এটা পেলাম না কেন? ওটা ওখানে কেন? সেটা কম কেন? এটি করোনি কেন? সেটা
দিলে না কেন?- জীবনের নামে এমন অভিযোগ যদি বেড়ে যায় তবে অসুখ এসে
মানসিক সুখ কেড়ে নেবে। তরকারির লবন আর সরকারি প্রতিশ্রতি নিয়ে যদি
দরকারি সময়ের অনেকটা ভেবে ভেবে কেটে যায় তবে অকালেই আয়ু ফুরিয়ে
আসবে। যে জীবন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খতিয়ান মেলাতে মেলাতে চেষ্টা করতে ভুলে
যায়, দিবাস্বপ্ন ছড়িয়ে দেয়-তবে অল্প অল্প করে দুঃখদিনের বাদল নেমে আসবে।
যাদের জীবনের পরতে পরতে অভিযোগ, বিস্তর হতাশা-অনুযোগ এবং অস্থির
স্বভাব তাদের ভালোগুলো অকালেই মরে যায়! সব মন্দ এসে তাদেরকে নাড়িয়ে
দেয়! যা দাঁড়িয়ে থাকে এবং যা তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় তা অন্যের সাথে তুলনা!
মানুষের সাথে মানুষের তুলনায় মানুষ ভালো থাকতে পারবে- সেটা একবারও ভেবো
না! দুই মানুষেই হরেক ছায়া! অনেক মানুষ তো নানান গল্পের গোলা!
জীবনের নামে অভিযোগ-অনুযোগ কমিয়ে দিতে হবে। যা পাইনি সেটার ছায়া
দীর্ঘায়িত না করে যা পেয়েছি সেটা যতন করে আগলে রাখতে হবে। একটা সুন্দর
জীবন পেয়েও মানসিকতায় অসুস্থ থাকা, চিন্তায় লোভ লালন করা এবং আত্ম-
অহমিকায় নিজেকে ডুবিয়ে অমানুষ হয়ে ওঠার মত ব্যর্থতা আর কিছুতেই নাই।
পান থেকে চুন খসলেই, নিজের চাওয়া মত না ঘটলেই যারা রাজ্য মাথায় তোলে,
অভিযোগের পাহাড় আনে তাদের কেউ ভালো আছে-এটা অসম্ভব। বরং তারা
পরিজন এবং প্রিয়জনদের কাছেই রোজ রোজ বিরক্তিকর মানুষ হিসেবে আচরণ
পায়! যারা কথায় কথায় অভিযোগ করে, কেবল না পাওয়া বিবেচনা করে দীর্ঘশ্বাস
ছাড়ে তারা মানুষ হিসেবে সাংঘাতিক রকমের অকৃতজ্ঞ! বন্ধু হিসেবে চরম
বিরক্তিকর! সঙ্গী হিসেবে অশান্তির বারুদ এবং সহকর্মী হিসেবে হতাশা প্রবেশ
করানোর কেটলি!
প্রচলিত রীতিনীতি-সিস্টেমের পরতে পরতে যার খুঁত পায় অথচ নিজেই অন্যদের
কাছে এক সমুদ্র যন্ত্রণা, তাদের সত্য ভাষণ, নৈতিক তোষণ- এর আড়ালে আসল
চরিত্র লুকিয়ে থাকে! স্বার্থপরতাই যার মূখ্য অস্ত্র, কেবল নিজের ভালো
থাকাই যার সার্বিক প্রত্যাশা, তাকে নিয়ে সমাজ-সংসার উপকৃত হবে সে ভাবনা
মিছে। যারা অন্যের দোষ ছাড়া আর কিছু দেখে না, যারা কারো প্রশংসা করতে পারে
না এবং যারা মানুষকে সম্মান দেয় না তারা স্বভাবে অকৃতজ্ঞত এবং রুচিতে
বখিল! নিজের দোষ না দেখে যারা অপরের ঘটি-বাটি তালাশে দিবানিশি একাকারে
করে, পরিবারকে সময় না দিয়ে সমাজে সুশীল বক্তৃতা করে বেড়ায় কিংবা নিজের
দায়িত্ব পালন না করে লম্বা লম্বা নীতিকথা বলে- তারা মুহূর্তেই চোখ উল্টে
ফেলতে পারে। স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলতে পারে সবচেয়ে প্রিয়জনকেও!
