নিঃসঙ্গতা!

 

 

হেলাল হাফিজহেলেনকেভালোবেসে না পেয়ে আর দ্বিতীয় কাউকে বিয়ে করতে পারেননি। হাফিজ বলেছিল, ‘কোন মেয়ে এসে হেলালকেও তো বিয়ে করেনি!’  মরে পড়েছিলেন ওয়াশরুমে। কী বীভৎসমর্মান্তিক মৃত্যু! সবাই তাঁর কবিতা ভালোবাসলেও কেউ হেলাল হাফিজকেভালোবাসেনি! ২০২১ সালে ড. তারেকশামসুররেহমানও নিজের ফ্লাটেরবাথরুমে একা মরে পড়েছিলেন। তার স্ত্রী পরিবার ছিল কিন্তু তারা বিদেশে বসবাস করতেন! দেশে মিস্টাররেহমান একাই থাকতেন! পরিবার থাকা কিংবা না থাকা- বিতর্ক-আলোচনায় মানসিক শান্তির জাস্ট একটা অপশন! একা থাকা বাস্তবতা!

 

অস্বীকারের সুযোগ নাই, আমরা অনেকেই একা! চাকুরির সূত্রে একা আবার চরিত্রের সূত্রে একা! বাধ্য হয়ে একা হওয়াদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। যৌবনে একসাথে থাকতে পারিনি! কাজেই বার্ধক্যে পাশাপাশি থাকবো, দু’জনেইদু’জনার হয়ে বাঁচবো কিংবা সন্তানরা খোঁজ রাখবে- সব আশা! বাস্তবতা ভিন্ন কিংবা অভিন্ন- কী হবে জানিনা! ভবিষ্যত কত বেদনার হতে পারে তা এখনো আন্দাজ করতে পারছি না।   শরীরে শক্তি আছে বলে তেজ দেখিয়ে আলাদা থাকতে পারি। অভিমান করে মুখ দেখাদেখি বন্ধ রাখতে পারি কিন্তু মানুষ ছাড়া মানুষ কি আদতেবাঁচতে পারে? বাঁচতে পারে এবং মরতেও পারে!

 

হেলাল হাফিজ কিংবা ড. তারেকশামসুররেহমান’রা বিখ্যাত বলে তাদের মৃত্যুতে শোকের মাতম উঠেছে। দেশ আলোচনার ইস্যু পেয়ে নড়েচড়ে উঠেছে। আমরা যারা নগন্য তাদের মৃত্যুতে কারো কিছু আসবে যাবে না। অনেকেই হয়তো জানতেও পারবে না- জানার কথাও না। এইতো জীবন। এর বেশিকিছু? সেদিন এলাম, চোখ খুলে কয়েক পলক দিয়ে দেখি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি। কত মানুষের মধ্যে থেকেও কেমন একলা। পরিবার ফেলে কেবল বাঁচার রসদ জোগাতে দূরে থাকা- কী বিচিত্র জীবন। মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের সময় মানুষ পাশে থাকে না। মৃত্যুর সময় যে একটু পানিও পায়নি তাঁর জীবনের মানে কী? আমাদের এই জীবনের অর্থ কী?

 

যে চলে গেছে তার জন্য মন খারাপ করার মানুষের অভাব নাই। কিন্তু যে মন খারাপ করে চলে গেলো সে সমাজকে কী বার্তা দিয়ে গেলো? এতো খাটাখটি, ব্যস্ততা- এতো সম্পদের লোভ কিংবা ক্ষমতার পিছনে ছোটা- কোন কাজে আসে? ড. রেহমান কিংবা হেলাল হাফিজের সম্পদ কিংবা সম্মানের অভাব ছিল না। ঘাটতি ছিল সঙ্গের/সঙ্গীর। কারো মৃত্যু আটকানো যায় না কিংন্তু কষ্ট কমানো যায়। এই যে নিঃসঙ্গতা এটা ঘুচানো উচিত। পরিবার থাকা দরকার এবং পরিবারের সাথে থাকা উচিত। ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হলেও যাতে কারো হাতের ছোঁয়া কপালে লাগে। কেউ এক চামচ পানি মুখে তুলে দেয়। একটু কাঁদে।

 

হেলাল হাফিজের জীবনের মত পরিণতি কারো না হোক। কাউকে এতো বেশি ভালোবাসা ঠিক নয় যাতে দ্বিতীয় কাউকে বরণ করা না যায়। বাংলা সাহিত্যকে হেলাল হাফিজ যা দিয়েছে তা অবিস্মরণীয় কিন্তু তিনি কী নিয়ে গেলেন? সান্ত্বনাও কি ছিল? মানসিক ভারসাম্যহীন হেলেনা হয়তো জানবেও না যে, হেলাল কত দুঃখ বুকে চাপা রেখে চলে গেছে। একজন মানুষ থাকা দরকার যে অন্তত দরজা খুলে দেবে, কতক্ষণ না দেখলেই খোঁজ করবে। মরার কতক্ষণ পরে উদ্ধার হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের হাফিজ সে রহস্য অ-উন্মোচিত থাকবে। কারো মুখ দেখতে দেখতে যাতে আমাদের মৃত্যু হয়। একা একা মরে যাওয়া অনেক কষ্টের, খুব বেদনার। প্রিয় হেলাল হাফিজ, এখন আপনার কেমন কাটছে? প্রয়াত সঙ্গীদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন?

 

রাজুআহমেদ,  প্রাবন্ধিক।

raju69alive@gmail.com

Exit mobile version