যিনি রব, তিনি নিমিষে দিতে ও নিতে পারেন। তাঁর থেকে অনুগ্রহ লাভ করে আমার
এইটা আছে- এটা নিয়ে অহংকারী হওয়ার কিছু নাই। আবার তাঁর পরীক্ষায়
অবতীর্ণ হয়ে আমার এইটা নাই- এটা নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ারও দরকার
পড়ে না। ধৈর্য ও সংযমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া জরুরি। কৃতজ্ঞ থাকা এবং
সবর রাখার পরিণাম কখনোই বিফল হয়নি। হযরত আলী রা. এর উক্তিতে, 'জীবন
দু'দিনের। একদিন তোমার পক্ষের, অন্যদিন বিপক্ষের। তাই যেদিনটি তোমার
পক্ষের, সেদিন দম্ভে বেপরোয়া হয়ো না। আর যেদিনটি বিপক্ষের, সেদিন
ধৈর্যহারা হয়ো না। কেননা দু'দিনই তোমার জন্য এক ধরনের পরীক্ষা।'
যদি দাম্ভিক হও তবুও বণ্টিত আয়ু বয়ে যাবে। সম্পদের দম্ভ, ক্ষমতার দম্ভ,
জ্ঞানের দম্ভ কিংবা গুণের দম্ভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। জীবন জিল্লতিতে
তলিয়ে যায়। যারা অহংকার করেছে তাদের পতন অনিবার্য হয়েছে। রূপের দম্ভ
মানুষকে সৌন্দর্যহীন করে। আমি চরিত্রবান- এটা নিয়েও যদি অন্তরে অহংকার
বাসা বাঁধে তবে সেই চরিত্র থাকে না। যে অহংকার স্রষ্টার চাদর সে অহংকার
যদি সৃষ্টির মধ্যে দানা বাঁধে তবে সেটা প্রভুর চাদর নিয়ে টানাটানির সামিল। যেটা
মহান প্রভু সহ্য করেন না বরং রাগান্বিত হোন। রবের রাগের পরিণাম জানেন
বোধহয়। জাহান্নাম।
আমার এটা-সেটা আছে, আমি অমুক-তমুক পারি- এইসব যদি আত্ম-অহমিকা
জাগ্রত করে, কথা ও কাজ মানুষের মনঃকষ্টের কারণ হয়, কাউকে পরোয়া না
করে, সম্মান না দিয়ে কথা বলি তবে আমার প্রতি রবের যে অনুগ্রহ ছিল সেই
অনুগ্রহতেই আমার ধ্বংস অনিবার্য করবে। ঔদ্ধত্য চাদর হলে তাদের জীবন ও
জীবিকা থেকে বারাকাহ তুলে নেওয়া হয়। বারাকাহীন সম্পদ বোঝা, নেয়ামতহীন
জ্ঞান ধ্বংসের ফুয়েল।
আমার এটা নাই, ওটা পাইনি কিংবা সেটা হয়নি- নিরাশ হয়ো না। স্রষ্টা বান্দাহকে
নিরাশ হতে, ভেঙে পড়তে এবং নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি নির্দেশ দিয়েছেন চেষ্টা করতে। আদেশ করেছেন প্রার্থনা করতে। আমার
যেটা নাই সেটা না থাকাতে আমার কল্যাণ নাকি অকল্যাণ সেটা আমি জানি না।
দুনিয়াতে বহুমানুষের সম্পদকে বোঝা হতে দেখেছি। বহু মানুষের ক্ষমতাকে
ধ্বংসের কারণ হতে দেখেছি।
যা পেয়েছি তাতে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। যা পাইনি তা রব আমার জন্য মঙ্গলজনক
মনে করেননি বলে দেননি- এই বিশ্বাস ঈমানের অংশ। যে অনেক খেয়েছে, যে অল্প
পেয়েছে কিংবা যে কিছুই পায়নি- সবার সময় কেটে গেছে। নিশ্চয়ই কষ্টের পরে
আছে স্বস্তি। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্যতা কায়েম হবে না?- এইটা ভাবছেন।
আমরা চোখে যা দেখি, মুখে যা বলি কিংবা হাতে যা স্পর্শ করি- সেসবের বাইরেও
সত্য অবস্থান করে। দুনিয়াটা হিসাব-নিকাশের শেষ মঞ্জিল নয়। অনেক বিষয়ে
জিজ্ঞাসা করা হবে এবং অনেক পাওনা মেটানো হবে। মন্দ মানুষকে ছেড়ে দেওয়ার
জন্য কিংবা ভালো মানুষকে আটকে রাখার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি।
কাজেই পেয়ে দম্ভ করা আর না পেয়ে মুষড়ে পড়া মানুষের জন্য শোভনীয় নয়।
যেখানে মানুষের হাত নাই সেখানে ভালো এবং মন্দ রবের পক্ষ থেকে আসে।
যেখানে মানুষের ক্ষমতা আছে সেখানেও মানুষের সে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ নয়। যাকিছু
পেয়েছি সেসবের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা এবং যা আমার হয়নি সেসবের কাল্পনিক
মালিকানা ছেড়ে দেওয়া- সুখের পথ প্রশস্ত করে। তিনি আমাকে যা দিয়েছেন তা
সদ্ব্যবহার করতে পারলে আমার মুক্তি সহজ হবে। অযথা আফসোস করা দুঃখের
শিকড় বপন করে। কৃতজ্ঞ থাকা কল্যাণের। ভেবে দেখুন, তিনি আমাকে এমন
অনেক কিছু দিয়েছেন যার যোগ্য নিজেকে কেনদিন মনে করিনি। যিনি কাউকে
অপ্রত্যাশিত সম্পদ-সম্মানের মালিকানা দান করেন তিনি কাউকে আকাঙ্ক্ষিত
কিছু না দেওয়ারও অধিকার রাখেন। তিনি এমন অনেককিছু জানেন যা মানুষের
কল্পনাতেও নাই।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com