্রয়োজন। আয়রন এবং স্টিলের অংশগুলো কাটার জন্য, শ্রমিকরা অক্সিজেন জ্বালানি মশাল ব্যবহার করেন। লোহা বা স্টিলের মতো ধাতু পোড়াতে আদর্শ উপায় হিসেবে এটি একটি গুঁড়োতে পিষে, কোনো অক্সিজায়ার মধ্যে মিশ্রিত করা হয়— যাতে এটি তাপ এড়াতে না পারে। এরপর একটি উচ্চ তাপমাত্রার ইগনিশন ডিভাইস প্রয়োগ করে ধাতুকে পোড়ানো হয়।ওভার হিটের কারণে গ্যাসের সিলিণ্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে।
অক্সিজেনের এসব সিলিন্ডার মূলত জাহাজ কাটা শিল্পে ব্যবহূত হয়। প্রোপেন, বুটেন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস তরল বা সংক্রামিত অক্সিজেনের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় যা অক্সিজায়ার হিসাবে কাজ করে। অক্সিজায়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিস্ফোরকের মতো আচরণ করে। ইস্পাত ও রি-রোলিং শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে রডের চাহিদা গড়ে ৮০ লাখ টন।
এর অধিকাংশই তৈরি হয় রি-রোলিং সেক্টর থেকে। আমাদের দেশে আকরিক বা স্ক্র্যাপ থেকে লৌহার এ বাড়তি চাহিদা মেটানো হয়। লৌহা দ্বারা প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরির জন্য লৌহাকে গলিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দিতে হয়। ১৫৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় লৌহা গলানোর কাজে অক্সিজায়ারকে ব্যবহার করা হয়। ফলে যে ফার্নেস লৌহা গলানোর কাজ হয় তার বাইরে ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ থেকে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : রাজধানীর গুলিস্তান সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের কারণ জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তা শেষ হলে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে কেন বিস্ফোরণ হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার সিদ্দিক বাজার নর্থ সাউথ রোডে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বিস্ফোরণের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতে পরিণত হয়েছে। ভবনের বেসমেন্ট ও নিচতলা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ করছে, তাদের পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা সহযোগিতা করছে।
ভবন বা ইমারত নির্মাণের ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ভবন নির্মাণের আগে আমরা সব সময় বলে থাকি ফায়ার সার্ভিসে অনুমতি নেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করলে, এ ধরনের ঘটনা দুর্ঘটনা কমে যেত বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়— র্যাব : এদিকে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান বলেছেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি এটা নিশ্চিত হয়েছি।
বুধবার (৮ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমাদের র্যাবের ডগ স্কোয়াড এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এখানে উপস্থিত আছে। তারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং রাজউকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি : এদিকে দুটি ভবন বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্য ৩ জন হলেন— দিনমনি শর্মা, আনোয়ারুল হক ও শামস আরমান। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, তদন্ত কমিটিকে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ৫ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে।
গ্যাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি— তিতাস : গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্যাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মিয়া। গতকাল বুধবার ঘটনাস্থলে এসে ফিরে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অপারেশন) এ কথা জানান।
এ ঘটনার পর থেকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছেন জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মিয়া বলেন, মঙ্গলবার সংবাদ পাওয়ার পরই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ডিটেক্টর দিয়ে আমরা পরীক্ষা করেছি, তবে কোনো গ্যাসের উপস্থিতি পাইনি। একটি রাইজার পাওয়া গেছে, সেটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। এখন পর্যন্ত গ্যাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সেলিম মিয়া বলেন, যদি গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হতো, তাহলে এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটত। তবে এখানে আগুনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে সাততলা একটি ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশের আরেকটি পাঁচতলা ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়। পরে সেখানে উদ্ধার কাজ চালায় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। বিস্ফোরণের পর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঘটনার দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। এরপর বুধবার আবারও দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার কাজ শুরু হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক। পাশাপাশি এখনো কয়েকজন নিখোঁজ আছেন।