নিজস্ব প্রতিবেদক :: হারিয়ে যাওয়া চেকের মামলায় দিশেহারা মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান। মিজানের বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকায়। প্রায় ১০ বছর যাবৎ মৎস্য ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত মিজান। মিজান বর্তমানে বায়া মৎস্য আড়ৎ সমিতির সভাপতি।
বর্তমানে মৎস্য ব্যবসায়ী মিজান চেকের মামলায় মাসে ২/৩ বার হাজিরা দিচ্ছেন রাজশাহী আদালতে। কিন্তু সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, কি কারনে এবং কিভাবে প্রতারনার শিকার হয়েছেন মিজান।
সার্বিক বিষয়ে অনুসন্ধানে গেলে রাজশাহী বায়া মৎস্য আড়ৎ সমিতির সকল মৎস্য ব্যবসায়ী জানান – বায়া বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী আলিম এর কাছ থেকে লাভের উপরে অর্থাৎ সুদের উপর ১০ লাখ টাকা কর্য করেন মৎস্য ব্যবসায়ী মিজান।এই ১০ লাখ টাকার বিপরীতে মিজান ব্যবসায় আলীমকে সিগনেচারসহ ২টি ব্ল্যাংক চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে আলিম উক্ত টাকার বিনিময়ে ৪ বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা সুদসহ পরিশোধ করেন।
যেহেতু ব্যবসায়ী আলিম ও মিজান একই এলাকার ব্যবসায়ী তাই তারা কোন প্রকারের স্ট্যাম্পে কিংবা কাগজে চুক্তিনামা করেন নাই। কেননা উক্ত টাকার সাক্ষী হিসেবে বায়া মৎস্য সমিতির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মৎস্য ব্যবসায়ী মিজান, ব্যবসায়ী আলিমের সকল টাকা শোধ করলেও মিজানকে তার সই করা ব্যাংকের চেক ফেরত দেন নাই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আলিম ২০২১ সালে ও ২০২২ সালে মিজানের ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে ১টি এনজিও ও একজন ভদ্র মহিলাকে দিয়ে পৃথক পৃথক ২টি মামলা দায়ের করান। কিন্তু প্রকাশ্যে আসেন না ব্যবসায়ী আলিম। তবে ব্যবসায়ী আলিমকে নিয়ে আছে ধুম্রজাল।
তবে মামলার কাগজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২১ সালের মামলায় চেক ডিজঅনার মামলার বাদী রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারে অবস্থিত ফেইথ সেভিং এন্ড ক্রেডিট কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এবং ২০২২ সালের মামলার বাদী রাজশাহী রাজপাড়া থানা এলাকার শারমিন আক্তার। অথচ মামলার ২ বাদীর সাথে মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানের কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি ২ মামলার বাদীর সঙ্গে মোবাইল আলাপ কিংবা স্বশরীরের দেখা পর্যন্ত মিজানের হয় নাই।
তাই তো রাজশাহী বায়া মৎস্য পাইকাড় কমিটির সাধারন সম্পাদক – কলম আলী বলেন – ব্যবসায়ী হয়ে অন্য ব্যবসায়ীকে বিপদে ফেলা উচিত নয়। মিজানের বিরুদ্ধে করা এই মামলা গুলো আরোও উন্নত তদন্ত হলে সত্য ও প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। সেই সাথে মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানের সাথে কার কি সম্পর্ক তা পরিষ্কার হয়ে উঠে আসবে। যারা বলছে ৪৫ লাখ টাকা মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানকে দিয়েছে তাদের আদৌ ৪৫ লাখ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা তা বিবেচনা করা উচিত।
রাজশাহী বায়া মৎস্য আড়ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাসেল গণমাধ্যম কর্মীদের জানান – মিজান একজন সৎ ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কোন প্রকারের অভিযোগ নেই। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মিজানের সাথে একজন ম্যানেজার থাকতো যার নাম জামিউল ইসলাম। এই জামিউল ইসলাম মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানকে বিপদে ফেলেছেন। কেননা জামিউল ইসলাম ব্যবসায়ী আলিমের শালা সমন্ধি। তাই পূর্বক পরিকল্পনা অনুযায়ী মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানকে সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। কেননা উভয় ব্যবসায়ির লেনদেন মাছ আড়োতেই সম্পন্ন হয়েছে। তাহলে এখানে কিভাবে এনজিও ও একজন ভদ্র মহিলা মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করে সেটি এখন বড় প্রশ্ন।
তবে রাজশাহী বায়া মৎস্য আড়ত কমিটির প্রায় প্রায় দুই শতাধিক সদস্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মিজানের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে যে মামলা দায়ের করেছে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতারণা মামলা, মানববন্ধনসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এদিকে মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানের বিষয়ে ব্যবসায়ী আলিমকে ফোন দিলে তিনি জানান আমি বর্তমানে ঢাকাতে আছি এবং মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানের মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
তবে সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জামাত খান বলেছেন – দাদন ব্যবসা একটি সামাজিক ব্যাধি। ইদানিং অনেক ব্যবসায়ী দাদন ব্যবসায়ী জড়িয়ে পড়েছেন চওড়া সুদে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে টাকা দিয়ে ব্যাংক চেক হাতিয়ে নিচ্ছেন।পরবর্তীতে ওই টাকা পরিশোধ হলেও তারা নিজেরা মামলা না করে কোন এনজিও কিংবা কোন নারীকে দিয়ে মামলা করিয়ে আরো টাকা আদায় করছেন যা আইনের পরে পরিপন্থী। দাদন ব্যবসায়ী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
অপরদিকে মৎস্য ব্যবসায়ী মিজানের মামলার বিষয়ে যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক্টিভিস্ট ও রাজশাহী পদ্মা প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেস্টা সাংবাদিক এম.এ.হাবীব জুয়েল বলেন – শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে হঠাৎ করে দাদন ব্যবসায়ীরা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছেন। দাদন ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে রাজশাহী মহানগরীর কয়েকজন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব করে দিয়েছেন। আজ তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বলতে কিছুই নেই। তাই ব্যাংকের চেকের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এতে আইনের প্রতি সকলেই আরোও বেশী শ্রদ্ধাশীল হবেন।