আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ফের স্থগিত হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, বইছে মুখরুচোক গুঞ্জন। স্থানীয়রা বলছে, আগামি ২১ মার্চ তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ঘোষণা করা হয়েছিল,তবে তৃণমুলের দাবির মুখে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। তৃণমুল বলছে, খয়ের খাঁ মুক্ত করতে
আগে দলে শুদ্ধি অভিযান পরে কমিটি, তারা আর ‘খয়ের খাঁ’ নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। এসব বিবেচনায় আগামি সম্মেলনকে দলে শুদ্ধি অভিযান বলে মনে করছে সংশ্লিস্টরা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক টানা তৃতীয় মেয়াদ ক্ষমতায় খাকায় তানোর আওয়ামী লীগে
পশ্চিমের শতবর্ষী, পূর্বপাড়ার জাপানি মাহাঙ্কাল, দক্ষিনের ধল্যা ও মধ্যপাড়ার বউ হারানো বঁকুঁ এবং হেডকোয়ার্টারের নরসুন্দরসহ প্রচুর খয়ের খাঁ, আগাছা, পরগাছা ও শুবিধাবাদী টাউট-বাটপার ঠাঁই নিয়েছে দলে। এদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ। এদিকে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরপরই অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরীফ খান ও সাইফুল আলম ওরফে মুজিবুর রহমান
বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অনেক দায়িত্বশীল নেতার নিজ ভোটকেন্দ্রে দুর্বল প্রার্থীর হাতুড়ী প্রতিকের কাছে নৌকা প্রতিকের ভরাডুবি হয়েছে, কেনো হয়েছে, কারা নৌকার ভরাডুবি ঘটিয়েছে ইত্যাদি এসব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে, দাবী উঠেছে এসব বেঈমান-বিশ্বাসঘাতকদের যারা আওয়ামী লীগের চাদর গায়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের হয়ে কাজ করেছে এদের দল থেকে ছুড়ে ফেলে আদর্শিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ব্যতিত বিকল্প নাই। তানোরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে শিগগির শুদ্ধি অভিযান বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন বইছে। শুদ্ধি অভিযানে কি হয় না হয় তা নিয়ে আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতার মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমপাড়া এবং পূর্বপাড়ার দুই বিশ্বাসঘাতক ও মতলববাজ বগী নেতার কপাল পুড়ছে বলে আলোচনা রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল একত্রিত হয়ে দলের শৃংঙ্খলা ভঙ্গ ও দলীয়কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগে একশ্রেণীর নেতার বিরুদ্ধে জেলার সভাপতি ও দলের নীতিনির্ধারক মহলে নালিশ করায় এসব নেতাদের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্কের সূত্রপাত হয়েছে বলে একাধিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সুত্র বলছে দলের দায়িত্বশীল সাংগঠনিক পদে থেকেও যারা দলের কর্মকান্ডে সক্রিয় না হয়ে গোপণে দল, নেতা ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল এমনকি একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি অবস্থান ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং নিজের আখের গোছাতে আওয়ামী লীগের চাদর গায়ে প্রতিপক্ষের কাজ করেছে এমন নেতাদের ছুড়ে ফেলে হবে। তৃণমূলের দাবী তারা কথিত বড় নেতা নয় আদর্শিক, দল, নেতা ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যশীল, পরীক্ষিত-নিবেদিতপ্রাণ বিশস্তদের নেতৃত্বে দেখতে চাই।
সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর জনবিচ্ছিন্ন বগি (আক্যামা) নেতা নিজেদের আদর্শিক দাবি করে আদর্শহীন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় দলটির তৃণমূলের নেতা ও কর্মী-সমর্থকগণ আগে এদের বহিঃস্কার ও পরে কমিটি বা নতুন নেতৃত্ব দিতে নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধ করেছেন। তাদের দাবী যতো বড় প্রভাবশালী নেতাই হোক যারা দায়িত্বশীল পদে থেকেও দায়িত্ব পালন করে না জাতীয় সংসদ-জেলা পরিষদ-
উপজেলা, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চাদর গায়ে দিয়ে আওয়ামীবিরোধীদের পক্ষে কাজ করেছে এমন নেতার নেতৃত্ব তারা চাই না বিশেষ করে পশ্চিম পাড়া ও পূর্বপাড়ার বগী নেতৃত্ব তারা আর মানবেন না। সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি হবার খোয়াব দেখে, অথবা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) হবার যোগ্যতা নাই এমন নেতা সরকার দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বিষাদাগার, তৃণমূলে দলীয়কোন্দল সৃষ্টির অপপ্রয়াস ও এমপিদের চাপে রেখে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সঙ্গে গোপণ আঁতাত করে দলের তৃণমূলে কোন্দলের বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। আবার অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, দল, নেতা ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য ভূলে গিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে দলীয় স্বার্থকে জঞ্জালি দিয়ে আদর্শিক পরিচয়ে আদর্শহীন কর্মকান্ড করেছে এমন নেতাদের তালিক তৈরী ও তাদের চিহ্নিত করে ছুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ব্যাপক প্রচার রয়েছে। অপরদিকে এমন খবর প্রচারের পর পরই তৃমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পরম স্বস্তি ফিরে এলেও চরম অস্বস্তি দেখা দিয়েছে একশ্রেণির বগি নেতা ও তাদের অনুসারিদের মধ্যে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থানীয় নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে এমপিদের ওপর প্রভাব বিন্তার করে অবৈধ সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে দলে কোন্দল সৃষ্টি, আওয়ামী লীগের সম্ভবনাময় গোছানো ভোটের মাঠ নস্ট ও আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সঙ্গে গোপণ সক্ষ্যতা করেছে সেসব নেতার নামের তালিকা দলের নীতিনির্ধারক মহলের হাতে জমা পড়েছে। আবার যারা দায়িত্বশীল সাংগঠনিক পদে থেকেও কোনো দায়িত্বপালন পালন বা সাংগঠনিক কর্মকান্ড না করে এড়িয়ে পৃথক বলয় সৃষ্টির তৎপরতা করেছে তাদের চিহ্নিত করে ছুড়ে ফেলার সিদ্ধন্ত নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম ও আমজনতার দল দলীয় স্বার্থ রক্ষায় বির্তকিত যে কাউকে যেকোনো সময় ছুড়ে ফেলতে পারেন সেই সক্ষমতা আওয়ামী লীগের রয়েছে কেননা আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল এমন কথাও নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তানোরের কলমা ইউপি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ নেতা আতাউর রহমান বলেন, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এবার আদর্শিক নতুন নেতৃত্বে আসছে এটা সময়ের দাবি। তিনি বলেন, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক একাদ্বশ জাতীয় সংসদ -জেলা পরিষদ, উপজেলা ও ইউপি নির্বাচন এবং দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতিশীল করতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।#