স্বার্থান্ধ মানুষের দ্বারা জনহিতকর কিছুই সাধিত-সূচিত হয় না, হয়নি
কোনকালে।
আপনজন হতে হলে অনেককিছুতেই ছাড় দিতে হয়। দেখেও না দেখার ভান করতে
হয়। অনেক ভুল মেনে নিতে হয়। বলা যায়, ধরা যায় কিংবা ঠেকানো যায় তবুও চুপ
থাকতে হয়। এসবের অবশ্য বিনিময়ও আছে। খাবার লবন কম/বেশি হলে কিংবা
ব্যাগের বাজার তাজা/বাসী হলে গলা না চড়িয়ে বুঝিয়ে বললেই হয়! একটুকরো
কাপড়ের রঙ নিয়ে আকাশ মাথায় না নিলেও চলে! জীবনটাই যেখানে ক্ষয়িষ্ণু
সেখানে একটা কাপড়, একটুখানি শখ কতদিন টিকে থাকে? অসংখ্য বিকল্পের
মাঝ থেকে যে মানুষ জীবনের সাথে মিশে গেছে, যে দু’জনের জীবনের গল্প একাকার
হয়ে আছে তাদের মতবিরোধ যেন দ্বন্দ্বের দিকে না গড়ায়। বরং ত্যাগের
মহিমায়, ছাড়ের মানসিকতায় কতখানি আপন হওয়া যায় তা একসাথে বাঁচার সুখে
বৃদ্ধ হওয়া যুগল জানে! পারস্পারিক শ্রদ্ধা-সম্মান, সহিষ্ণুতা এবং সহনশীলতা
থাকলে তবেই জীবন রঙিন হয়ে ওঠে। পরের নামে অভিযোগ তুলতে তুলতে একসময়
সব অভিযোগ নিজের নামেই থামে! তখন হতাশার মিছিলে রাজ্যের ব্যাধি স্লোগানে
স্লোগানে মন-মগজে জমে!
জীবনকে সহজভাবে নিতে হবে। আজ যেটা আসেনি সেটা আর জীবনেও মিলবে না-
এমনটা ভাবা ঠিক হয়। অপ্রাপ্তির উল্টো পাশেই প্রাপ্তির ঘন্টা ঝুলে থাকে।
চরম ব্যর্থতার পরেই সফলতার বিজয় কেতন ধরা দেয়। কাজেই অভিযোগ না করে
ক্ষণিকের ধৈর্যে যদি মঙ্গল কিছু আনে তা এই জীবনের জন্য উপহারস্বরূপ।
বলতে পারার চেয়ে চুপ থাকতে পারার মধ্যে অধিক কল্যাণ লুকিয়ে থাকে।
অভিযোগ দায়েরে যে ক্ষত সারবে না বরং হাসতে হাসতে বলে বোঝালে ত্রুটিমুক্ত
হবে সেখানে হাসির মধ্যেই বেশি কল্যাণ থাকে। চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে জিতে
নেওয়াতে তৃপ্তি থাকে। যারা খুব বেশি অভিযোগ করে, একসময় তাদের আর বন্ধু-
স্বজন অবশিষ্ট থাকে না। তারা সৃষ্টি এবং স্রষ্টা- দু’কূলেই অসমতা দেখতে শুরু
করে। জীবনে থেকে অভিযোগ কমে গেলে এবং মেনে যাওয়ার ক্ষমতা বাড়লে- জীবন
সুন্দর হয়ে ওঠে। জীবনের এ পাঠ জীবন থেকেই নিতে হবে। আমরা বোধহয় একটা
সুন্দর জীবনের প্রত্যাশ্যাতেই আছি! সেজন্যই রোজ বাঁচি!