দাম যতই হোক না কেন সেই প্রাচীন কাল থেকেই সোনার প্রতি মানুষের প্রেম অপার। অতীতের পরিসংখ্যান বলছে গত দুই দশকে আমূল বদলে গেছে সোনার বাজার। অলংকারের সাজেই হোক বা বিনিয়োগের পণ্য হিসেবে, লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে সোনার দাম।
এই ২০ বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সোনার মূল্য। বহু অর্থনীতিবিদ খানিক মজা করেই বলেন, সোনায় লগ্নির অর্থ ভবিষ্যৎ সোনায় বাঁধিয়ে রাখা। তবে সোনা মানে কি শুধুই হলুদ ধাতু? যা দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করে সেজে ওঠা যায়! বেশ কয়েক বছর আগেও মানুষ এমনটাই মনে করতেন। তবে সে সময় পাল্টেছে। আপাদমস্তক কঠিন, জড় বস্তুর দস্তুর ছেড়ে খাতায়-কলমে ঠাঁই পেয়েছে সোনা। যা বিনিয়োগের এক মস্ত বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
পোশাকি ভাষায় যার নাম সোভেরেইন গোল্ড বন্ড। এই গোল্ড বন্ডে সোনার কোনো বস্তুনিষ্ঠতা নেই। তাই একে ব্যাংকের লকারবন্দি করারও প্রশ্ন ওঠে না।
অন্যান্য বন্ডের মতোই সোভেরেইন গোল্ড বন্ড। সহজ বাংলায় বললে, এটি হলো সোনার ওজনে চিহ্নিত করা ভারতীয় সরকারি সম্পত্তির নির্দেশনপত্র। কোনো বিনিয়োগকারীকে নগদ অর্থ প্রদান করে এই বন্ড কিনতে হয়। বাজারে ওজন অনুযায়ী সোনার মূল্য যা হয়, বন্ডের ক্ষেত্রেও সেই মূল্যই থাকে। বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে সুদসহ নগদ টাকা বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বর্তমান বাজারে সোভেরেইন গোল্ডের বন্ডের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। যা সব বিনিয়োগকারীকে আলাদাভাবে উৎসাহিত করে।
প্রথমত, এই বন্ড জারি করা হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। দেশটির রিজার্ভ ব্যাংক ইন্ডিয়া এই বন্ড সরাসরি জারি করে। ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ বা নির্দেশিত এজেন্ট মারফৎ একটি আবেদনপত্র পূরণ করে এই বন্ড সাবস্ক্রাইব করা সম্ভব।
ভারতের সর্বোচ্চ ব্যাংকের নিয়মানুসারে কোনো বিনিয়োগকারীর প্রাথমিক বিনিয়োগের উপরে প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে আড়াই শতাংশ হারে সুদ প্রদান করা হয়। খুব সহজেই এই বন্ড স্টক এক্সচেঞ্জে ‘ট্রেড’ করা যায় এবং হস্তান্তরিতও করা যায়।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধাতুরূপী সোনার থেকে সোভেরেইন গোল্ড বন্ড সব সময় ভালো। কারণ, সময়ের সঙ্গে ধাতুর ক্ষয় হয়। অনেক ক্ষেত্রে সোনায় খাদ মেশানো থাকে। কিন্তু বন্ডের ক্ষেত্রে তা অসম্ভব। পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাংক যেহেতু এটিকে জারি করে, সেহেতু এটির স্বচ্ছতা এবং নির্ভরযোগ্যতার উপরে প্রশ্ন তোলার মানেই হয় না। মেয়াদপূর্তিতে এই বন্ডের রিডেম্পশন ভ্যালু সোনার দামের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। অর্থাৎ সোনার দাম ১০০ টাকা বাড়লে বন্ডের দামও ১০০ টাকা বাড়বে। উল্টো দিকে সোনার দাম কমলে বন্ডের দামও কমে।
সোভেরেইন গোল্ড বন্ডের লক ইন-এর সময়সীমা আট বছর। ম্যাচিউরিটি পর্যন্ত গোল্ড বন্ড ধরে রাখতে পারলে যে পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়, তার উপরে কোনোভাবে কর চাপানো হয় না।
এই গোল্ড বন্ড অনলাইনে কেনার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধে রয়েছে। পরবর্তীকালে কোনো সমস্যা হলে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। গোল্ড বন্ডের ক্ষেত্রে সব সময় ২৪ ক্যারেট সোনার উপরেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
এই বন্ডের হিসেব হয় ইউনিটে। কোনো বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই পরিমাণ ইউনিটের জন্য সরাসরি টাকা ডেবিট হয়। বন্ড এক গ্রামের সোনার মূল্য ও তার গুণিতকের হিসেবে কেনা হয়।
সোভেরেইন গোল্ড বন্ডে ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ হলো এক গ্রাম। কোনো একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে সর্বাধিক সীমা চার কেজি। কোনো হিন্দু যৌথ পরিবারের জন্য এর পরিমাণ চার কেজি এবং ট্রাস্টের জন্য ২০ কেজি।
গোল্ড বন্ডের মেয়াদের উপরেও এর রিটার্ন নির্ভর করে। কেনার পরে বন্ডটি যদি তিন বছরের কম সময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে বন্ড থেকে প্রাপ্ত লাভের অংক শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেন হিসেবে ধরা হবে।
গোল্ড বন্ডের পাশাপাশি সোনায় বিনিয়োগ করে যদি মনে হয় যে, আর কোনোভাবে সোনায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে, তবে ভারতীয় যেকোনো বিনিয়োগকারী গোল্ড ফান্ডের কথা চিন্তা করতে পারেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা