“তোমাদের মধ্যে কোনো মনমালিন্য হলে নিজেরা সমাধান করে নিবে। দুজনই যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক। যদি সমাধান করা সম্ভব না হয় তবে আমি ব্যাপারটা দেখবো কিন্তু কেউ কখনো একে অপরের সাথে সাপে নেউলে যুদ্ধে লাগবে না। নিজেদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব না হলে আমায় জানাবে কিন্তু সময় সুযোগ বুঝে। আমিও রক্তে মাংসে গড়া মানুষ।”
তারপর ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বলে, “তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো৷ তোমার সংসারের সমস্যার সমাধান নিজে করবে। নিজে সমাধান করতে না পারলে আমি আছি তবে আমার সংসারে যেন বাহিরের কেউ হস্তক্ষেপ না করে।”
“আর মা তুমি, তুমি এই পরিবারের গুরুজন। আমার স্ত্রী কোনো ভুল করলে গুরুজন হিসেবে তোমার দায়িত্ব সেটা তাকে বুঝিয়ে শুধরে দেয়া নাকি তার নামে সালিশ বসানো। যদি তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় তবে আমাকে বলবে আমার স্ত্রীর ত্রুটি আমি দেখবো তবে কেউ যেন কখনো আমার স্ত্রীর আত্মসম্মানে হানি না আনে সেটা খেয়াল রাখবে।”
এরপর থেকে আজ অব্দি কখনো ভাবী আর আম্মুর মধ্যে মনমালিন্য হতে খুব কম দেখেছি।
যেদিন আমার বিয়ে হয় তার আগেরদিন ভাইয়া আমাকে বলে, “যথেষ্ট বড় হয়েছিস। নিজের সংসার নিজে দেখে রাখবি। আমরা কখনো তোর সংসারে হস্তক্ষেপ করবো না আর না তো তুই তোর সংসারের ঝামেলা নিয়ে এখানে আসবি। তার মানে আবার এই না যে তোর পরিবার বলতে কেউ নেই। সেখানে যে মানুষটার ভরসায় থাকবি সে মানুষটা যদি ন্যায়ের পক্ষে থাকে তবে কখনো ঝামেলা করবি না। যদি কখনো শুনি তবে ভুলে যাবি তোর কোনো ভাই ছিল। যদি সেই মানুষটা মেরুদণ্ডহীন পুরুষ হয় তবে তোর পরিবারকে তোর পাশে পাবি সেই নিশ্চয়তা দিতে পারবো।”
বিয়ের রাতে জানতে পেরেছিলাম ভাইয়া বিয়ে ঠিক হওয়ার পর উনাকে একদিন ডেকে পাঠিয়েছিল।
উনাকে বলেছেন, “সাংসারিক রাজনীতি সম্পর্কে জানো? এই সাংসারিক রাজনীতির আরম্ভ আর সমাপ্তি কিন্তু সেই সংসারের পুরুষের উপর নির্ভর করে। পুরুষ যদি মেরুদণ্ডহীন হয় তবে ধরে নাও সাংসারিক রাজনীতি শুরু আর পুরুষ যদি পুরুষের মতো হয় তবে এই সাংসারিক রাজনীতি কখনো এগোতে পারে না। আমার বোন যে কোনো ভুল করে না ব্যাপারটা এমন না। ভুল করলে তুমি তাকে বুঝাবে। তোমার পরিবারের কেউ ভুল করলে তাদেরকে বুঝাবে, তাদের ভুলের কারণে যেন আমার বোনকে বলির পাঠা হতে না হয়। স্ত্রীর সামনে কখনো মা বোনকে শাসন করবে না আর না তো মা বোনের সামনে স্ত্রীকে শাসন করবে। তবে সব দায়িত্ব তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি বলে এটা ভেবো না তার কেউ নেই। যেদিন জানতে পারবো তোমার মেরুদণ্ডহীনতার কারণে আমার বোন কষ্টে আছে সেদিন ভুলে যাবো তুমি আমার বোনের জামাই।”
আজ প্রায় দশ বছর হয়ে গেছে আমাদের সংসারের। এই দশ বছরে কখনো সাংসারিক রাজনীতির সম্মুখীন হতে হয় নি আমায়। শ্বাশুড়ি হয়তো নিজের মেয়ের মতো ভাবেন না তবে ছেলের বউয়ের মর্যাদা ঠিকই দিয়েছেন।