বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের লড়াই শেষ হয়নি, সংগ্রাম শেষ হয়নি; সংগ্রাম সেদিনই শেষ হবে যেদিন সত্যিকার অর্থে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। যাদের দেশপ্রেম আছে তারা দেশের জনগণের টাকা চুরি করে না।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ডক্টর এনামুল হকসহ কেন্দ্রীয়, উত্তরাঞ্চল ও জেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা আমাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক বিষোধগার ছড়ায়। তাদের আদর্শ নাই, চরিত্রও নাই। দেশ প্রেম কি আছে তা আল্লাহ ভালো জানেন, জনগণ ভালো জানেন। যখনই তারা (আওয়ামী লীগ) অন্যায় করেছে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমাদেরকে মিটিং-মিছিল করার সুযোগ দেয়া হয়নি। এরপরেও যখনই দেশ ও জনগণের বিপক্ষে সরকার অবস্থান নিয়েছে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা ন্যায়ের পক্ষ নেবো, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো। যদি অন্যায় নীরবে হজম করি তাহলে আমিও অন্যায়কারীর মদদদাতা হয়ে গেলাম। আমরা এই অপকর্মের দায় নিতে চাই না। এমনকি আমাদের দলের কেউ যদি এমনটা করে তাহলে বলবো তাদেরকে ধরেন, ছাড় দিবেন না। আমাদেরকে খবর দিবেন, প্রশাসনকেও খবর দিবেন। এদের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স।
তিনি বলেন, জামায়াতের লোকেরা চাঁদাবাজি করে না। দখল বাণিজ্য করে না। চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য ও মামলা বাণিজ্য করি না। ফ্যাসিস্টদের আমরা যেন কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেই। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আপনারা এমন কোনো হঠকারী কাজ করবেন না যার কারণে আমাদের জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কখনই নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে করবেন না। সংখ্যালঘু বলে বলেই আপনাদের উপর এতদিন এতো অত্যাচার হয়েছে। আপনারা আমাদের ভাই-বোন। আমরা সহমর্মিতার সঙ্গে, একসঙ্গে, গর্বের সঙ্গে এই বাংলাদেশে বসবাস করতে চাই।
তিনি বলেন, তরুণ যুব সমাজকে আমাদের বিরুদ্ধে ভুল বোঝানো হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরেই। এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে এসব ছিল দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র। এই যুবকদেরকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গালি দিয়েছিলেন। সেই গালির প্রকৃত জবাব তিনি পেয়ে গেছেন। আমরা প্রতিরোধের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। না হলে আমাদের উপর যে পরিমাণে জুলুম করা হয়েছে, যদি আমাদের কর্মীরা ধৈর্য না ধরত তাহলে এদেশে অনেক প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যেতো। আমরা বলেছি, যতগুলো খুন হয়েছে সেসবের বিচার হতে হবে।
মিডিয়া কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা লেখবেন না যে আমরা বিচার করবো। মাঝে মাঝে মিডিয়ার বন্ধুরা আমার কথাকে বদলিয়ে বলেন খুনের বিচার করবো। আমি বিচার করার কে, আমি কি বিচারক। বিচারকের আসনে যারা বসেন তারা বিচার করবেন। খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। লুটপাটের বিচার না হলে লুটপাটের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। চাঁদাবাজদের বিচার না হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না। ঘুষখোরের বিচার না হলে ঘুষখোরী বন্ধ হবে না। সুতরাং সকল অন্যায়ের বিচার হতে হবে। আমরা বিচার দাবি করি, কিন্তু আইন কেউ হাতে তুলে নেক এটা আমরা পছন্দ করি না। বিচার করতে গিয়ে কোনো অবিচার হোক এটাও আমরা পছন্দ করি না।
আমরা আমাদের সন্তানদেরকে বলতে চাই, তোমরা যে বলেছিলে উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা তোমাদেরকে ভালোবাসি, তোমাদের অবদানের জন্য আমরা তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তোমাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তোমরা আমাদের অহংকার, তোমরা আমাদের গর্ব। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমরা তোমাদের পাশে থেকে দোয়া করতে চাই, সাহায্য করতে চাই। আমরা দেখে যেতে চাই, আমার প্রিয় বাংলাদেশ সাম্য এবং সৌহার্দের বাংলাদেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটা মানবিক বাংলাদেশ। এই মানবিক বাংলাদেশের জন্যই আমাদের সংগ্রাম, আমাদের সাধনা। এই সংগ্রামে আমরা আপনাদের সকলকে পাশে চাই, সঙ্গে চাই। এই সংগ্রাম তখনই সফল হবে যখন আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। আল্লাহর দেয়া বিধানের বাইরে কেউ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে না, পারে নাই। আল্লাহর দেয়া বিধান সমস্ত সৃষ্টির জন্য, শুধু মানুষের জন্য না। সমস্ত ধর্মের জন্য, নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের জন্য না। যারাই মানুষ তাদের জন্য আল্লাহর সাম্যের বিধান। আমরা সেই বিধানের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এখানে বিভিন্ন ধর্মের ভাইয়েরা বক্তব্য রেখেছেন, জামায়াতের কাছে তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আপনারা দোয়া করুন, যে কথাগুলো আমাদের মুখ দিয়ে বের হয় আমরা যেন সেই কাজগুলো করতে পারি। আমরা যেন লাশের সঙ্গে প্রতারণা না করি। আমরা যেন জীবন দিয়ে হলেও আমাদের কথা রক্ষা করতে পারি। আমরা যেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করি। আমাদের মাথা যেন নত হয় সৃষ্টিকর্তার কাছে।
তিনি বলেন, শান্তি, সাম্য এবং মানবিকতার আবেদন এই দাওয়াত নিয়ে, কুরআনের দাওয়াত নিয়ে আপনারা ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবেন। দিনাজপুরের একটা ঘরও যেন এই দাওয়াতের বাইরে না থাকে আপনাদের প্রতি এই আহ্বান জানাবো। আমাদের লড়াই শেষ হয়নি, সংগ্রাম শেষ হয়নি। সংগ্রাম সেদিনই শেষ হবে যেদিন সত্যিকার অর্থে একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।