মো.সুমন মৃধাঃ দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর দুমকিতে বিধিবহির্ভূত নিয়োগে ১৬বছর যাবৎ চাকুরী করছেন অধ্যক্ষ। একই প্রতিষ্ঠানের আরও ৩শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপণ রেখে স্কেল পরিবর্তন/পদোন্নতির অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে অন্তত: সোয়া কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক ভবেন্দ্র নাথ বাড়ৈ ও সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক রফিকুল হাসানের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও ৩শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়। মন্ত্রণালয়ের এ অডিট টিমটি বিগত ২০১৫সালের ৫ মে তারিখে যথারীতি পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলাধীন দুমকী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও তাদের দাখিতকৃত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০১৮সালের ২৭জুন। পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর আহম্মেদ সাজ্জাদ রশীদ’র ২১/৬/২০১৮ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে মহা পরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, রেজিষ্ট্রার, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া, চেয়ারম্যান,মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা,ও প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিংবডির সভাপতিকে পরবর্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করেছেন। অধ্যক্ষসহ অভিযুক্তরা নিয়োগ সংক্রান্ত এসব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি চাঁপা দিতেই এযাবৎ অডিট রিপোর্টটি গোপন রেখে বেমালুম অস্বীকার করে আসছিল।অতি সম্প্রতি অডিট রিপোর্টটি এলাকায় প্রকাশ পেলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। দায়ী অপরাধ ঢাকতে ও চাকুরী বাঁচাতে নানা মহলে জোড় তদ্বির চালাচ্ছে এবং তড়িঘড়ি অনুগতদের সমন্বয় নূতন গভর্নিং বডি গঠনে তৎপড়তা চালাচ্ছেন।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রশাসনিক মন্তব্য ও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়,প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. আ.হাকিমের জন্মতারিখ ভুল থাকায় তার নাম এমপিও থেকে কর্তণ হলে অধ্যক্ষ মো.সাইদুর রহমান নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৪ সালের ২০ডিসেম্বর অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।পরবর্তিতে প্রাক্তন অধ্যক্ষ আ: হাকিম তার জন্ম তারিখ সংশোধন করে পুনরায় ওই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ পদে পুণর্বহাল হন এবং ২০০৬সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত থেকে বেতন ভাতা গ্রহন করেন।একই সাথে মো. সাইদুর রহমান অধ্যক্ষ পদে যোগদানের তারিখ হতে তার পূর্ব পদে অর্থাৎ সহকারি অধ্যাপক পদে বেতন ভাতাদি গ্রহন করেন যা বিধি সম্মত নহে।অধ্যক্ষ আ: হাকিম সপদে ফিরে আসায় সাইদুর রহমানের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বহাল রাখাও বিধিসম্মত নহে।তাকে (সাইদুর রহমান) অধ্যক্ষ পদে পুনরায় কোন নিয়োগও দেয়া হয়নি।একারণে সহকারি অধ্যাপকের স্কেলে ২বছরে ১লাখ ৮৩হাজার ১শ’৩৯. ৭৪ টাকা এবং অধ্যক্ষ পদে ১৫বছরের বেতন-ভাতার প্রায় এক কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরতযোগ্য।
সহকারি শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন ১/৩/২০০৮তারিখে যোগদান করেন এবং ১/২/১৯৯৯ তারিখে ২৫৫০টাকা স্কেলে এমপিওভুক্ত হন।তিনি বিএসসি পাশ করলেও সনদ দেখাতে পারেন নি।তার বিএড প্রশিক্ষণও নেই। তিনি ১/২/১৯৯৯ থেকে ৮বছর পর ১/২/২০০৭ তারিখে ৫১০০টাকার টাইমস্কেল প্রাপ্য। অন্যকোন উচ্চতর স্কেল প্রাপ্য নহেন।তিনি ১/৬/২০০১ তারিখে ৩৪০০টাকা এবং ১/৬/২০০৯ তারিখে ৬৮০০টাকা স্কেলে বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করায় ৩০/৬/২০১৮ইং পর্যন্ত অতিরিক্ত গৃহীত ১১লাখ ০২হাজার ৪শ’৪৪.৫০টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যোগ্য।তিনি ৬৮০০টাকা স্কেলে সরকারি বেতন-ভাতাদি পাবেন না। একই ভাবে প্রভাষক মো. দ্বীন ইসলামের ১৫লাখ ৩৫হাজার ৭৭০ এবং কম্পিউটার শিক্ষক মো.ফারুক হোসেনের ১২লাখ ২৫হাজার ৫৩৫টাকা ফেরত যোগ্য।
অভিযোগের বিষয়ে গভর্নিংবডির অন্যতম সদস্য মো. হারুন অর রশিদ মৃধা জানান,গভর্নিংবডির মেয়াদকালের কোন সভায়ই এসব অনিয়ম-অসংগতি কিম্বা অডিট রিপোর্টের আপত্তি নিষ্পত্তির বিষয়টি উস্থাপন করা হয়নি।অধ্যক্ষ বরাবরই গোপনীয়তার আশ্রয়ে সকল অনিয়ম-দূর্ণীতি ধামাচাপা দিয়ে আসছেন।
গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি মো.সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার বলেন,মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিজের খেয়ালখুশি মতে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন।অডিট রিপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন,কোন সভায়ই অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়নি।অডিট রিপোর্ট গোপন রেখে পার পাওয়ার চেষ্টা করে আসছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিটের সত্যতা স্বীকার করলেও রিপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অডিট টিম মহল বিশেষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকতে পারেন।তার প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম নেই এবং হয়নি বলে দাবি করেন।তবে তার নিয়োগ বিধিসম্মত নয় এবং অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের প্রশ্নে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
Post Views: 244
Like this:
Like Loading...
Related