কবি জুয়েল খান বিডি # মানুষ এক রহস্যময় জীব ইতিমধ্যে আবির্ভূত উল্লাসিত সৎ অসৎ কাজে সম্পৃক্ত সত্যের উপরে কেউ নয় যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা ? জীবনই একটা কবিতা গল্প উপন্যাস আমরা তা লিখে চলেছি যুগযুগ ধরে নানান ঢং রং লাগিয়ে কেউ হয়ে উঠছেন কবি থেকে মহা কবি কেউ মহা গায়ক নায়ক প্রভৃতি আর গোটা কয়েক মানুষ দেখে স্বপ্ন যদি কিছু পাওয়ার আসায় পৃথিবীর বুকে কেউ জিন্দা থাকলে নিন্দা পরে কেউ প্রশংসা কুড়ায় আর কেউ প্রশংসা পাই শোক সবাই তাই কবি জুয়েল খান “তুলে ধরেছেন পূরা বাংলা উপাধি
বাংলা বা বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি :-বাংলা বা বঙ্গ রাজ্যের প্রমান পাওয়া যায় আদি বৈদিক ও সংস্কৃত লেখনিতে । প্রাচীন গ্রীক ও রোমান ভাষায় এই বাংলা বা বংকে গঙ্গারিডই নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ বা ইসা নবীর জন্মের ১৫০০ বৎসর আগে ” ভঙ্গ বা বঙ্গ রাজ্য ” প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । পৌরাণিক মতে রাজা বালি র তিন পুত্র
১) অঙ্গ ,( পশ্চিমবঙ্গ , খুলনা , বরিশাল অঞ্চল )
২)বঙ্গ ( ঢাকা , ময়মন্সিহ , ত্রিপুরা অঞ্চল )
৩)পুন্ড্র ( উত্তরবঙ্গ , আসাম অঞ্চল ) শাসন করতেন । এর ও হাজার বৎসর পড়ে ১৭০০ সালে ও বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলাও বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম অঞ্চলের একীভূত রাস্ট্রের নাম দিয়েছিলেন “বঙ্গ” । ১৩৩৬ থেকে ১৫৭৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে এই রাস্ট্রের নাম ছিল বাঙাল বা বাঙালাহ বঙ্গ অঞ্চল বা বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এ রাজ্য বিস্তৃত ছিল। গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিস তার ইন্ডিকা নামক গ্রন্থে এই রাজ্যের উল্লেখ করেন। গ্রিক ও লাতিন ঐতিহাসিকদের মতে, আলেকজান্ডার তার ভারতবর্ষ অভিযান থেকে সরে এসেছিলেন আলেকজান্ডার আশঙ্কা করছিলেন বাংলা বা গঙ্গারিডই আ্রক্রমনা পরিণতি হবে ভয়াবহ।অতিত ও বর্তমানে ভিনদেশি ও ভারতীয় ইতিহাসবিদরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বাংলা ও বাঙ্গালির ইতিহাস পরিবর্তন করার চেষ্টা করে আসছে । প্রাচীন বাংলা ছিল ভারত থেকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে আলাদা । প্রমত্তা গঙ্গা / পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র ও নদীমাতৃক অবস্থানের কারনে ভারত থেকে আলাদা ও ক্ষমতাশালি ছিল প্রাচীন বাংলা ।আধুনিক “বাংলাদেশ ” নামের উৎপত্তি
১৭৫৭ সালে ব্রিটিশরা বাংলা দখল করে নিলে এর নাম দেওয়া হয় ” বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী ” । ১৯০৫ সালে বাঙ্গালিদের স্বাধিনতা সংগ্রাম দুর্বল করতে এক বাংলা ভাগ করে নাম দেওয়া হয় “পূর্ব বঙ্গ ” ও পশ্চিম বঙ্গ ” । বাংলা , বাংলার দেশ বা বাংলাদেশা উপমাটি অনেক আগে থেকেই লোককথায় বাঙ্গালি ও অবাঙ্গালীদের মাঝে এই অঞ্চলকে বোঝাতে ব্যাবহার হয়ে এসেছে ।১৯৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সারোয়ারদি ব্রিটিশদের কাছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে শুরুকরে আসাম সহ সমগ্র বাংলা একটি স্বাধিন রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধিনতা দেবার দাবি করেন । মূলত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিদের রক্তক্ষয়ি সংগ্রাম ও নেতাজি সুভাশ চন্দ্র বসুর বিপ্লবী সংগ্রামের শাস্তি স্বরূপ সিরাজউদ্দলার এক বাংলাকে ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারতের কাছে তুলে দেওয়া হয় ।মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ অগাস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারতের নিকট এই নতুন ভাবে বিভক্ত বাংলা প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করলে – এই রাস্ট্রের একটি রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যাপারে মানুষ সচেতন হয়ে উঠে । ১৯৫৭ সালে করাচীতে পাকিস্তানের সংসদে তরুণ সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান এর কঠোর বিরোধিতা করেন । “পূর্ব পাকিস্তান” নামটির প্রতিবাদ করে বলেন যে, পূর্ব বাংলা নামের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে।এরপর ১৯৬৯ সালে আইয়ুব এর পতন আন্দলনে মিছিলের স্লোগানে ও পোস্টারেবীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।”স্লোগান সর্বস্তরের দেওয়া হয় । মূলত ১৯৬৯ সাল থেকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাস্ট্রের নাম বাংলাদেশ হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে । ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তৎকালীন নেতারা বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন । যেমন ” স্বাধীন পূর্ব বাংলা ” বাংলা , বেঙ্গল , ইস্ট বেঙ্গল , বঙ্গ , বঙ্গ দেশ ,ও বাংলাদেশ ” । এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অধিকাংশ নেতাকর্মী ” বাংলাদেশ ” নামের পক্ষে রায় দেন ।এর পর থেকে কাগজে পত্রে পূর্ব পাকিস্তান লিখতে হলেও কেউ মুখে পূর্ব পাকিস্তান উচ্চারণ করতেন না। সবাই বলতেন বাংলাদেশ। এরপর অফিসিয়ালভাবে ২৬ মার্চে স্বাধিনতার ঘোষণায় ” বাংলাদেশ ” নামটি ব্যাবহার করা হয় । বঙ্গবন্ধুর ই পি আর এর বেতার বার্তা ও পরবর্তীতে কালুরঘাট থেকে প্রচারিত স্বাধিনতার ঘোষণায় স্বাধিন দেশের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয় ।বাংলাদেশ নামটি কোন ব্যাক্তি বা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বাংলা শব্দভাণ্ডারে আসেনি । এটি হাজার বৎসরের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের নাম ।
বাংলাদেশের নামকরণের ইতিহাস?১৯৬৯ সাল থেকেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাস্ট্রের নাম বাংলাদেশ হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে । ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তৎকালীন নেতারা বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন । যেমন ” স্বাধীন পূর্ব বাংলা ” বাংলা , বেঙ্গল , ইস্ট বেঙ্গল , বঙ্গ , বঙ্গ দেশ ,ও বাংলাদেশ ” । এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অধিকাংশ নেতাকর্মী ” বাংলাদেশ ” নামের পক্ষে রায় দেন ।এর পর থেকে কাগজে পত্রে পূর্ব পাকিস্তান লিখতে হলেও কেউ মুখে পূর্ব পাকিস্তান উচ্চারণ করতেন না। সবাই বলতেন বাংলাদেশ। এরপর অফিসিয়ালভাবে ২৬ মার্চে স্বাধিনতার ঘোষণায় ” বাংলাদেশ ” নামটি ব্যাবহার করা হয় । বঙ্গবন্ধুর ই পি আর এর বেতার বার্তা ও পরবর্তীতে কালুরঘাট থেকে প্রচারিত স্বাধিনতার ঘোষণায় স্বাধিন দেশের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয় । বাংলাদেশ নামটি কোন ব্যাক্তি বা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বাংলা শব্দভাণ্ডারে আসেনি । এটি হাজার বৎসরের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের নাম । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প স্থগিত থাকে দীর্ঘদিন। ১৯১৭ সালের নভেম্বরে ইংরেজ সরকার ‘স্যাডলার কমিশন’ গঠন করে পূর্ববর্তী ‘নাথান কমিশনে’র রিপোর্টকে পর্যালোচনা করে ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নতুন করে রিপোর্ট দিতে। এই ‘স্যাডলার কমিশন’ তাদের রিপোর্ট প্রদান করে ১৯১৯ সালের মার্চে।১৯১৭ সালে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের আইন সভা Imperial Legislative Council-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নিবন্ধনের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি বিল উত্থাপন করেন। পরে এটি পাস হয় ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯২০’ নামে, যার অধীনে পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে যে ব্যক্তিটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তিনি আর কেউ নন, ঢাকার চতুর্থ নবাব, ব্রিটিশ রাজত্বের সময়কার উপমহাদেশের অন্যতম রাজনীতিবিদ, পূর্ব বাংলার শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত স্যার খাজা সলিমুল্লাহ। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি মূলত ১৯১১ সালের আগস্টেই কার্জন হলে এক রাজনৈতিক সমাবেশে উত্থাপন করেছিলেন। পরে তাঁর এই দাবি সর্বজনীন রূপ পায় ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ বাতিলের পর। স্যার সলিমুল্লাহর দান করা ৬০০ একর জমিতেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর পর বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটে নাম করন করা হয় ধিরে ধিরে নাম করন করা হয় ঢাকার সৃকৃতি হিসাবে গড়ে ওঠে ঢাকা রাজধানী। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নদীয়া জেলা বা বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলাকে বাংলাদেশ হিসেবে দেশ-বিদেশেরের মানুষ জানতেন তখনো ঢাকার সৃষ্টি হয়নি নদীয়ার বৃহত্তম নদী বন্দরটি ছিল খোকসা এলাকায় যতদুর শোনা যায় আল্লাহর গায়েবী হুকুমে এক ধরনের গাছ রাতের অন্ধকারে জন্মনিলে আল্লাহর হুকুমে খোকসা নামক গাছের উপরে গায়েবি নাম করণ হয় খোকসা সেই থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি হয়েছে এ গাছ অনেক রোগের মহাঔষধ হিসেবে ব্যবহার হত আবার কারও কারও মতে খোকসা নামক গাছের থেকে খোকসা নামের উৎপত্তি তবে এ এলাকা থেকে এ গাছ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিছু মানুষ এখন নাকি এ গাছ চেখে পরে।
সকাল ফুরিয়ে সন্ধ্যা এল ঝরছে সাঁঝের ফুলগুলি
ফিরছে ঘরে সন্ধ্যা তারা পিক পাপিয়া বুলবুলি
রক্তরাঙা সাঁঝের আলোয় হাসছে পথের দূর্বাদল
তাদের দেখে আমার বুকে বইছে স্মৃতির ঝড়-বাদল
বুকের পাঁজর ভাঙছে ব্যথা ধুসর কালো শুভ্রনীল
চোখের তারায় মুক্ত ডানায় উড়ছে স্মৃতির শঙ্খচিল
চোখের মাঝে উঠছে ভেসে হারানো সেই দিন গুলি
এমন মধুর সন্ধ্যা এলে খেলত খোকন ডাংগুলি
বলতাম আমি আয় ঘরে যাই কই রে আমার ফুলকুঁড়ি
দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরে বসত চেপে কোল জুড়ি
বলতো হেসে যাও গো বাবা আসব আমি একটু পর
এখন আমার খেলার ঘরে পুতুল খেলার আসবে বর
তখন আমি শাসন করে ধমক দিয়ে জোর তুমুল
পুতুল খেলার আসর ভেঙ্গে ঘরে নিতাম মোর পুতুল
দিনবদলের ভেলায় চড়ে সব হলো আজ রদবদল
ফুলগুলো সব ফল হয়েছে গাছের গোড়ায় নেই কো জল
কোথায় আমার বক্ষে ধরে যত্নে গড়া ফুল ফসল
কোথায় আমার বুকের মানিক চোখের তারা জল কাজল
সন্ধ্যা এলো মেঘ করেছে আসবে বুঝি ঝড় তুফান
পথের ধারে একলা আমি কাঁপছে দেহ কাঁদছে প্রাণ
ঘোর হতাশার মাঝ দরিয়ায় ডুবলো মনের নৌবিহার
চৌদিকে যার জল কুয়াশা নাই কোন যার কুল কিনার
বিষন্নতায় ক্লান্ত হৃদয় ভাবছে শুধু হায়রে হায়
খোকন এসে বলত যদি আয় ঘরে যাই আয়রে আয়
তাহার ছোঁয়ায় মন মরুতে ফুটতো সুখের বাবলা ফুল
উঠত বেজে সুখের বীণা তানপুরা ঢাক তবলা ঢোল
একটুখানি সুখের আশায় বইছে চোখে জল জোয়ার
পথের পানে তাকিয়ে আছি আসেনি মোর রাজকুমার
দূর আকাশে মেঘ ডাকছে তাকাই শুনে সেই আওয়াজ
ভাবছি বুঝি আসছে আমার রাজকুমারের পঙ্খিরাজ
ধ্যান ভাঙ্গিলে ভেঙ্গে পড়ে ক্লান্ত শরীর নড়বড়ে
অশ্রুলোকের শ্রাবণ ধারায় বৃষ্টি এসে ভর করে
বুকের মাঝে উথলে ওঠে ঘরে ফেরার ভূখ পিয়াস
হৃদয় ছিড়ে বেরিয়ে আসে অগ্নিঝরা দীর্ঘ শ্বাস
হৃদয় পোড়া দীর্ঘশ্বাসের তপ্ত কঠিন লাল লাভা
বলছে কেঁদে কই রে খোকন আয়রে কাছে আয় বাবা
চাইনা রে তোর স্বাস্থ্য সেবা চাইনারে তোর ঘর দুয়ার
আকুল পরান ব্যাকুল শুধু তোর দর্শন তোর ছোঁয়ার
মাটির দেহ পড়ছে হেলে ক্লান্ত শরীর শীর্ণকায়
এই বুঝি রে প্রাণের রবি যায় বুঝিরে অস্ত যায়
কইরে আমার প্রাণের প্রদীপ আয়রে কাছে আয় রতন
চক্ষে ভরে ঘুমাই রে তোর সোহাগ মাখা চাঁদ বদন
রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে খোকসা নামক গাছের ডাল দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার জুবাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু। খবর পেয়ে জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে এখানে প্রথম কালীপূজা আরম্ভ করেন। আর সেই থেকে খোকসার কালীপূজার সূত্রপাত। জনৈক জমিদার পুত্রকে সর্প দংশন করলে চিকিৎসার জন্য এই সাধকের কাছে নেওয়া হয়। রোগীকে কালীর পদতলে শুইয়ে দিয়ে খোকসা গাছ দিয়ে সাধনার মাধ্যমে জমিদার জুবাকে সুস্থ্য করে তোলেন সাধু। খবর পেয়ে জমিদার কালীর প্রতি ভক্তি আল্পুত করে ও তান্ত্রিক সাধুর নির্দেশে সাড়ে সাত হাত দীর্ঘ কালী মূর্তি নির্মাণ করে মাঘি আমাবশ্যার তিথিতে মহিষ বলির শেষে পাংশার জমিদার ভৈয়বনাথ ও শিলাইদহের জমিদার ঠাকুরের সম্মানে জোড়ো পাঠা বলি দেওয়া হতো। সেই স্রোতধারায় এখনও দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের মানসার পাঠা বলি দেওয়া হয় এই খোকসা নামক বন্দরটি । দিনের শেষ প্রহরে দেবিকে আসনে তোলার পর নড়াইলের জমিদার রতন বাবুদের পাঁচ শরিকের জন্য পাঁচটা পাঠা বলি অতঃপর নলডাঙ্গার রাজা প্রেরিত মহিষ বলি হত। এরপর শিলাইদহের জমিদারী ষ্ট্রেট এর সন্মানে জোড়া পাঠা বলি হত। মাঘি সপ্তমীর পূজা ও মেলা পর্যন্ত চলতো ভক্তদের মানসার জন্য আনা পাঠা বলি। ক্রোধের পথিক মহিষ ও পাঠা বলীর এ প্রথা সেই রাজা জমিদারী আমলের আদলেই আজও প্রচলিত রয়েছে। ১৩৪০ বাংলা সালে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পরের বছর ১৩৪১ বঙ্গাব্দে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় কালী মন্দিরটি নতুন করে তৈরী করা হয়। পরিষদের প্রশাসনিক কার্যালয়। নাট মন্দির নির্মানাধীন থাককলেও আলোর মুখ দেখেনি ধর্মীয় ও সেবায়েত আশ্রম।
বর্তমান পূজারীর পূর্বপুরুষ জনৈক পন্ডিতকে একদিন বিশালাকৃতির একটি মহিষ আক্রমন করলে উক্ত পন্ডিত হাতে থাকা চন্ডিগ্রস্থ ছুরে মেরে মহিষটি বধ করেন। এ ঘটনা নলডাঙ্গার রাজার কর্নগোচর হওয়ার পর আলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন এ ব্রাহ্মন পরিবারের চার শরিকের জন্য ১৪শ বিঘা এবং কালীপূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাঠামো তৈরীর মিস্ত্রি, ধোপা, নাপিত, মালাকার, ভুঁইমালী, ঢাকী ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকারীকে চাকরানা হিসেবে ১২ বিঘা করে জমি নিস্কর ভোগের সুযোগসহ বার্ষিক পূজার সাত দিন দপাম্বিতা খরচ নির্বাহের জন্য ১৬ বিঘা জমি দান করেন।
আমাদের গড়াই নদী সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে
সে যেন অজানা দেশে পার হয় লোক জন পার হয় গাড়ি লাল সবুজ
নীল পালের ছালা তুলে তৈরি পাড়ি জমায় আপন নীড়ে…!!
কাঁশ ফুলে ছেয়ে আছে নদীর বামে,গড়াই শুকিয়ে যখন চর পরে যায় ,
বালুর কনা গুলি চিক চিক করে আর রোদে ঝলকায়,থেকে থেকে বকের ঝাক উড়ে উড়ে যায় ,
তাদের কষ্টে গড়া নিজের বাসায়,আমাদের গড়াই নদীর সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে
গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে সে যেন অজানা দেশে ।
নদীর ধারে পাগলা স্রোত প্রেম খেলে যায় প্রতি সকাল সাঝে
হাঁসের ঝাক সেথায় সাঁতরে বেড়ায় সূর্য ডুবার আগে আওলা বাতাস পাগলা হয়ে
সকাল সাঝে ভাসে রাতের বেলায় রুপালী চাঁদ মিটি মিটি হাসে …!!
সূর্য উঠে সকাল হলেই পাখির কলরবে আমাদের গড়াই নদী সোনালী মাখা স্রোতে বয়ে ,
গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে সে জেন অজানা দেশে,সোনালী রোদ গায়ে মেখে
স্রতে স্রতে গড়িয়ে চলেছে সে যেন অজানা দেশে পাড় হয় লোক জন জেলে ধরে মাছ ।
গড়াই নদির ধারে হাজার পাখির কিচি মিচি রব
নদির খরতা স্রতে পালতুলে যায় মাঝিমাল্লারা ভাটিয়ালি গানের সুরে
আওলা বাতাস পাগলা ঢেও খেলে যায় সকাল বিকাল সাঝে ,
বসন্ত কালে অনেক ফুল ফোটে শাখে অনেক রং বে রংঙ্গের ফুল
রাখালীয়া বাশির সুর, সবুজ বনের ঝাক,গড়াইয়ের ধারে কাশ ফুলের সাদা বনে শিয়াল মামার হাক ।
পাখির গানের মধুর টানে মন যেন আজ ছুটে ছুটে যায়
কোন এক অজানা নেশায় দিন রাত ভেবে দিশে না পায়
প্রকৃতির সাথে প্রেমের নেশায় সবুজ ঘাসে হরেক ফুলে ,
আকাশের ওই সাদা মেঘে মন টা আজ নেচে নেচে যায়
মাঠ ঘাট আর বন পেরিয়ে প্রজাপতি আর ফরিং বেশে
মন টা যেন আজ উড়ে যেতে চায় কবির তোফাজ্জের ছোট ঐ গাঁয়ের গড়াই নদীর ছায়
সন্ধা হলেই রুপালি চাঁদ মিটি মিটি করে ফোকলা দাঁতে হাসে
চাঁদের জোছনায় পান কৈরির ঝাক গড়াইয়ের ধারে কানা মাছি খেলে
বাতাবি লেবুর বনে জোনাকির দল সন্ধা নামলে মিটি মিটি জ্বলে ,
সকাল হলে বকের ঝাক দল বেধে যায় সাদা মেঘের কোনে
নৌকার দার টেনে মাঝিরা দুর দেশেতে গুন গুনিয়ে ছুটে চলে
বিষ্টিতে টাপুর টুপুরে পালতুলে দিয়ে নায়ে ।
বাবুই পাখির ঝাক গড়াই নদীর বাকে বটের গাঁয়ে তাল গাছের ডালে বেঁধেছে তারা বাসা
অপরুপ কি দৃশ্য সে যেন ধূলায় লুটিয়ে আছে গড়াই নদীর বাকে
দু- ধারে তার কৃষি জমি ফসলে ভড়া মাঠ, সকাল হলেই গায়ের বধু কলশি কাখে হাটে
জল আনিতে চলে গড়াই নদীর ঘাটে,রূপ সন্দর্য যেন মায়া ভড়া তার বাংলা মায়ের বুকে
সন্ধ্য নামিলে দুর ঘন বনে শিয়াল হাকিছে বসে ঝিড়ি ঝিড়ি শিতল বাতাসে বহে …!!
রাতের বেলা রুপালী মাছ থেকে,থেকে ভাসে,জেলে ভাইয়েরা জারি গানের সুরে নদীতে জাল ফেলে
বাহারি রং বে রংঙ্গের ছিপ হাতে গায়ের ছেলেরা সকাল বেলায় মাছ ধরে নদীর ঘাটে
সবি ছিল এখন আর নেই বাকি আর নেই বাকি কোন কিছু
দুশন পানি
গড়াই নদী কেদে ভাসায় নদী বুক, যুরাইয়া দিয়াছ ছোট বেলাই আমাদের দেহ খানি ।
হাঁটতে শিখেছি তোমারি আঙ্গিনাতে দেখেছি কত রুপে সাজতে তোমাকে
যৌবন এসেছে কত জোয়ারে জোয়ারে কতো যে মাছ জেলেরা ধরেছে দু-হাত ভড়ে
তাদের মুখে দু-মুঠো অণ্য নিয়েছে তুলে সবি গিয়াছে এখন
আর নেই বাকী কিছু রুপ যৌবণ সব ফেলে দিয়ে পিছু ।।
পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় গড়াইয়ের দুই ধারে বর্তমানে ব্যস্ত সড়কে পরিণত হয়েছে। নদে বাঁধ দেওয়ার ফলে দুই পাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও স্থাপনা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দখল ও দূষণ। ফলে একসময়ের খরস্রোতা গড়াই নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে। এক নদে এত দখলের ফলে মরা লাশে পরিণত হয়েছে গড়াই নদী । কিন্তু এখন চর পরে বাঁধ হবার কারণে গড়াই নদীর কোথাও সামান্য জলাধার, কোথাও কিছু জলাবদ্ধতা, কচুরিপানার জঞ্জালের চিহ্ন নিয়ে টিকে রয়েছে। কোথাও গড়ে উঠছে দোকান পাট পাকা বাড়ি। গড়াই নদীর উৎপত্তি গঙ্গা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রধান শাখা। একই নদী উজানে গড়াই এবং ভাটিতে মধুমতি নামে পরিচিত। একসময় গড়াই-মধুমতি নদী দিয়ে গঙ্গার প্রধান ধারা প্রবাহিত হতো, যদিও হুগলি-ভাগীরথী ছিল গঙ্গার আদি ধারা। নদীয়া জেলার উত্তরে হার্ডিঞ্জ সেতু-এর ১৯ কিলোমিটার ভাটিতে তালবাড়িয়া নামক স্থানে গড়াই নদী গঙ্গা থেকে উৎপন্ন হয়েছে।নদীয়ার খোকসা একটি প্রাচীন জনপদ জীবনধারণের যতগুলি উপায় প্রাচীনতম, তার মধ্যে বেশ্যাবৃত্তি অন্যতম। ব্রিটিশ আমলের শুরুতেই খোকসার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত জানিপুর পুরাতন বাজারের পার্শ্বে গড়ে উঠে একটি পতিতালয়। সেসময় এখানে একটি নদী বন্দর ছিল। গড়াই নদীর বুক চিড়ে ষ্টিমার এসে ভিড়ত শত শত । শাল কাঠের আড়ত ছিল সুন্দর বন থেকে কাঠ আসত । বিভিন্ন দেশ বিদেশ থেকে চাউল ধান কেরসিনের তেল লবন আরও অনেক কিছু এই খোকসা বন্দরে আসত সেসময় এক মাএ খোকসার নামকরা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনসূর আলীর বিশ্বাসের মোকামে ঘড়ে আর ওখান থেকে ছড়িয়ে পড়তো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে । খোকসাতে বন্দর থাকার সুবাদে বঙ্গবন্ধু সহ অনেকেয় কলকাতায় পড়াশোনা লেখপড়ার উদেশ্য এই জনপদ বা বন্দর ধরে যাতায়াত করতেন সে সময় ধানের হাট বসত নিয়মিত। গড়াই নদীর কড়াল গ্রাসে এসব বিলীন হয়ে গেলে ১৯৪০ সালের দিকে পতিতালয়টি স্থানান্তরিত হয়ে কালীবাড়িতে স্থাপিত হয়।
নদীয়ার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. আবুল আহসান চৌধুরী কর্তৃক রচিত ‘অবিদ্যার অন্তঃপুরে, নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা’ বইটিতে তিনি লিখেছেন ‘বেশ্যাবাজি ছিল বাবু সমাজের সাধারণ ঘটনা নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়েরও রক্ষিতা ছিল এমনকি ওই রক্ষিতার গর্ভে তার একটি পুত্রও জন্মে ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিতা সুকুমারী দত্তের প্রেমে মজেছিলেন। সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন। মরমি কবি হাসন রাজা, কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও পতিতালয়ে যেতেন। নিষিদ্ধ পল্লীতে গমনের ফলে রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস আক্রান্ত হওয়ার খবর তার জীবদ্দশাতেই ‘বসুমতী’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল।সব যুগে, সব সভ্যতায়, বেশ্যাদের নিন্দা করা হয়েছে। আবার তাদের প্রতি মুগ্ধতায়ও ছড়িয়ে রয়েছে সমাজের সর্বস্তরে। খোকসার মানুষ হিসেবে সেসময় যৌনপেশায় নিয়োজিত মানুষগুলো, তাদের সুখ-দুঃখ, কাজের পরিবেশ জানতে ও জানাতেই আমার ছোট্র এই নিবন্ধ। তবে বেশ্যাদের জীবনসত্য থেকে যায় আলো-অধারীতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আহরিত তথ্য রয়েছে এ নিবন্ধে। শিরোনাম বিষয়ে এমন পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এই প্রথম বলে দাবীও রাখি।পতিতাবৃত্তির অপর নামসমূহ গণিকাবৃত্তি, যৌনবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি। ইতিহাসের আদিকাল থেকে এদের বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। যেমন- দেহপসারিণী, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী, জারিণী, পুংশ্চলী, অতীত্বরী, বিজজব্রা, অসোগু, গণিকা, কুলটা, বারণবণিতা, কুম্ভদাসী, নটি, রূপজীবা ইত্যাদি। এ পেশায় নিয়োজিতরা নিজদেহ নিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থাৎ নিজদেহ স্বেচ্ছায় অপরকে ভোগ করার সুযোগদানের বিনিময়ে অবৈধপন্থায় অর্থোপার্জন। জর্জ স্কট তার ‘পতিতা বৃত্তির ইতিহাস’ নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- ‘পতিতারা হলো সেই সম্প্রদায়ভুক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের দেহ দিয়ে জীবিকা অর্জন করে।’ অক্সফোর্ড ডিকশনারি মতে বেশ্যা হলো একজন নারী যে তার দেহ ভাড়া দেয় যথেচ্ছ যৌন-সংসর্গের জন্য।আদিম যুগ থেকে যৌনমিলনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর সাধনার পথে মানুষ যাত্রা শুরু করেছে। নিজেদের শরীরই ছিল তাদের প্রথম ও প্রধান উপাচার। যে কথা বলছিলাম স্থানান্তরের পর নতুন স্থানে জৌলুস হারায় বেশ্যাবৃত্তি। খোকসার কালীমন্দিরে ঢুকতেই শচীন মাষ্টারের যে বর্তমান বাড়ি সেখানেই নতুন করে গড়ে উঠে পতিতালয়টি। মাত্র ১৫-২০ কাঠা জমির উপর। সেসময় ঘর ছিল মাত্র ১০-১৫টি। পতিতাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০-২৫ জন। কুমুদিনী নামক একজন যৌনকর্মী বাড়িওয়ালা হিসেবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৬৯ সালের দিকে কিছু ধর্মপ্রাণ মানুষ ও মুসলিমলীগের কু দৃষ্টি পড়ে এ বেশ্যালয়ের উপর। অবশেষে উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়। খোকসার বেশ কিছু মানুষ ওই সব পতিতাদের স্ত্রী করে ঘরে তুলে নেন। সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পতিতালয় উচ্ছেদকারী জামাত নেতা ও পতিতাদের স্বামীর নাম প্রকাশ করা হলো না।বাংলা পিডিয়া তথ্য সূত্র মতে মহাভারতে উল্লেখ আছে, একজন বেশ্যা ভালো প্রকৃতির হলে উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। এ জীবিকা সম্পর্কে বৌদ্ধ ধর্মেরও একই মত। মহাভারতের যুগে অপরাপর সম্মানজনক বৃত্তিগুলোর মধ্যে পতিতা বৃত্তিই ছিল অন্যতম। রাজদরবারে ও বিবিধ রাজকীয় অনুষ্ঠানে পতিতাদের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য। বিশিষ্ট প্রত্নতত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ড. অতুল সুর তার দেবলোকের যৌনজীবন বইয়ের ৬২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল’।রোমান ইতিহাস মতে, পৃথিবীতে প্রথম বেশ্যাবৃত্তি পেশার মতো লাইসেন্স বা নিবন্ধন দেওয়া ও কর ধার্য করা হয় রোমান আমলেই। সপ্তম শতকের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিলেন বানভট্ট। বানভট্ট তার ‘কাদম্বরী’ গ্রন্থে লিখেছেন, সেকালে বেশ্যারাই দেশের রাজাকে স্নান করাতো। এমনকি রাজার পরনের সব পোশাক বেশ্যারাই পরিয়ে দিত।অবশেষে বাড়িওয়ালা কুমুদিনী দেবী এসে আশ্রয় নেন খোকসা থানার পাশে বর্তমান যে স্থানটি ফিটুর মেস নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ওই জমিটি কিনে নেন জনৈক আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এভাবে খোকসার পতিতাবৃত্তির ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে।ডা. লুৎফর রহমান তার ‘মহাজীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘এই সমাজে যদি তাদের (গণিকাদের) প্রয়োজন নাই থাকত তাহলে তারা অনেক আগেই হারিয়ে যেত।’ প্রবীর কুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘কালিকা পুরোনোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি’ বইয়ের ৭২, ৮৬, ১০৮, ১২৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত, হিন্দুরা মনে করে, বেশ্যারা গড়াই অত্যন্ত প্রাচীন একটি নদী। অতীতে এর নাম ছিল গ তখনো ঢাকার সৃষ্টি হয়নি ঢাকা যখন বাংলাদেশের রাজধানীর স্বীকৃতি পায় তখন কুষ্টিয়াকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ১৯৪৪: সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন কুষ্টিয়া থেকে এভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। উপনাম কিংবা বংশসূচক নামকে সাধারণভাবে পদবি বলা হয়। পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষের নামের শেষে একটি পদবি যুক্ত হয়ে আছে। বাঙালির বংশ-পদবি উৎপত্তির ইতিহাস খুব বেশি প্রাচীন নয়। জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এল বাঙালির বংশ পদবি।
সেদিন ছিলো ৭১
১৯৭১ ভয়াবহ যুদ্ধ ঝাঁজাল মেশিন গান
কামান আর গোলা বারুদের শব্দ বিন্দু
বিন্দু রক্ত ঘাম কনিকার মাঝে প্রাণের
স্পন্দন কি যে ভয় হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে
আসছে প্রতিনিয়ত আমার উঠোন জুরে
যুদ্ধের ঝড়ো হাওয়ায় হিংস্র শঙ্খচিলের
দাপাদাপি দৌড়ে এলো কুচ কুচে কালো
রাজাকার গাঁয়ে খাকি শার্ট কি যে ভয়াবহ
সকুনের মতন পচা গন্ধের ঘ্রানে ঠুঁকরে
খেলো বিকালের গোধূলি বেলার সব সৌন্দর্য
ঠুঁকরে খেলো সুন্দর আকাশের চাঁদ তারা
জোছনায় খেলা করা জোনাকি ভয়াল থাবার
বিন্দু বিন্দু ঘাম রক্ত কনিকার মাঝে স্পন্দন
নেই হৃদপিণ্ডও বন্ধ হয়ে আসে মায়াবি জোছনা
রাতের চাঁদনি তিথি নেই শ্যামা চন্দ্রিমা আকাল
বেলা মুখ লুকিয়েছে মেঘে আজ প্রভাতও
ফ্যাকাশে লাগে স্যঁতসেতে আর রক্তের স্রোতে
কোথা থেকে যে না চেনা হানাদারের দল ডুবা
কেঁদা ভেঙ্গে উৎসব করে খায় লুটেপুটে স্পন্দন
নেই নেহি হৃদপিন্ডও ওহু কি যে ভয়াবহ সেই ৭১
লুট যায় গরু মহিষ লুট যায় ঘড় লুট যায় মা
বোনের ইজত টাকা পয়সা সব দরজার ফাঁক
যেসে মায়ের আঁচল ধরি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু
নয়নে চোখ ভাসি তুলিয়া ঢিলটি হাতে মারিলাম
মাথা পেচে টাস করে লেগে ফেঁটে গেল মাথা
খান রাজাকার দিলো ছুট নাহি খুঁজে পেল মুখ
চিনি আজও আমি তাদের এক খান কাগজেতে
মাথা উচু শির উচু মোটা মোটা বান্ডিল গোনে হাতে
লাগিয়ে দিয়ে থুথু বেশ বেশ মুক্তিযোদ্ধার বেস আহা
যে কি মধুর মাস শেষে তেল ডাল ঘরে বসে পেয়ে
যায় সাদা জামা ধোঁয়া পেন্ট পড়ে দোশের সেবা করে
হায় ফ্যাকাশে লাগে স্যঁতসেতে আর রক্তের স্রোতে
গ্রামের পর গ্রাম করে দিয়ে উজার আগুনে আগুনে
কোথা থেকে যে না চেনা হানাদারের দল ডুবা
কেঁদা ভেঙ্গে উৎসব করে খায় লুটেপুটে স্পন্দন
নেই নেহি হৃদপিন্ডও ওহু কি যে ভয়াবহ সেই ৭১ !!
