রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: চরাঞ্চলের সহায় সম্বলহীন মানুষ ছাগল পালন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অনেকেই একটি ছাগল নিয়েই নেমেছে নিজেকে স্বাবলম্বী করার সংগ্রামে। এমনই একজন শহিদুল ইসলাম। তিস্তার নিষ্ঠুর আগ্রাসনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়েছেন তিনি। নিঃস্ব শহিদুল থাকেন অন্যের জমিতে। নিজের বলতে কিছুই নেই তার। এক সময় ছিল জমি, ছিল হালের গরু, ঘরভর্তি ছিল দেশি জাতের ছাগল। এখন দিন কাটে অন্যের জমিতে। সেই শহিদুল এখন নতুন স্বপ্ন দেখছেন। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে তার ঘরে একটি ছাগল থেকে হয়েছে ৬টি ছাগল। আরেক অসহায় মাহিনুর বেগম। ঘরে তিন সন্তান। স্বামী-স্ত্রী আর তিন সন্তান মিলে ৫ জনের পরিবার। স্বামী আব্দুর রহিমের এক সময় ভিটেমাটি ও ফসলি জমি থাকলেও সেই ভিটে গেছে তিস্তার পেটে। দিনমজুরিতে দিন চলে মাহিনুর-রহিম দ¤পতির। অভাবের সংসারে কষ্টে কাটছিল তাদের জীবন। তবে ছাগলে সেই কষ্টের জায়গা দখলে নিয়েছে হাসিতে। তার ঘরে রয়েছে চারটি ছাগল। বৃদ্ধ জহির উদ্দিন। বয়সের ভারে অন্যের জমিতে খুব একটা কাজ করতে পারেন না। ছেলেদের সংসারে থাকেন তিনি। মাঝে মাঝে তিনিও অন্যের জমিতে কাজ করেন। উপহারের একটি ছাগল থেকে তার ঘরে এখন তিনটি। এ ছাগল নিয়েই দিন কাটে জহির উদ্দিনের। গল্পটি শহিদুল, মাহিনুর আর জহির উদ্দীনের শুধু নয়। রংপুরের তিস্তা নদীবেষ্টিত পশ্চিম ইচলি গ্রামের ৪০টি পরিবারের গল্প প্রায় সবার একই। সবার ঘরে ঘরে দু’টি থেকে ৫-৬টি করে দেশীয় জাতের ছাগল রয়েছে। যাদের প্রত্যেককে বিনামূল্যে একটি করে ছাগল দেওয়া হয়েছিল। ওই গ্রামকে এখন সবাই ছাগলের গ্রাম বলেই চেনে। ছাগলেই তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, বছর দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকজন বাংলাদেশি আমাদের গ্রামে লোক পাঠিয়েছেন তারা গ্রামের অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করবেন। রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু লোক আমার সঙ্গে যোগোযাগ করেন। আমি গ্রামের খুব গরিব মানুষের তালিকা করি, তারাও বেশ খোঁজখবর নিয়ে প্রতিটি পরিবারে একটি করে ছাগল দিয়েছে। বর্তমানে সবার ঘরে ২ থেকে ৬টি করে ছাগল আছে। সুবিধাভোগি শহিদুল ইসলাম বলেন, দানের পাওয়া একটি ছাগল থেকে ৪টা ছাগল হয়েছে। আল্লাহ চাইলে কোরবানির ঈদে ২টা খাসি বিক্রয় করতে পারবো। জহির উদ্দিন বলেন, ছাগল পেয়ে খুবি খুশি হইছি। ছেলেরা মাঠে কাজ করে, আমি ছাগলগুলো দেখাশোনা করি। একটা ছাগল দিছিল এখন ঘরে তিনটা হইসে। আল্লাহ দেয় তো ২ মাস পর আবার দুইটা হবে। এখন এলাকায় সবার ঘরে ঘরে ছাগল। মাহিনুর বেগম বলেন, ওমরা (স্বামী) গিয়ে ছাগলটা আনি দিয়ে কয়, এই ছাগলটা বিদেশি একজন লোক দিছে। তোমরা লালন-পালন করো। সেই ছাগল ছয় মাসের মধ্যে গাভিন (গর্ভবতী) হয়। একসঙ্গে তিনটা বাচ্চা দিছে। পরের বছর আরও একটা দিছে। বছর বছর গাভিন হচ্ছে ছাগল। এমন করি হইলে মেলা ( অনেক) ছাগল হইবে। কয়েক বছর পর কিছু ছাগল বেঁচে গরু কিনব। সেই গরু দুধ দিলে অভাব থাকবে নয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রফিউল আলম নিসার খান বলেন, আমরা পুরো দেশ পরিবর্তন করতে পারব না কিন্তু চাইলে একটি গ্রামের কিছু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করতে পারি। এরই অংশ হিসেবে স্যাকরামেন্টো এরিয়া আমেরিকান বাংলাদেশি এ্যাসোসিয়েশনের আর্থিক সহায়তায় প্রান্তিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তিস্তা নদীর তীরবর্তী ইচলি চরের প্রান্তিক মানুষদের বিকল্প আয়ের উৎসের জন্য পরিবারগুলোকে ছাগল ও হাঁস দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রত্যেকটি পরিবারের দুই থেকে ৬টি ছাগল রয়েছে। ভবিষ্যতে এ প্রকল্প সম্প্রসারণ করতে চেষ্টা করবো। সমবায় ভিত্তিতে দুগ্ধ খামার করে দেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী স্যাকরামেন্টো এরিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক সহায়তায় বিনামূল্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বন্যাকবলিতদের সহায়তা, রমজান সহায়তা, মেন্টালি চ্যালেঞ্জ স্কুলে সহায়তা, আদিবাসীদের সহায়তা, হিজড়া সম্প্রদায়দের সহায়তা, করোনাকালে ত্রাণ বিতরণ ও অক্সিজেন সরবরাহ প্রভৃতি কাজ করছে।
ডোমারে ইটভাটা মালিকদের ৭ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান
গোপাল চন্দ্র রায়, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমারে ইটভাটা মালিকদের ৭ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু...