অলংকরণ: চ্যাটজিপিটি
সাপ নিয়ে যত ভয়ই কাজ করুক আমাদের মনে। বেশিরভাগ সাপই আকারে ছোট। লম্বাই হয়তো বেশ বড়, কিন্তু এতটাই চিকন আর ওজনে হালকা—আকারে সেগুলোকে বেশি বড় মনে হয় না। কিন্তু তারপরও কিছু সাপের আকার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। খোদ বাংলাদেশেই অজগর টাইপের বেশ কটি সাপ আছে, যারা আকারে বিশাল।
এবার বলুন তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ কোনটা?
আমার ধারণা, অনেকেই জানেন উত্তরটা। অ্যামাজনের অ্যানাকোন্ডা। অ্যানাকোন্ডারও কয়েকটা উপপ্রজাতি আছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টার নাম গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। এরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সাপ।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা দক্ষিণ আমেরিকার গভীর রেইন ফরেস্টে, নদী এবং জলাভূমি অঞ্চলে বাস করে। বিশেষ করে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং পেরুর নদী-নালা, জলাভূমিবেষ্টীত গভীর বনে এদের বেশি দেখা যায়। গ্রিন অ্যানাকোন্ডা দেখতে যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনি তার শিকার ধরার ক্ষমতাও বিস্ময়কর।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ভারী সাপ হিসেবে পরিচিত। লম্বায় দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩০ ফুট (প্রায় ৬ থেকে ৯ মিটার) পর্যন্ত হতে পারে। আর ওজন ২৫০ কেজি (প্রায় ৫৫০ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা লম্বায় এবং ওজনে বড় হলেও এর দেহ বেশ পেশীবহুল। এই পেশিই একে শক্তিশালী শিকারি হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই সাপ জলাশয়ের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। এরা পানির ভেতর খুব দ্রুত চলতে পারে। স্থলভাগের তুলনায় পানিতে এদের চলার গতি কয়েকগুণ বেশি। পানির ভেতর থেকেই এরা বেশিরভাগ সময় শিকার ধরে।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডা নির্বিষ সাপ। তাই বিষ প্রয়োগ করে শিকার করে না। এরা কনস্ট্রিক্টর সাপ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ এরা শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এই সাপ শক্তিশালী পেশির সাহায্যে শিকারকে আঁকড়ে ধরে এবং ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে, যতক্ষণ না শিকার শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়। অনেক সময় প্রচণ্ড চাপে শিকারে শরীরের হাড়গোড় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়।
এর প্রধান শিকার হরিণ, কেপিবারা, কুমির, জাগুয়ার এবং এমনকি ছোট ছোট জলজ প্রাণী। ছোট থেকে বড়—সব ধরনের প্রাণীই রয়েছে এদের খাদ্য তালিকায়। শিকারী হলেও এরা কিন্তু প্রচণ্ড হিংস্র নয়। একবার পেট পুরে খেলে বেশ কয়েকদির এদের খাবারই দরকার হয় না। সাধারণত এরা আগ বাড়িয়ে কাউকে আক্রমণ করে না। আক্রান্ত হলেই কেবল প্রতিরক্ষা হিসেবে পাল্টা আক্রমণ করে।
গ্রিন অ্যানাকোন্ডার প্রজনন প্রক্রিয়াটি খুবই বিচিত্র। এরা ডিম পাড়ে না, সরাসরি সন্তান জন্ম দেয়। মেয়ে অ্যানাকোন্ডা একসঙ্গে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। বাচ্চাগুলো জন্মের পরপরই শিকার ধরতে সক্ষম। তবে জীবেনের শুরুতেই এরা হুমকির মুখে থাকে, কারণ অন্য শিকারি প্রাণীদের জন্য সহজ শিকার এরা।
গ্রিন অ্যাকাকোন্ডা আকারে যত বড়ই হোক, দেখতে যত ভয়ংকরই এরা সাধারণত মানুষের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। মানুষকে এরা এড়িয়েই চলে সাধারণত। আক্রমণ খুব কমই করে। অনেক সময় সিনেমা এবং গল্পে অ্যানাকোন্ডাকে খুব ভয়ঙ্কর রূপে হাজির করা হয়। যেমন হলিউডের ‘অ্যানাকোন্ডা’ সিনেমায় যেভাবে এদের উপস্থাপন করা হয়েছে, বাস্তবে এরা মোটেও তেমন নয়। আক্রান্ত না হলে, কিংবা নিজেকে বিপন্ন বোধ না করলে, মানুষকে আক্রমণ করে না।
মূল লেখা: কালের কণ্ঠে