মধ্যযুগে সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থার ফলে পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমান্তরালে বাঙালির পদবির বিকাশ ঘটেছে বলে মনে করা হয়।বাঙালির জমি-জমা বিষয় সংক্রান্ত কিছু পদবি যেমন- হালদার, মজুমদার, তালুকদার, পোদ্দার, সরদার, প্রামাণিক, হাজরা, হাজারী, মণ্ডল, মোড়ল, মল্লিক, সরকার, বিশ্বাস ইত্যাদি বংশ পদবি রয়েছে, যা হিন্দু -মুসলমান নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের একান্ত রূপ।বাঙালি মুসলমানের শিক্ষক পেশার পদবি হলো- খন্দকার, আকন্দ, নিয়াজী ইত্যাদি। আর বাঙালি হিন্দুর শিক্ষক পদবি হচ্ছে- দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চর্তুবেদী ইত্যাদি।এসবের বাইরে আরও কিছু পদবি আছে। যেমন- শিকদার, সৈয়দ, শেখ, মীর, মিঞা, গাজী, শহিদ, মোল্লা, দাস, খন্দকার, আকন্দ, চৌধুরী, ভূঁইয়া, মজুমদার, তরফদার, তালুকদার, সরকার, মল্লিক, মন্ডল, পন্নী, ফকির, আনসারী, দত্ত ইত্যাদি। এগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।সৈয়দ পদবি মূলত এসেছে নবি নন্দিনী হজরত ফাতেমা ও হজরত আলীর বংশধর থেকে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগের এই বংশের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র না থাকলেও বাংলাদেশের অনেক মুসলমান পরিবার সৈয়দ বংশ পদবি ব্যবহার করে নিজেদের সম্ভ্রান্ত ও কুলীন মুসলমান বলে দাবি করে থাকেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে সৈয়দ পদবির অপব্যবহার ও পক্ষেপণ ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। প্রকৃতপক্ষে সৈয়দ নন এবং পারিবারিক কোনো কুলীন পদবিও নেই অথবা পূর্ব পদবি ঐতিহ্য পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক- এমন অনেক বংশ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশেষে বাংলাদেশে সৈয়দ পদবি আরোপিতভাবে ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
শেখ আরবি থেকে আগত পদবি। সম্ভ্রান্ত মুসলমানদের সম্মানসূচক বংশ পদবি শেখ। যিনি সম্মানিত বৃদ্ধ অথবা যিনি গোত্রপ্রধান, তাকেই বলা হতো শেখ। হজরত মোহাম্মাদ (সা.) সরাসরি যাকে বা যাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন, তিনি বা তার বংশধরও শেখ নামে অভিষিক্ত হতেন অথবা শেখ পদবি লাভ করতেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে যারা শেখ পদবি ধারণ করেন, তারা এরকম ধারণা পোষণ করেন না যে, তারা বা তাদের পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন সৌদি আরব থেকে। বাঙালি সৈয়দ পদবি ধারীদের থেকে শেখ পদবিধারীদের এখানে একটা মৌলিক তাৎপর্যগত পার্থক্য রয়েছে। শেখ পদবি গ্রহণের নেপথ্যে রয়েছে ওই পূর্বোক্ত চেতনা। নরির হাতে মুসলমান না হলেও বাংলায় ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে যারা নতুন ধর্মকে গ্রহণ করে নেন; নও মুসলমান হিসেবে প্রাচীন ও মধ্যযুগে তারাই শেখ পদবি ধারণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের বংশের উত্তর সূরীরাই শেখ পদবি ব্যবহার করে এসেছেন। এমনিতে অন্য ধর্মের লোকের কাছে মুসলমান মানেই শেখ বা সেক। কেউ শেখ, কেউ সেক কিংবা শেখ এর রূপান্তর শাইখও ব্যবহার করে থাকেন।সুলতানি আমলে কয়েকটি মহাল নিয়ে গঠিত ছিল এক একটি শিক। আরবি শিক হলো একটি খণ্ড এলাকা বা বিভাগ। এর সঙ্গে ফারসি দার যুক্ত হয়ে শিকদার বা সিকদার শব্দের উদ্ভব হয়েছে। এরা ছিলেন রাজস্ব আদায়কারী রাজকর্মচারী। শব্দকোষে যাকে বলা হয়েছে শান্তিরক্ষক কর্মচারী। এরা শিক বন্দুক বা ছড়ি বন্দুক ব্যবহার করতেন বলে শিকদার উপাধী পেয়েছিলেন; সেই থেকে বংশ পরম্পরায় শিকদার পদবির বিকাশ ঘটে।মির বা মীর শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। আরবি শব্দ আমীর এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে মীর। সেই অর্থে মীর অর্থ দলপতি বা নেতা, প্রধান ব্যক্তি, সরদার ইত্যাদি। জিতে নেওয়া বা জয়ী হওয়া অর্থে মীর শব্দের ব্যবহার হতো। তবে মীর বংশীয় লোককে সম্ভ্রান্ত এবং সৈয়দ বংশীয় পদবিধারীর একটি শাখা বলে গবেষকরা মনে করেন।মিয়া মুসলিম উচ্চ পদস্থ সামাজিক ব্যক্তিকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত সম্ভ্রম সূচক শব্দ। এক অর্থে সকল মুসলমানের পদবিই হচ্ছে মিঞা। বাঙালি হিন্দুর মহাশয় এর পরিবর্তে বাঙালি মুসলমান মিয়া শব্দ ব্যবহার করে থাকে। মিঞা শব্দটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে। প্রভু বা প্রধান ব্যক্তি বুঝাতেও মিয়া শব্দের প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে গ্রামীণ প্রধান বা সর্দার অর্থের মিঞা পদবি হিসেবে বাঙালি মুসলমান সমাজে ঠাঁই পেয়েছে।মোল্লা এবং মুন্সী বাঙালির দুটো জনপ্রিয় পদবি। তাদের প্রসার প্রায় দেশব্যাপী। বঙ্গীয় শব্দকোষে মোল্লা শব্দের অর্থ করা হয়েছে মুসলমান পুরোহিত। বস্তুত এভাবে মসজিদে নামাজ পরিচালনার কারণেও অনেকে মোল্লা উপাধি পেয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, মোল্লা হচ্ছে তুর্কি ও আরবি ভাষার মোল্লা থেকে আগত একটি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞানবিশিষ্ট মহাপন্ডিত ব্যক্তি। অন্য অর্থে মুসলিম পন্ডিত বা ব্যবস্থাপক বা অধ্যাপক হলেন মোল্লা। পরবর্তীকালে মসজিদে নামাজ পরিচালনাকারী মাত্রই মোল্লা নামে অভিহিত হতে থাকেন। এখান থেকেই সাধারণত বংশ পদবি হিসেবে তা ব্যবস্থার হওয়া শুরু হয়। তারা সব জ্ঞানের জ্ঞানী না হওয়া সত্ত্বেও মোল্লা পদবি ধারণ করেন। যার ফলে ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ প্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে।
বাঙালি হিন্দু সমাজে দাস বা দাশ বংশ পদবির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যেসব হিন্দু সম্পদায়ের মানুষ পদবিতে দাশ লেখেন, তাদের পেশা ধীবর থেকে এসেছে বলে গবেষকরা মনে করেন। আর যারা দাস লেখেন তাদের পদবি স্রষ্টার ভৃত্য চেতনা থেকে এসেছেন।
মুসলিম সমাজের ফারসি শিক্ষক হিসেবে খোন্দকার বা খন্দকারের পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদিকে খোন্দকার পদবি এসেছে সামন্ত সমাজ থেকে পেশাজীবী হিসেবে। সাধারণভাবে খোন্দকার বা খন্দকার অর্থ হচ্ছে কৃষক বা চাষাবাদকারী। মনে করা হয় ফারসি কনদহ, যার অর্থ কৃষি- সাথে কার যুক্ত হয়ে কনদহকার> খনদহকার>খন্দকার হয়েছে। ভিন্ন মতে, খন্দকারের মূল উৎপত্তি সংস্কৃত কন্দ> খন্দ, যার অর্থ ফসল বলা হয়েছে। এই খন্দ এর সঙ্গে কার যুক্ত হয়েও খন্দকার> খোন্দকার হতে পারে। এতেও পূর্বের খন্দকার শব্দের উৎসের অর্থের তারতম্য ঘটছে না। আবার ফারসি ভাষায়, খোন্দকার বলে একটি শব্দ আছে, যার অর্থ শিক্ষক। সেখান থেকেও খোন্দকার পদবি আসা বিচিত্র কিছু নয়।খন্দকার ও আখন্দ বা আকন সমার্থক। আখন্দ ও আকন নামে যেসব পদবি তাও সম্ভবত খন্দকার পদবিরই রূপভেদ। খন্দকার>আখন্দ> আকন হয়ে থাকতে পারে। আবার ফারসি আখুন্দ থেকেও আখন্দ এসে থাকতে পারে। যার অর্থ শিক্ষক। তবে আকন্দ এসেছে আখন্দ থেকেই।সংস্কৃত চতুধারী শব্দ থেকে এসেছে বাংলা চৌধুরী শব্দ। এর অর্থ চর্তুসীমানার অন্তর্গত অঞ্চলের শাসক। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জমিদারদের পদবি হচ্ছে চৌধুরী। আবার অনেকে মনে করেন চৌথহারী, যার অর্থ এক চতুর্থাংশ রাজস্ব আদায়কারী, সেখান থেকে উচ্চারণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে চৌধুরী। সেদিক থেকে চৌথ আদায়কারী বা রাজস্ব আদায়কারী পদ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলার রাষ্ট্র ব্যবস্থার। বঙ্গীয় শব্দকোষ বলছে, চতুর যার অর্থ তাকিয়া বা মসনদ, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর (অর্থ ধারক) এবং এই দুয়ে মিলে হয়েছে চৌধরী আর তার থেকেই চৌধুরী। তবে তা মূলত হিন্দি ও মারাঠি শব্দ। জাতি ধর্ম-নির্বিশেষে চৌধুরী বংশ পদবি ব্যবহার করা হয় এদেশে। ব্রিটিশ-ভারতের প্রায় সর্বত্র এ পদবির অস্তিত্ব ছিল। কারণ, চৌধুরী ছিল সামন্ত রাজার পদবি।ভূঁইয়া বংশ পদবিটি এসেছে খোদ ভূমির মালিকানা অর্থ থেকে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় এর মধ্যে এ পদবির প্রচলন আছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে যারাই ভৌমিক, বাঙালি মুসলমান সমাজে তারা ভূঁইয়া হিসেবে পদবি ধারণ করেছেন। মূল সংস্কৃত শব্দ ভৌমিক > (প্রাকৃত) ভূমিকা > (বাংলা) ভূঁইয়া > থেকে ভূঁইয়া বা ভূঁঞা এসেছে। প্রাচীন বড় জমিদার বা সামন্ত রাজার উপাধিও ছিল ভূঁইয়া। প্রকৃতপক্ষে কুলীন বংশ পদবিই ছিল তা। আবার যেসব মানুষ আগে স্থান বিশেষে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বসতি ও চাষাবাদের পত্তন করেছেন, তারা স্থানীয় জমিদার রাজার কাছ থেকে ভূঁইয়া নামে অভিহিত হয়ে ঐসব জমি জমার স্বত্ব লাভ করেছেন।
মজুমদার পদবির মূল আসলে মজুনদার। এর মূল ফারসি শব্দ হচ্ছে মজমু আনদার। রাষ্ট্রের ও জমিদারির দলিল পত্রাদির রক্ষক রাজকর্মচারীর জন্যে এই পদবি সংরক্ষিত ছিল। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমগ্র বাংলাদেশে মজুমদার পদবির ব্যবহার লক্ষণীয়।
