সৌমিত্র সেন
পাশাপাশি দুটি দিন। অথচ যাদের মধ্যে উনআশি বছরের ব্যবধান!
না, কোনও ধাঁধা নয়।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের জন্মদিন-মৃত্যুদিনের কথা বলা হচ্ছে এখানে। ১৯৭২ সালের আজকের দিনে (২৮ জুন) মৃত্যু ঘটে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের। আর ১৮৯৩ সালের ২৯ জুন (আগামি কালই যেদিনটি) তাঁর জন্ম। ঘটনাচক্রে যে দিনদুটি প্রতিবছরই স্বভাবতই পরপর আসে।
প্রশান্তচন্দ্র ১৮৯৩ সালের ২৯ জুন কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৮ সালে স্নাতক হয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। যেখানে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন কিংবদন্তি জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়। ছিলেন মেঘনাদ সাহাও। প্রশান্তচন্দ্র অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ ছিল। বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন।
তাঁকে ভারতে আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক মনে করা হয়। ১৯৫০ দশকেই তিনি ভারতে কম্পিউটার আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মানুষটির সেই সময়ে গবেষণা বিষয়ক ধ্যানধারণা ও দূরদর্শিতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির মধ্যে যৌথতা স্থাপনের মাধ্যমে তাদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে ভারতে গবেষণা ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন তিনি। বর্তমানে গোটা বিশ্বে যৌথ গবেষণা বহুল সমাদৃত ও ফলপ্রসূ এক প্রক্রিয়া। সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা এই মানুষটি হলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ।
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। প্রশান্তচন্দ্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মহলানবিশের সম্পর্ক শুধু সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সব মিলিয়ে সেটি ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পদার্থবিজ্ঞান থেকে মহলানবিশের রাশিবিজ্ঞানে চলে আসার ক্ষেত্রে কবির পরোক্ষ প্রভাব ছিল; পরবর্তীকালে সেই কথা প্রশান্তচন্দ্র উল্লেখও করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজে মহলানবিশের স্ট্যাটিসটিক্যাল ল্যাবরেটরি পরিদর্শনে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের সেক্রেটারি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবং কিছুকাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মরত ছিলেন মহলানবিশ।
১৯৭২ সালের ২৮ জুন বিজ্ঞানী, কর্মী এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা বিচিত্র প্রতিভাবান এই মানুষটি প্রয়াত হন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙালির সম্মানকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। আজও তিনি স্মরণীয়, বরণীয় বিশিষ্ট এক বাঙালি।