০৪-১২-২০২১
দলীয় প্রতিকে স্থানীয় নির্বাচন সমাজকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএলডিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিমউদ্দিন আল আজাদ বলেন, স্থানীয় সরকার কাঠামোর মূল ভিত্তি হচ্ছে তার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হবেন সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানিত ব্যক্তি। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দেশের সমাজ ব্যবস্থা এখন ধ্বংসের পথে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে সচেতন নাগরিক মঞ্চ আয়োজিত “দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন ও তৃণমূলে সহিংসতা; দায় কার?”-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার পরিণতিতে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতিতে কোনও সম্প্রীতি নেই, নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী পালনই হচ্ছে রাজনীতির মূলমন্ত্র। দলের জন্য, দেশের জন্য রাজনীতি একেবারেই হারিয়ে গেছে। তৃণমূলে সন্ত্রাস বেড়েছে ২০ গুণ। জনগণের এসব নির্বাচনে কোনও আগ্রহ নেই। দলীয় সন্ত্রাসীরা নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় নির্বাচন।
মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গর্জো’র সভাপ্রধান সৈয়দ মঈনুজ্জামান লিটু’র সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি-জেপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকী, স্বাগ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ গণ আজাদী লীগ মহাসচিব মোহাম্মদ আতাউল্লাহ খান, মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন এফডিপি আহ্বায়ক ও মঞ্চের সদস্য সচিব ড. এ আর খান, এনডিএম সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন নুরুজ্জামান হীরা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিডিপির সভাপতি সামছুল আলম চৌধুরী সুরমা, বিজিএ চেয়ারম্যান এ আর এম জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিপিপির চেয়ারম্যান অধ্যপক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান , নারী নেত্রী রোখসানা আমিন সুরমা, বিএইডিপি সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিএমএ সভাপতি খাজা মুহিব্ উল্লাহ শান্তপুরী, এফডিপুর মহাসচিব শাহেদ আহমদ শ্রাবন, মোঃ মাসুদ হোসেন, মোঃ গোলাম মোস্তফা সরকার প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকী বলেন, আইনগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই শুধু রাজনৈতিকভাবে হওয়ার কথা, এর প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রশাসন ভেঙে পড়ায় এমপিকে এখন করতে হয় স্থানীয় প্রশাসনের কাজ। এদের সবার কাজ প্রদত্ত দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেউ আইনগত চ্যালেঞ্জ করলে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন হুমকির মধ্যে পড়বে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা বাড়ছেই। রক্তাক্ত ভোটযুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি। এমন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠামিশ্রিত পরিস্থিতির মধ্যে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচন ঘিরে এমন রক্তক্ষয়ী সহিংসতার প্রধান কারণ হচ্ছে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠান। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণেই তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই দলীয় প্রতীক ছাড়াই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এখন সময়ের দাবী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আতাউল্লাহ খান বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানেই সরকারদলীয় সমর্থকদের অলিখিত বাড়তি সুবিধা। তারপরও আগে ইউপি নির্বাচনে লড়তেন সমাজের নেতৃস্থানীয় লোক এবং তাদের মধ্য থেকে জনপ্রিয়তা, সরকারি দলের আনুকূল্য মিলিয়ে যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হতেন। কিন্তু আইনগত বাধা না থাকলেও দলমত নির্বিশেষে মানুষ যাদের ভালোবাসে এমন ভদ্রলোকরা এখন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। কারণ, তাদের জয়ী হওয়ার পথ অনেকটা রুদ্ধ এখন। দলীয় মনোনয়ন যারা পাবেন, তারাই নির্বাচিত হবেন—এটা এখন প্রতিষ্ঠিত।