আরবি তরফ এবং ফারসি দার মিলে তরফদার শব্দের সৃষ্টি। রাজ্যের খাজনা আদায়ের মহালে তদারককারী বা খাজনা আদায়কারীর উপাধি ছিল তরফদার। এই পদবি ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ রাজকার্য পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, সেখান থেকেই এই বংশ পদবি উৎপত্তি ও প্রচলন। অন্যমতে তরফদার তরফের রাজস্ব আদায়কারী লোক; তরফের মালিক; পদবি বিশেষ।তালুকদার আমাদের দেশে পরিচিত একটি বংশ পদবি। বাংলাদেশে জমিদারির পরই তালুক ভূ-সম্পত্তির একটি বিভাগ। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব ও ভুমি সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যেসব পদবির উৎপত্তি ও বিস্তার তার মধ্যে তালুকদার হচ্ছে অন্যতম পদবি। তালুক শব্দ থেকেও এই পদবির মর্মাথ উপলব্ধি করা সম্ভব। আরবি শব্দ তা’ আল্লুক, যার অর্থ ভূ-সম্পত্তি এবং এর সঙ্গে ফারসি দার যুক্ত হয়ে (তা’আল্লুক+দার) তালুকদার শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, যিনি তালুকদার, তিনি জমি ও ক্ষুদ্র ভূ-সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিতেন সরকারের কাছ থেকেও যেমন, তেমনি জমিদারের কাছে থেকেও। ফলে তিনি হতেন উপজমিদার সেই অর্থেই এসেছে তালুকদার।সরকার শব্দটি ফারসি থেকে আগত। এর অর্থ প্রভু, মালিক, ভূস্বামী, শাসনকর্তা, রাজা। অর্থ আদায় ও ব্যয় সংক্রান্ত কর্মচারী ও সরকার। মোগল আমলে এদেশের স্থানীয় রাজকর্মচারীদের এ পদবি দেওয়া হতো। মোট কথা প্রধান কর্মচারী এবং সম্পত্তি দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে সরকার বলা হতো। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই এ পদবির ব্যবহার আছে।আরবি মালিক বা মলিক শব্দ থেকে এসেছে মল্লিক বংশ পদবি। ফারসি মালিক শব্দজাত মল্লিক ভূম্যাধিকারী বা জোতদারের উপাধি। গ্রামপ্রধান বা সমাজের প্রধান ব্যক্তি মালিক। আবার লিপিকুশল রাজকর্মচারীকে মোগল আমলে মল্লিক বা সুলেখক আখ্যা দেওয়া হতো বলেও আমরা জানতে পারি। হয়তোবা সেই থেকে মল্লিক বংশ পদবি এসেছে।বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সমাজে সমানভাবে ব্যবহৃত হয় মণ্ডল পদবি। বাংলাদেশে অতীতকাল থেকে গ্রামের অনানুষ্ঠানিক এবং সাধারণভাবে গ্রাম-প্রধানকে বলা হয় মণ্ডল। বাংলায় মণ্ডলরা আগে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। মণ্ডলীয় কাজ করে তারা অনেক অধিকার ভোগ করতেন। খাজনা আদায়কারী ও রায়তদের মধ্যস্থতা করা কিংবা গ্রামীণ বিবাদ আপস-মীমাংসা করতে মণ্ডলরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতেন। কোনো কোনো সময় তাদের অধীনে পাটোয়ারি, তহসিলদার, চৌকিদার ইত্যাদি কর্মচারী কাজ করতেন। সরকার ও রায়তদের মধ্যবর্তী মানুুষ হিসেবে মণ্ডলরা অধিক পরিচিত ছিল।মুসলমানদের মধ্যে সন্ন্যাসবৃত্তি থেকেই এসেছে ফকির পদবি। মরমী সাধকরা গ্রহণ করতেন ফকির পদবি। এটি আরবি শব্দ, যার মূল অর্থ নিঃস্ব। আবার আরবি ফকর শব্দের অর্থ দারিদ্র্য। এ থেকে ফকির শব্দের উৎপত্তি। ফকির এবং পার্শি দরবেশ ব্যক্তিগণ সাধারণত এদেশে ফকির নামে পরিচিত। বিশেষ কোনো ধর্ম মতের একান্ত অনুসারী না হয়ে যারা সকল ধর্মের মূলনীতি নিয়ে আত্মতত্ত্বের সন্ধান করেন তাদেরকেও ফকির বলা হয়। আবার সুফি বা বাউল তত্বের ধারকরাও ফকির।বাংলা শব্দের বিশেষজ্ঞ হরিচরণ বন্দ্যোপধ্যায়ের মতে- ঠাকুর শব্দের মূল হচ্ছে (সংস্কৃত) ঠাক্কুর তার থেকে > (প্রকৃত) ঠকুর > (বাংলা) ঠাকুর এসেছে। পদবিগত দিক থেকে তা ব্রাক্ষণের পদবি বিশেষ, এমনকি ক্ষত্রিয়েরও উপাধি এটি। মধ্য যুগের কাব্য চৈতন্য ভাগবত উদ্ধৃত করে লেখক বলেছেন, তা বৈঞ্চবেরও উপাধি। যেমন, হরিদাস ঠাকুর। পাচক ব্রাক্ষণও এক প্রকার ঠাকুর বলে পরিচিত। তবে আহমদ শরীফ সম্পাদিত সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে, সংস্কৃত ঠাক্কুর থেকে ঠাকুর এলেও এর মূলে ছিল তুর্কি শব্দ। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান উভয়েই এই পদবি ব্যবহার করে।গাজী শব্দটির উৎপত্তি আরবি গজওয়া হতে। গাজী শব্দের অর্থ যুদ্ধে বিজয়ী বীর। গাজী বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জিহাদে বা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মরে গেলে শহিদ বলা হয়। বিজয়ী হয়ে ফিরে এলে তাদেরকে গাজী উপাধি দেওয়া হতো। এরা মুসলিম সমাজে সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব।১৫ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির শোক দিবস। এই দিনটিতে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ইতিহাস মানে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। তার জীবন ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। এই মহান মানুষটি জীবনে যাই করেছেন তার সবই দেশের জন্য করেছেন। তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল দেশের সার্থে। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।১৯২০ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান শেখ মুজিব। বাবা-মা তাকে খোকা বলে ডাকতেন। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশনারী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতায় অপারেশন করা হয় এবং চক্ষুরোগের কারণে তার লেখাপড়ার সাময়িক বিরতি ঘটে। ১৯৩৭ সালে চক্ষুরোগে চার বছর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার পর শেখ মুজিব পুনরায় স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৮সালে ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলাতুননেছার আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী।
১৭ মার্চ, ১৯২০: গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।১৯২৭: সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতিরজনকের প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রজীবনের সূচনা হয়।১৯২৯: বঙ্গবন্ধুকে গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমির (বা পাবলিক স্কুলে) তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
১৯৩৪: মাদারীপুরে ইসলামিয়া হাইস্কুলে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু বেরীবেরি রোগে আক্রান্ত হন।১৯৩৭: অসুস্থতার কারণে বঙ্গবন্ধুর লেখাপড়া বন্ধ ছিলো, আবার তা শুরু হয়।১৬ জানুয়ারি, ১৯৩৮: বাংলার প্রধামন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়।১৯৩৮: মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বেগম ফজিলাতুননেসার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।১৯৩৯: সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করার দু:সাহসের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথম কারাবরণ করেন।১৯৪২: অসুস্থতার কারণে একটু বেশীবছর বয়সে বঙ্গবন্ধু এন্ট্রাস (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই বছরেই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪নম্বর কক্ষে তিনি থাকতে শুরু করেন।১৯৪৪: কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। এই বছরই ফরিদপুর ডিস্টিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক নিযুক্ত হন।১৯৪৬: বঙ্গবন্ধু বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় কলকাতা ইসলামি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন। এই বছরই প্রদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৪৭ : বঙ্গবন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ : ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৪৮ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ : তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন।২ মার্চ, ১৯৪৮ : রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১১ মার্চ, ১৯৪৮ : রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট আহবানকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন।১৫ মার্চ, ১৯৪৮ : বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তিপান।১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ : ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য বঙ্গবন্ধু আবার গ্রেপ্তার হন।
