ইমা এলিস নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশ এবং ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ আশ্বাস দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, দেশের জন্য যদি ছাত্ররা এভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদের দেশের জন্য আরো কিছু করা উচিত। উক্ত বৈঠকে কিভাবে বাংলাদেশের ছাত্ররা আগের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং জীবন দিয়েছে, তা জো বাইডেনের কাছে বর্ণনা করেছেন ড. ইউনূস। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বুকে জড়িয়ে নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর হাতে হাত রেখে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কারের যে লক্ষ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ঠিক করেছেন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে হোয়াইট হাউস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান। ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তাঁর সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সমর্থন করা উচিত। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালে এবং এর পরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবিসংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্প’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।
গত তিন দশকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কে কাজ করেছেন এবং এখন কাজ করছেন, বাংলাদেশের এমন পাঁচজন কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সাধারণত জাতিসংঘ অধিবেশনে তাঁর নির্ধারিত বক্তৃতার দিন সকালে নিউ ইয়র্কে পৌঁছান। তিনি সেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন। এরপর বিকেলে জাতিসংঘের অধিবেশনে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ প্রায় বিরল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একাধিক কূটনীতিকের মতে, চিরাচরিত প্রথা ভেঙে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক প্রতীকী অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংক্ষিপ্ত হলেও দুই নেতার বৈঠক এই বার্তাই দিচ্ছে যে হোয়াইট হাউস বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।