পিকনিক পেরেশানি আর শৈশবের মুক্তি!

 

ডিসেম্বরের এই সময়টা পিকনিকের। বাজনা বাজে উষ্ণায়নের। মাঠে, হাটে-ঘাটে
কথিত ভাইরাল বক্তাদের ওয়াজের নামে আওয়াজ মাহফিলও জমে। এখন কোথাও
মেলা বসে কিনা জানিনা! তবে কাওয়ালি হয়! মোটামুটি শব্দদূষণের একটা ভালো
আয়োজন! ওদিকে স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হওয়াতে ছেলেমেয়ে-মায়েদের
বেড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। অদ্ভুত টাইপের অভিভাবকরা এই সময়টাতেও ছোট
ছোট বাচ্চাদের হাতে বই ধরিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করেন! কেউ মোবাইল দিয়ে
তৃষ্ণা মেটান!

পিকনিকের নামে পিনিক করা, ওয়াজ-মাহফিলের নামে নারী-রাজনীতি নিয়ে বেফাঁস
কথা বলা- এসব শোনার চেয়ে পরিত্যক্ত আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া
বেহেতের। অন্তত সন্তানদের সাথে শিকড়ের পরিচয় ঘটে। ডিসেম্বরের এই সময়টা
আমাদের শৈশবের স্বর্ণযুগ ছিল। কেমন স্বাধীন স্বাধীন একটা অনুভূতি। ক্লাস
পাল্টানো মানে অনেকটা বড় হয়ে যাওয়া! কোম্বল মুড়ি দিয়ে সবাই গোল হয়ে শুয়ে
গল্প শোনার আসরে মুড়ি-চানাচুরসমেত ভাগাভাগি-টানাটানির সে দিনগুলো আর কি
ফিরবে?

সামর্থ্য থাকলে বেড়াতে-ঘুরতে যান। ভীড় এড়ানো জায়গায় যাবেন। আনন্দ-ফুর্তি
করুন। এই সময়ে নিজেরা মূর্তি হয়ে বসে থাকলেও অন্তত সন্তানগুলোকে বেঁধে
রাখবেন না। কাজিনদের সাথে দৌড়াতে দিন। হোঁচট খাক, ব্যথা পাক কিংবা কালো
হোক- তাও থামাবেন না। সর্দি লাগুক, হাঁচি আসুক। অন্তক বড় হয়ে, একলা হয়েও
যাতে স্মৃতি রোমন্থন করার মত কিছু স্মৃতি ওদের স্মৃতিপটেও জমা থাকে। অলস
সময় হত্যা করা এবং কৃপণভাবে সম্পদ সঞ্চয় করতে করতে ভবিষ্যত
প্রজন্মকে রোবটিক করে বেড়ে উঠতে দিয়েন না! খরচ করুন, প্রয়োজনে দেনা
করে।

গ্রামে ছেলেমেয়েরা একজোট হয়ে চড়ুইভাতি করতে চাইলে আপনি পেছনে থেকে সব
গুছিয়ে দিন। শুধু পানি এবং আগুন থেকে রক্ষা করে সন্তান যা করতে চায় তা
করতে দিন। বছরের বাকি সময়টাতে তো মোটামুটি জেলেই রাখেন। কাজেই দিন
পনেরো পড়াশোনা থেকে দূরে থাকলেও আপনার সন্তানের আইনস্টাইন হওয়া
আটকাবে না! বাচ্চারা যাতে বোঝে ওদেরও স্বাধীন জগত আছে- সুযোগটুকু দিন।
খুব বেশি খবরদারি করাদের বেশিরভাগ সন্তান বখে যায়! বই পড়িয়ে যা যা
শেখানো যায় ঘুরিয়ে তার কম সেখানো হয় না।

আমাদের শৈশবে ঘুড়ি উড়াতাম, বৌছি-গোল্লাছুট খেলতাম। আপনার সন্তানও
খেলছে! রুমের মধ্যে আপনার মোবাইলে অনলাইনে গেইম! ওরা মেধাবী তবে চিন্তা-
চেতনায় সংকর জাতীয় বাড়ন্ত জাতের জন্তুর কাছাকাছি মস্তিষ্কের বিস্তৃতি
করে রাখবেন না। বিস্তৃত মাঠ দেন। গ্রাম্য দু'টো গালাগালও শিখুক। মানুষের সাথে
মিশতে পারা শেখার দরকার আছে। সামাজিকীকরণের এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন
না। কোথাও যান এবং কাউকে বেড়াতে আনুন। বাচ্চাদের সাথে বাচ্চাদের মিশতে
দিন। ওদের মানসিক বিকাশের দরকারটা খুব বেশি প্রয়োজনের। আপনি জেলে
থাকলেও সন্তানকে মুক্ত বাতাসে রাখুন।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

Exit mobile version