নিজস্ব প্রতিবেদক
রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার চৌপতিমোড় এলাকার হরিরামপুর গ্রামের আলমগীর ইসলাম ঝুনু সম্প্রতি প্রতারণার মামলায় জেল খেটে বের হলেও তার প্রতারণার কৌশল থেমে নেই।
তার বিশেষ টার্গেট: শত বছরের পুরোনো কয়েন সংগ্রহে আগ্রহী ধনী ব্যক্তিরা। ঝুনু ও তার চক্র নিজেদের বিদেশি ক্রেতা ও দালাল পরিচয় দিয়ে বড় তারকা হোটেলে ভুয়া দর-কষাকষির অভিনব আয়োজন করে। এসব বৈঠকে কয়েনের মূল্য উঠতে থাকে হাজার কোটি টাকায়।
তবে বাস্তবে এগুলো কোনো প্রাচীন নিদর্শন নয়। চক্রটি তামা গলিয়ে কয়েন তৈরি করে, যেখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম ও নিজেদের মতো সাল তারিখ খোদাই করা হয়। তারা এটিকে ‘ম্যাগটেনিক কয়েন’ বলে পরিচয় দেয়। একটি কয়েন তৈরির খরচ যেখানে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সেখানে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে এই চক্রের চার সদস্য ধরা পড়েছে। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে ঝুনুর ‘গোয়েন্দা ফাঁদ’ নামের প্রতারণা কৌশলের কথা। শিল্পপতিদের টার্গেট করে তিনি তাদের ব্যবসায়িক গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নেন এবং চক্রের মাধ্যমে বিশাল অর্থ আদায় করেন।
প্রতারিত হওয়া এক ক্রেতা বলেন, কয়েন বিক্রির কথা বলে ঝুনু আমাকে নিয়ে গেছে। তখন আমার কাছে বিক্রির কথা বলে স্ট্যাম্প করে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে।
রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিন দালাল ও এক রসায়নবিদকে, যারা তামার তৈরি আশি টাকার কয়েন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিক্রি করে আসছিল কোটি টাকায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪২টি ধাতব মুদ্রা। পুলিশ জানতে পারেন এসব মুদ্রা আলমগীর ইসলাম ঝুনু তৈরি করে সরবরাহ করেছিলেন।
সম্প্রতি, ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার সোনাখালী এলাকার মৃত নওশের আলীর ছেলে মো. হারুন অর রশিদ (৪৮), মুক্তাগাছা থানার শশরা এলাকার মো. আনছার আলীর ছেলে মো. আসলাম মিয়া (৩৫), জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল সামাদের ছেলে মমিনুর রহমান আকাশ (৪৪) গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হলে জিজ্ঞেসাবাদে এসব প্রতারণার গডফাদার হিসেবে ঝুনুর নাম উঠে আসে।
রংপুর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “এ ধরনের প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা নিশ্চিত করছি, প্রতারকরা যেন কোনোভাবেই তাদের প্রতারণা চালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য ইউনিটও একযোগভাবে এই প্রতারকদের ধরতে কাজ করছে।”
সম্প্রতি রংপুরের দুই ব্যবসায়ী তার নতুন টার্গেট হয়ে উঠেছেন। তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঝুনুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে প্রতারণার এই ভয়ঙ্কর চক্রকে নির্মূল করার কাজ চলছে।