পহেলা নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস। প্রতিবছর এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যুব র্যালী, আলোচনা সভা, সফল যুব পুরষ্কারসহ নানান আয়োজন করে। পাশাপাশি দেশের প্রায় সকল জেলায়ই জেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় যুব দিবস-২০২৪। জাতীয় যুব দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘দক্ষ যুব গড়বে দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’। এ প্রতিপাদ্যটি যথার্থ ও সময়োপযোগী বলে প্রতীয়মান।
যুব সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের যুব সংগঠনের গৃহীত নানা পদক্ষেপ যেমন চলমান, তেমনি সরকারিভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালিত নানামুখী প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, আবাসিক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিত যুবদের আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে যুবঋণ কার্যক্রমও দৃশ্যমান। কিন্তু জানিনা কোন এক অদৃশ্য কারণে দেশের যুবদের অন্যতম সহযোগী সরকারি প্রতিষ্ঠানের এহেন চমকপ্রদ কার্যক্রম এখনও অনেকেরই অজানা। আমরা যারা যুব সংগঠক হিসেবে পাড়া মহল্লায় সংগঠনের সদস্য, সদস্যদের পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদেরকে তথ্যগুলো সরবরাহ করি বোধ করি শুধুমাত্র তারাই এ সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের নিজেদেরকে সরকারের এসকল কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সরকারের আরো বেশি প্রচার-প্রচারণা চালানো উচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি। এ বছরের প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অন্যতম একটি কার্যক্রমের বিষয়ে না বললেই নয়, সেটি হলো প্রশিক্ষিত যুবদের স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যুবঋণ সহযোগিতা প্রদান।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে ১৮-৩৫ বছর বয়সী কোন যুব একটি জীবিকা নির্বাহমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অধিদপ্তরের যে কোন উপজেলা কার্যালয় থেকে সহজ শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (প্রকল্পভেদে ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা) ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হতে পারে। সম্পদের সীমাবদ্ধতায় বেড়ে ওঠা দেশের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তরুণ-যুবদের জন্য সরকারের এমন কার্যকর পদক্ষেপ বরাবরই ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। দেশের অসংখ্য বেকার যুব দক্ষ-প্রশিক্ষিত হওয়ার সত্ত্বেও মূলধনের অভাবে, সম্পদের স্বল্পতার দরূণ কোন ক্ষুদ্র/মাঝারি উদ্যোক্তামূলক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হতে পারে না। এ ধরণের ঋণ সুবিধা দক্ষ যুবদের স্ব-কর্মে নিয়োজিত হতে উৎসাহিত করে। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমান যুব সদস্য প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ-প্রশিক্ষিত হয়ে ঢাকা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে যুবঋণ গ্রহণ করে স্ব-কর্মে নিয়োজিত হয়েছে। এমন মহান কাজের সহযোগী হিসেবে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে পেরে আমরা গর্বিত, গৌরবান্বিত।
ঢাকা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ধানমন্ডি ইউনিট থানা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মতই দেশের সকল জেলা-উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয় যুববান্ধব ও সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে দক্ষ যুবদের আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে যুবঋণ প্রাপ্তি সহজতর করেছে ও করবে বলে দৃঢ় বিশ^াস করি। একইসাথে যুবঋণ গ্রহণে বিদ্যমান নিশ্চয়তাকারীর (জমির মালিক/চাকুরীজীবি) ক্ষেত্রে সময়োপযোগী আরোও সহজতর পন্থা (সমাজের বিশিষ্টব্যক্তিবর্গ, সফল উদ্যোক্তা, বেসরকারি ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রভৃতি) অবলম্বনের মাধ্যমে দক্ষ যুব খুবই সহজে যুবঋণ পেয়ে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করতে পারে সে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তাহলেই দক্ষ যুব গড়ে তুলবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। আর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে যুবঋণের বিকল্প নেই।
– সুমন শেখ, প্রতিষ্ঠাতা, স্বচ্ছ যুব ফাউন্ডেশন এবং সভাপতি, জালিস ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (জিও) বাংলাদেশ;