২০১২ কলকাতা বাগুইহাটি তে একটা বিয়ে বাড়ির ঘটনা । আমার তৎকালীন ম্যানেজার এর মেয়ের বিয়ে তে গিয়ে ছিলাম। আমার স্ত্রী তখন বাপের বাড়িতে । আমার মা বাবা অন্য এক পরিচিত ব্যাক্তি ভাইয়ের বিয়ে তে গিয়ে ছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো আমার ৫ বছরের ছোট বিবাহিত বন আর তার ৩ বছরের ছোট ছেলে কে নিয়ে। তারাও বাপের বাড়ি এসেছিল। প্রথমে ঠিক হলো তারা ঘরেই কিছু একটা রান্না করে নেবে। তারপরে আমি ভাবলাম আমরা সবাই ভালো মন্দ খাবো আর ওরা ঘরে রুটি তরকারি খাবে। তাই বোন কে প্রস্তাব দিলাম তরোও চল আমার সাথে কারণ নেমন্তন্ন টা সস্ত্রীক নেমন্তন্ন। বোন আর আমার ভাগ্নে রেডী হয়ে আমার সাথে গেলো। বিয়ে বাড়ীতে কারু সাথে আমাদের পরিচিত ছিল না। শুধু আমাকে চিনই আমার ম্যানেজার।
বিয়ে বাড়ীতে গিয়ে ম্যানেজার কে খুঁজে বের করলাম। তিনি পরিবারের অন্য সদস্য দের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আমি গিয়ে নমস্কার করতেই তিনি গম্ভীর মুখে আমাদের স্বাগত জানালেন । কিছু একটা অবাঞ্ছিত জিনিষ হয়তো হয়ে ছিলো। কিন্তু তার স্বাগত জানানোর ভাষা শুনে আমরা অস্বস্তি তে পড়ে যাই। তিনি আপনার বোন কে আমার স্ত্রী ভেবে বৌমা সম্বোধন করে স্বাগত জানালেন। আমার বোনও লজ্জা পেয়ে কি বলবো বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকায়। আমিও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। কি বলবো সেই খুঁজতে চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে আমার ম্যানেজার তার পরিবারের লোকেরা সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করে। তারাও আমার সাথে আমার স্ত্রীর ( বোনের) জুড়ির প্রশংসা করতে শুরু করে। আমার ভাগ্নে কে আমার ছেলে ভেবে নাম জিজ্ঞাসা করে। আর আমি ভাবতে থাকি ম্যানেজার কে তার ভুলটা ধরিয়ে দি। কিন্তু এতে তিনি ও তার পরিবারের লোকেরা আরো বেশি বিব্রত হতো । কিছু একটা করার তারা এমনিতে অসন্তুষ্ট ছিলেন এই অবস্থা তে আর একটা অস্বস্তির কারণ জুড়ে দিলে ঠিক হবে না। আমার ম্যানেজার করলে চিনতাম। দশ আমার ওপরই পড়ত। তিনি অফিসে গিয়ে ফালাও করে আমার মূর্খামি প্রচার করে নিজের ভুল ঢাকা দিতেন। তাই চুপ করে অস্বস্তি টা হজম করলাম।
কিছুক্ষন ওনাদের সাথে কথা বলে আমার বউভাতের মঞ্চ এর দিকে চলে গেলাম। বোন জিগাসা করলো কে আমি কিছু বললাম না। আমি সব টা গুছিয়ে বোলাম। দেখলাম প্রাথমিক অস্বস্তি ত কাটিয়ে সে কিন্তু ঘটনা টি নিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে। ওকে সহজ হতে দেখে আমিও অস্বস্তি ত কাটিয়ে উঠলাম। কিন্তু কতক্ষণ। আমার অফিসের কিছু সহকর্মীও নিমন্ত্রিত ছিলো। এবার তাদের সাথে দেখা হতেই কোনো উপায় না দেখে বোন কে স্ত্রী হিসেবেই পরিচয় দিতে হলো। কারণ বোন বলে পরিচয় দিলে পরের দিন অফিস গিয়ে ম্যানেজার জানতে পারতো আর আরও রেগে যেত। তাই অভিনয় চালিয়ে গেলেন। আর অবাক কাণ্ড আপনার বোনও ব্যাপারটা বুঝে সুন্দর ভাবে স্ত্রী হিসেবে অভিনয় করতে লাগলো।
সেই দিন ওই ৩-৪ ঘণ্টা এক অদ্ভুত অভিজ্ঞাতার মধ দিয়ে কেটে ছিলো। বিরক্তি, হাসি, আনন্দ, অস্বস্তি ইত্যাদি সব এক সাথে ভার করেছিল।