বসন্তের আগমনে পলাশ

শহীদুল ইসলাম শরীফ, স্টাফ রিপোর্টার

 

 

 

পলাশের নেশা তীব্র, পলাশ ফুল সবার মনে একবার হলেও দোলা দিয়েছে। তার ফুলের প্রেমের জালে জড়ায়নি হয়ত এমন কেউ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বসন্তে ফোটা পলাশ বনে ঘোর লাগে। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন।  তবে বড় ক্ষণস্থায়ী পলাশের মৌসুম। মাত্র ২০-২৫ দিন। তার নেশা লাগতে লাগতে, চিনে নিতে নিতে সে উধাও হয়ে যায়। যৌবনের উন্মাদনার মতো ক্ষণস্থায়ী। তবে এই ক্ষণস্থায়ী সুখ চলে গেলেও স্মৃতি থেকে যায় পুরো বছর। সেই স্মৃতি নিয়ে আমরা অপেক্ষায় থাকি অন্য বসন্তের।

ঋতুগুলো বাঁধন ছিঁড়ে অধিকার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাল দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের পালার বৃক্ষরাজি। কে কত আগে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। যদিও মাঘ মাস পলাশের প্রস্ফুটনের সময়, ফাগুনের হাওয়া তা আরও দ্রুত করেছে। বসন্ত মানেই ফুলের সমারোহ আর ফুল মানেই রঙের মিলন মেলা। এইতো প্রকৃতি এখন পেয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সবাই সাদরে বরণ করেছে ঋতুরাজ বসন্তকে। আর প্রকৃতিতে আগুন ঝরা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্ত চলছে। এই সময় পলাশ ফুলের সৌন্দর্য দূর থেকেই আগুনের মতো জ্বলতে দেখা যায়। ফুলের মেলায় পাখির কলতানে মুখরিত চারদিক। বসন্ত এলেই সবার মনের মাঝে দোলা দেয় বসন্ত ফুল। এ যেন বসন্তে পলাশের রাজত্ব। বাংলার গ্রামে ও শহরে প্রায় সব জায়গায় কম-বেশি পলাশ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে পলাশ গাছের  নিচে শিশুরা ফুল দিয়ে খেলা করে থাকে। শিশুরা একে অপরের কানে ফুল দিয়ে দেয়। গ্রামবাংলার এই দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। পলাশ গাছ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। শীতে গাছের পাতা ঝরে যায়। এর বাকল ধূসর। শাখাপ্রশাখা ও কাণ্ড আঁকাবাঁকা। নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতা ত্রিপত্রী, দেখতে অনেকটা মান্দার গাছের পাতার মতো হলেও আকারে বড়।

বসন্তে এ গাছে ফুল ফোটে। টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। পলাশ ফুল ছোট, ফুল ২ থেকে ৪ সেঃ মিঃ লম্বা হয়।

পলাশের ফল দেখতে অনেকটা শিমের মতো। বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গাতে কমবেশি পলাশ গাছ দেখতে পাওয়া যায়।পলাশ মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Butea monosperma। বৃক্ষটি Fabaceae পরিবারের সদস্য। তবে পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

বসন্তের মাতাল সমীরণে লালচে বর্ণচ্ছটায় মন রাঙানো পলাশ নিসর্গের আরেক রূপ তুলে ধরে। টকটকে লাল ছাড়াও হলুদ ও লালচে কমলা রঙের পলাশ ফুলও দেখা যায়। বাতাসের মৃদুমন্দ তালে উঁচু গাছের শাখায় পলাশ দেখে কোনো প্রকৃতিপ্রেমী পথিক সুন্দর স্বপ্নে মগ্ন হতেই পারে। শুধু পথিকেরই বা কেন। বাঙালি জীবনের সংস্কৃতির আবাহনে পলাশ ফুলের লালচে কমলা আভা হৃদয় সাজিয়ে দেয়। লালচে কমলা বর্ণচ্ছটার আবেগের ফুলগুলো ছন্দায়িত করে তোলে। স্মৃতির পাতা মেলে সুর তোলে। আকাশে রক্তিম আলো ছড়িয়েই যেন কথা বলে পলাশ। বাংলার এই মাটিতে পলাশের আগমন বহুকাল আগে।

পলাশ ফুল নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:-

পলাশ ফুলের গেলাস ভরি’ পিয়াব অমিয়া তোমারে প্রিয়া

চাঁদিনী রাতের চাঁদোয়া তলে বুকের আঁচল দিব পাতিয়া।

Exit mobile version