মানুষ চিরকাল জয় এবং হার, প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তিকে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোণ,
স্বার্থ এবং সুযোগ থেকে ব্যাখ্যা করে! কখনো কখনো জয়ের মধ্যেও হার আছে
আবার পরাজয়ের মধ্যেও বিজয় থাকে। মানুষজন কোন পদ্ধতিতে সেটা উদযাপন
করে, উপলব্ধি করে এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য নির্ধারণ করে- সেটার মধ্যেই
সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে। কল্যাণ আসলে কীসে তার সিদ্ধান্ত মানবচক্ষুর
গ্রহন করার ক্ষমতা নাই। সে জয় পরাজয় নিয়ে ভাবতে পারে না বরং ঘটনার
পূর্বাপর দেখতে পারে। আবার বলতে লাগে মুখ। সুখ কীসে? অ্যাবসিউলিট পরিনাম-
পরিনতির জন্য মানুষকে নির্ভার নয় বরং নির্ভর হতে হয়।
যে জয় পায় সে সব করতে পারে আবার যে হারে তার কোন ক্ষমতা থাকে না- এই
সত্য শেষ সত্য নয়। শঙ্কা আর ভয় সর্বত্রই থাকে। যেখানে সম্ভাবনা প্রবল
সেটার উল্টো পিঠেই ভয়ানক শঙ্কা প্রকট থাকে। কাজেই ভবিষ্যতে কী হবে তার
আভাস চিন্তায় নাও আসতে পারে। কর্মই ভালো ও মন্দের মর্ম বোঝায়! ভোট
এবং ভ্যালট, সাপোর্ট এবং লোপাট- এসবে জরাজীর্ণ যে ব্যবস্থা সেখানে জয়-
পরাজয়ে মানুষ চেনা মুশকিল! এগিয়ে যাওয়া আলোতে অন্ধকার লুকিয়ে থাকতে
পারে আবার পিছিয়ে থাকা সূর্যেও উজ্জ্বল দিন দেখাতে পারে!
কী হবে আর হবে না- এই ভাবনার চেয়েও যা ঘটে গেছে তা রটনার চাইতে কতোখানি
কম-বেশি তা উপলব্ধি করা দরকার! সরকার জনগন, সরকার রাষ্ট্র! অকল্যাণের
থলে থেকেও মুক্তা ও মুক্তি কুড়ানো সম্ভব যদি সদ্ভা্ব থাকে। যদি সবাই সবার
হয় তবে সীমানা অগৌণ। মিত্রের হাতের চেয়ে শত্রুর হাত পাশাপাশি থাকলে
সম্পর্ক টেঁকসই হয়। যে পেয়েছে এবং যে পায়নি- উভয়ের উপলব্ধি সমান নয় তবে
ব্যথা সমানুপাতিক! ক্ষুধা দু'জনাতেই ছিল। কারো মিটে গেছে আর কারো জুটে
যাওয়ার অপেক্ষায়! এতো সেই জগৎ যেখানে সব আশা মেটে না!
সার্বিক এবং সামগ্রিক বিবেচনা করার মহৎ আত্মা আমার মধ্যে নাই, আপনার
মধ্যেও নাই বোধহয়! তবে কোথায় আছে? সহ্যসীমা যদি না বাড়ে, মানুষের ব্যথা-
কষ্টে যদি মন-মনন না কাঁদে তবে অন্ধকারের ফাঁদে বিঁধেছি! সেখানে জয়-পরাজয়
পদ্ধতি মাত্র; মুক্তির উপায়ন্তর নয়। সিংহসাবক বিড়ালের কাছে হারলেও সে
সিংহ হিসেবেই বাড়ে! মুক্তির উদযাপন মিছিলে যারা অংশগ্রহণ করে না,
উদযাপনে যারা স্লোগান ধরে না এবং সৎ ও সততার জন্য যারা লড়াই করতে ভুলে
যায় তারা ধীরে ধীরে বনসাইয়ে পরিনত হয়! তখন বয়স বাড়ে বটে তবে ছায়া বাড়ে
না!
দিন বদলায়! জয় সার্বজনীন হয় কিংবা পরাজয় ঘনীভূত হয়! দিনের পালাবদল
কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। জনতার চাওয়া নিজেরাও মিটিয়ে নিতে পারে না।
তখন ক্ষোভ আড়েদিঘে বাড়ে! বাড়িয়ে রাখা হাত নেয় তবু দেয় না। পাতা হাত
কখনোই দিতে জানে না। দেওয়ার ক্ষমতা তো হৃদয়ের। আবার জিঘাংসার পথে
জিগীষা বিম্বিসার অশোকে পরিনয় ঘটায়। সময় যখন থমকে দাঁড়ায় তখনও আয়ু
কমে! কারো জন্য বায়ু উল্টোদিকে বইতে শুরু করলেও কারো কারো সেই একই বায়ু
আয়ু হয়ে ফেরত আসে! চিরকাল কারো দিন সমান নাহি যায়! দিনের শেষভাগে রাত
আবার রাতের শেষভাগে দিন- চিরকাল এভাবেই চিরদিন!