জয়গন বেগম। বয়স প্রায় ৭০ ছুঁইছুই। ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট তার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে ভোটার তথ্য হালনাগাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ৯ বছর ধরেই জীবিত রয়েছেন জয়গন বেগম। কাগজে-কলমে মৃত দেখানো ওই বয়োজ্যেষ্ঠ নারী পরিবারের সঙ্গে কাজকর্ম করছেন। সবার সঙ্গে মিশছেন। মৃত দেখানোর কারণে তিনি কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এদিকে, এছাড়াও ২০২২ তথ্য হালনাগাদে আরো ২০৩টি ডাটাবেইজের তথ্য ভুল রয়েছে। জীবিত ব্যক্তিরা মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের সঠিক ডাটাবেইজ খুঁজে বের করে জীবিত (সংশোধন) করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃদ্ধা জয়গন বেগম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মৃত ইউসুফ আলীর স্ত্রী। এমন ভুলের জন্য তথ্য হালনাগাদকারী দায়ী করছেন স্বজনরা।
জয়গন বেগমের প্রতিবেশী নাতনি রোমা আক্তার বলেন, আমার দাদীর নামে একটি বিধবা ভাতা কার্ড ছিল। এক বছর আগে সেই বিধবা কার্ডের ভাতা উঠাতে গেলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয় দাদী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তারপর নির্বাচন অফিসে গেলে সেখানে ভোটার আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বর সার্চ দেওয়া হয়। আমার জীবিত দাদীকে সেখানে মৃত দেখানো হয়েছে। এ কারণে দাদীর ভাতা বন্ধ রয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রানী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভোটার হালনাগাদ মৃত তালিকায় আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ১৯ মার্চ মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জীবিত থাকার সনদপত্রসহ আবেদন করতে বলা হয়। এরপর ধোপাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে গত ২০ মার্চ মৃত থেকে জীবিত হওয়ার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন। সেই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবিত্রী রানী মারা যাননি।
একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউপির জোত বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই দাসের ছেলে দীপক দাস, গান্দাইল গ্রামের আবু হানিফা ও মনতলা গ্রামের রোকেয়া বেগম ও পৌরসভার গাংগাপাড়া গ্রামের আমান আলীর ছেলে শাফিকুল ইসলামসহ এ রকম ২৭ জন ব্যক্তিতে ভোটার তথ্য হালনাগাদে ১২ নম্বর ফরমে মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণে স্কুল-কলেজে সন্তানদের ভর্তি, বয়স্ক ভাতার টাকা উঠানো, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা এবং ব্যাংক সেবাসহ জরুরি নানান সেবা থেকে মাসের পর মাস বঞ্চিত হয়েছেন।
অন্যদিকে এমন ভুয়া তথ্যের কারণে জীবত থেকেও মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভাতা বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলতে না পেরে হয়রানির শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সংশোধন বিশেষ ফরমে আবেদন করে মৃত তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে জীবিত হতে সক্ষম হয়েছেন। ডাটাবেইজে ভুলে ভরা তথ্যে শিকার অন্যান্যরাও মৃত থেকে জীবিত হওয়ার আবেদন করলে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসসহ সংশ্লিষ্টরা ভুল সংশোধনে সহযোগিতা করছেন।
গোপালপুর নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারি নিয়ম মোতাবেক মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাদের সম্মানজনক সম্মানি, তথ্য হালনাগাতে প্রশিক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন। তাদের গাফিলতি কারণে জীবিত ব্যক্তিদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০০- ২০২২ সাল পর্যন্ত এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৭ জন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়। অথচ পরে জানতে পারি তারা জীবিত আছেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের জীবিত করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ তথ্য হালনাগাদে আরো ২০৩টি ডাটাবেইজের তথ্য ভুল রয়েছে। জীবিত ব্যক্তিরা মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের সঠিক ডাটাবেইজ খুঁজে বের করে জীবিত (সংশোধন) করার চেষ্টায় কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত তারা জীবিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
গোপালপুর ইউএনও আসফিয়া সিরাত জানান, ভোটার হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা ২০৩ জন বিভিন্ন বয়সী জীবিত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ভোটার হালনাগাদ তালিকায় ১২ নম্বর ফরমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এর মধ্যে ২৭ জনের ডাটাবেইজ এ পর্যন্ত সংশোধন করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভোটার হালনাগাদের ডাটাবেইজ দেখে তা যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তথ্য সংগ্রহকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।