২১ জানুয়ারি, ১৯৪৯ : বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তিপান।৩ মার্চ, ১৯৪৯ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।২৯ মার্চ, ১৯৪৯ : আন্দোলনে যোগ দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।২০ এপ্রিল, ১৯৪৮ : বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সৃষ্ট আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।২৩ জুন, ১৯৪৯ : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।২৭ জুলাই, ১৯৪৯ : বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তিপান। মুক্তি পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।১৯৪৯ : পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন।১ জানুয়ারি, ১৯৫০ : এই আন্দোলনের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ : রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধু কারাগারে অনশন শুরু করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ : রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চলে। শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকসহ অনেকে। জেল থেকে বঙ্গবন্ধু এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং একটানা ৩ দিন অব্যাহত রাখেন।২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ : টানা অনশনে অসুস্থ বঙ্গবন্ধুকে স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তিদেয়া হয়।১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩ : প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলীম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ : প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।১০ মার্চ, ১৯৫৪ : সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন।২ এপ্রিল, ১৯৫৪ : যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।১৪ মে, ১৯৫৪ : বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় বয়:কনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
৩০ মে, ১৯৫৪ : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী সভা বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু এ দিনই করাচী থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং গ্রেফতার হন।২৩ নভেম্বর, ১৯৫৪ : বঙ্গবন্ধু জামিনে মুক্তি পেলে জেল গেটেই তাকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৫৪ : বঙ্গবন্ধু কারাগার থেমে মুক্তিপান।৫ জুন, ১৯৫৫ : বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৭ জুন, ১৯৫৫ : ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দাবী করেন।২১ অক্টোবর, ১৯৫৫ : আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ধর্ম নিরপেক্ষতা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
৭ অক্টোবর, ১৯৫৮ : জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীর উপর আক্রমন এবং তার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারী করেন।১২ অক্টোবর, ১৯৫৮ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়।৫ অক্টোবর, ১৯৫৯ : বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কিন্তু তার গতিবিধির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। এ সময় তিনি বার বার গ্রেপ্তার হন এবং ছাড়া পান।২ জুন, ১৯৬২ : চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন শেখ মুজিব মুক্তি লাভ করেন।২৫ জানুয়ারি, ১৯৬৪ : বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবত করা হয়।
৫, ১১ মার্চ, ১৯৬৪ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধি দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।২৬ জুলাই, ১৯৬৪ : বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধি দল কঅপ (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি গঠিত হয়।)১৯৬৫ : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কঅপ এর পক্ষ থেকে মিস ফাতিমা জিন্নাহকে প্রার্থী দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪দিন আগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।১৮ মার্চ, ১৯৬৬ : আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এরপর তিনি ৬ দফার পক্ষে দেশ ব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন এ সময় তাকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বার বার গ্রেফতার করা হয়। ৩ মাসে তিনি ৮ বার গ্রেফতার হন। শেষ বার তাকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়।
৩ জানুয়ারি, ১৯৬৮ : পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামী করে মোট ৩৫জন বাঙ্গালী সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।২৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ : নিজেকে নির্দোষ দাবী করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পড়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে আন্দালন গন অভুঙ্খানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবী উপস্থাপন করে।৩০ জানুয়ারি, ১৯৬৯ : উদ্ভুত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানী জান্তা সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন।১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ : ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামী সাজেন্ট জহুরুল হককে নির্মম ভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধ ভাঙ্গা বন্যার মতো রাস্তায় নেমে আসে।২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ : তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ : ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে এক বিশাল সম্বর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে। ঐ সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়।১০ মার্চ, ১৯৬৯ : রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। গোল টেবিলে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নেন। তবে ঐ বৈঠক ব্যর্থ হয়।২৫ মার্চ, ১৯৬৯ : রাওয়াল পিন্ডি গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হবার প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারী করেন।
২৮ নভেম্বর, ১৯৬৯ : জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ১ জানুয়ারী থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন। ঐ বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘোষণা করেন।১ জানুয়ারি, ১৯৭০ : ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন।
৪ জুন, ১৯৭০ : নির্বাচনকে সামনে রেখে মতিঝিল ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ একক ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।৫ জুন, ১৯৭০ : পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী এলাকা বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসন আর জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন নিদির্ষ্ট করা হয়।১৫ আগস্ট, ১৯৭০ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন যথাক্রমে ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর।৮ অক্টোবর, ১৯৭০ : ইসলামাবাদ থেকে ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতীক ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। স্মরনীয় যে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিলো নৌকা।
২৮ অক্টোবর, ১৯৭০ : বঙ্গবন্ধু বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনী ভাষণ দেন। তিনি বলে, প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। তার সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের বিকাশ । তিনি দেশবাসীর কাছে ছয় দফার পক্ষে ম্যান্ডেট চান।
১২ নভেম্বর, ১৯৭০ : পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ ঝড় এবং জলোচ্ছাসে ১০/১২ লাখ মানুষ মারা যান। বঙ্গবন্ধু তার নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এই অঞ্চলের জনগনের প্রতি চরম উদাসীনতা তুলে ধরেন। এই সময় সোনার বাংলা শ্মশান কেনো শিরোনামে তথ্য সম্বলিত একটি পোষ্টার জাতিকে নাড়া দেয়।৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ : বন্যা-দুর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন।১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ : প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ২৯৮টি আসন লাভ করে।৩ জানুয়ারি, ১৯৭১ : আওয়ামী লীগের সকল নির্বাচিত সদস্য ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রনয়ন তথা ৬ দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি এই রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে বাঙালী জাতির মুক্তির সংকল্প ব্যক্ত করেন। শপথ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সংগীতের পর জয় বাংলা বাংলার জয়। গানটি পরিবেশিত হয়।১০ জানুয়ারি, ১৯৭১ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সংগে তিন দফা বৈঠক করেন। ৪দিন পর ফিরে আসার সময় তিনি বলেন শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৭১ : জুলফিকার আলী ভূট্টো ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সংগে কয়েকদফা আলোচনা করেন। কিন্তু ভূট্টোর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়।১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ : এক সরকারী ঘোষণায় বলা হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ৩ মার্চ ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছেন।১ মার্চ, ১৯৭১ : জাতীয় পরিষদ অধিবেশনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক শুরু হয় হোটেল পূর্বানীতে। ঐ দিনই আকস্মিক ভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষনা করেন। সারা বাংলা ক্ষোভে ফেটে পরে। বিক্ষুদ্ধ জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজপথ। বঙ্গবন্ধু এটাকে শাসকদের আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহবান করেন।
২ মার্চ, ১৯৭১ : ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বত:স্ফুর্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। জান্তা সরকার ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ জারী করেন।৩ মার্চ, ১৯৭১ : বিক্ষুদ্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান ৩জন আহত হন কমপক্ষে ৬০জন। এই সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে।৭ মার্চ, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষনে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষনে ষ্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত। সারাদেশে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসযোগ আন্দোলন।১৬ মার্চ, ১৯৭১ : বিস্ফোরণমুখ বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তার গাড়ীতে কালো পতাকা উড়িয়ে হেয়ার রোডে প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার জন্য যান।
১৭ মার্চ, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলে এদেশে জন্ম দিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি আমার জনগনই আমার জীবন।২৩ মার্চ, ১৯৭১ : কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষনা দেন। সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারী ভবনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারী ছুটি ঘোষনা করেন।২৫ মার্চ, ১৯৭১ : পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালো রাত্রি ২৫ মার্চ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। তার সাড়ে এগারটায় শুরু হয় অপারেশন সার্চ লাইট। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা।২৬ মার্চ, ১৯৭১ : ১২-৩০ মিনিট ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুরুল আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বানী স্বকন্ঠে প্রচার করেন। পরে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামে অবস্থিত অষ্টম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান ঐ ঘোষণা পূণ:পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচীতে নিয়ে যাওয়া হয়।২৭ মার্চ, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন এবং স্বাধীনতার ঘোষণার আলোকে বীর বাঙালী গড়ে তোলে স্বত:স্ফুর্ত প্রতিরোধ। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবজ্জল অধ্যায়।
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ : তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার (বৈদ্যনাথ তলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মদ ঘোষণা করেন আজ থেকে (১৭ এপ্রিল) বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর এবং অস্থায়ী রাজধানী মুজিব নগর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।২৫ মে, ১৯৭১ : ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতে শুরু করে। সংগঠিত হয় প্রবাসী সরকার। ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়। এই কেন্দ্রের সিগনেচার টিউন ছিলো জয় বাংলা বাংলার জয়। কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারিত হতে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শোন একটি মুজিবরের কন্ঠে…… গানটি বাঙালীর উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়।৩ আগস্ট, ১৯৭১ : পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগষ্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানী জান্তা সরকার বিদেশী আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে।১০ আগস্ট, ১৯৭১ : পাকিস্তানী জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী একে ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষনের টেপ শোনানো হয় তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং ব্রোহীকে অব্যহতি দেন। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরী হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে স্পর্শ করতে থাকে।১১ নভেম্বর, ১৯৭১ : বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খানের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার সংগে ছিলেন ভূট্টো এবং জেনারেল আকবর। ইয়াহিয়া করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে বঙ্গবন্ধু বলে দুঃখিত ও হাতে বাঙালীর রক্ত লেগে আছে ও হাত আমি স্পর্শ করবো না। এ সময় অনিবার্য বিজয়ের দিকে এগুতে থাকে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ : বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন লায়ালাপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সংগে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঐ সমঝোতা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করেন।১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ : ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালী জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃংখল থেকে। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায় স্বাধীনতার স্থাপতি তখন নির্জন কারাগারে।৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ : পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচীতে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে।৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ : বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারী ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌছেন। তার হোটেলের সামনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন আমি আমার জনগনের কাছে ফিরে যেতে চাই।১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ : সকালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের আগ্রহে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর এক বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লী পৌছালে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধু বলেন- অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে। ঐ দিন বিকেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। লাখো মানুষের জনস্রোত, বাঁধভাঙ্গা আবেগে অশ্রসিক্ত জাতিরপিতা বলেন আজ আমার জীবনের স্বাদপূর্ণ হয়েছে ।ঐ দিন জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু হৃদয়কাড়া এক ভাষণ দেন। ঐ রাতেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ : দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।১২ মার্চ, ১৯৭২ : স্বাধীনতার মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।২৬ মার্চ, ১৯৭২ : শোষনহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়।২০ এপ্রিল, ১৯৭২ : শুরু হয় গণপরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষনা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।৪ নভেম্বর, ১৯৭২ : গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। এ উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেন বিজয়ের ৯ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার দেয়ার অর্থ হলো জনগণের উপর বিশ্বাস করি।১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ : নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাতিল করা হয় গণপরিষদ।৭ মার্চ, ১৯৭২ : নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩০০টির মদ্যে ২৯২টি আসনে বিজয়ী হয়।৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ : আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়।২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাঙালী নেতা হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিণষষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেন।
২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ : দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাশ করেন। এই বিলের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ : রাষ্ট্রপতি এক ডিগ্রীর মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সম্মিলনে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ : স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শহীদ হন।