যদিও আসল নাম ছিল জাবাল-ই-তারেক। পরে ল্যাটিন ভাষার অজুহাত দিয়ে নামটা রাখা হয়েছে ‘জিব্রাল্টার’। ল্যাটিন বা ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে পঙ্গু দিক মনে হয় এটাই যে তারা অনেক মুসলিম মনিষীর নাম ও তাদের লেখা বইয়ের নাম ল্যাটিন ভাষায় লিখতে গিয়ে পুরো পাল্টিয়ে ফেলেছে— এটা এক ধরনের বিকৃতি।
অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ভাষার প্রচলন থাকলেও সব ভাষার মধ্যে একটা বিষয় মিল আছে— প্রত্যেক ভাষায় ধ্বনিগুলো একই বা প্রায় একই থাকে। অর্থাৎ
আপনি চাইলে এক ভাষার হরফে অন্য ভাষায় কোনো কিছু লিখতে পারবেন। এক্ষেত্রে উচ্চারণ খুবই নগণ্য পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে। সে হিসাবে ল্যাটিন ভাষাতেও আরবী,উর্দু, হিন্দি বা ফার্সি ভাষায় লেখার মতো পর্যাপ্ত বর্ণমালা থাকার কথা। কিন্তু, আল খোয়ারিজমি থেকে অ্যালগরিদম, আল জাবের থেকে অ্যালজেবরা, আল-কিমিয়া থেকে কেমিস্ট্রি, গণিতবিদ হাসানকে আল-হাজেন বলার মাধ্যমে ল্যাটিন বা ইংরেজি ভাষার দুইটা দুর্বলতা প্রকাশ পায়—
এক. হয়তো তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই নামগুলো পরিবর্তন করেছে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করে থাকে তাহলে পশ্চিমারা হিপোক্রেট এবং হিংসুক।
দুই. যদি তারা অনিচ্ছাকৃতভাবেই নামের পরিবর্তনটা করে থাকে বা ভাষার অক্ষরের উচ্চারণের কারণেই এমন হয়ে থাকে তাহলে ল্যাটিন বা ইংরেজি ভাষার মধ্যে দুর্বলতা আছে এবং ওই ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। যেহেতু, সব ভাষাতেই প্রায় একই রকমের ধ্বনি থাকে (ধ্বনিগুলো ভিন্ন হরফে লিখা হয়) সেহেতু আরবী নামগুলোর এই পরিবর্তনটা হলো বিকৃতি এবং তাদের হিংসুটে মনের বহিঃপ্রকাশ।
এই অল্প কয়েকটি নাম তারা বিকৃত করেছে বললে তা ভুল হবে। অসংখ্য মুসলিম মনিষীদের নাম এবং অবদানকে তারা বিকৃত করেছে। পাঠ্যপুস্তকে এসব নাম এখন ফলাও করে প্রচারও করা হয়। অথচ অনেক আবিষ্কারের জনক মুসলিম বিজ্ঞানি হলেও সেসব বিষয় পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরে না। শুধু মুসলিমদের ব্যাপারে বললে ভুল হবে— পশ্চিমাদের কাছে তাদের স্বার্থের উপর আর কিছুই নেই, তাদের স্বার্থের পরিপন্থী প্রস্তাবের কারণে গ্যালিলিওকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। সম্ভবত, তিনি জেলেই মারা গিয়েছিলেন।
উমাইয়া সালতানাতের (খেলাফত) বীর সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ ৭১১ সালে রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা স্পেন(তৎকালীন কিংডম অব হিস্পানিয়া) জয় করেন। তিনি স্পেনে আক্রমণ করার আগে একটি পাহাড়ের পাদদেশে বিরতি নেন। পরে তাঁর নামানুসারে ওই পাহাড়টির নামকরণ করা হয় ‘জাবাল-ই-তারিক’ বা তারেকের পাহাড়। পরবর্তীতে কাস্টিল দুর্গের রানী ইসাবেলা ও স্পেনের প্রিন্স ফার্দিনান্ডের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মুসলিমরা স্পেন থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর জাবাল-ই-তারিক এর নাম পরিবর্তন করে জিব্রাল্টার রাখা হয়। ১৭০৪ সালে ব্রিটিশরা স্পেনের কাছ থেকে জিব্রাল্টার অঞ্চল ছিনিয়ে নেয়।