কয়েকটি কবিতা
কবিতা (০১)
চলমান সময়ের ছায়া
-বিচিত্র কুমার
সময় যেন নদীর ঢেউ,
তৃষ্ণার্ত পাথরকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে যায়।
চুপচাপ অপেক্ষা, তবু থামে না সে,
দূর আকাশের মেঘ হয়ে কাঁদে যেন নির্জন বাতাস।
রোদ্দুরের সোনালি আলো,
অস্থির পিপাসায় ভেজা শীতের কুয়াশা,
কেউ আসে, কেউ যায়, সময়ের শস্যক্ষেত্রে—
আশার সোনালি দানা ছড়ায়, আবার ফেলে যায়।
সময়ের লম্বা ছায়া,
ফুলের গন্ধে মিশে যায় অচেনা রূপে,
দুর্বাঘাসে ভিজে থাকা শিশিরের মতো,
ফেলে রাখা পদচিহ্নে হারিয়ে যায়।
গোধূলির স্নিগ্ধ আলোয় সময়ের আরশি,
চোখে ভেসে ওঠে স্মৃতির প্রতিচ্ছবি,
মেঘের সঙ্গে গা ভাসিয়ে নিয়ে যায়—
যেন ক্লান্ত হাওয়ার বুকে স্থির এক হাহাকার।
কবিতা (০২)
সময়ের নদী
-বিচিত্র কুমার
সময় নদীর জলধারা,
কূলে ভাঙে, তবু পিছু ফিরে না,
দেয়ালে আঁকা সেই ছবির মতো,
যা রোজ পুরাতন হয়, তবু মুছে ফেলা যায় না।
হাতের মুঠোতে যেন ধরা জল,
যত শক্ত করে ধরো, ফসকে যায়,
কিন্তু তার আদল থেকে যায় হৃদয়ের কোণে—
যেন শীতের সকালে পড়া সূর্যরশ্মির ছায়া।
সময়ের স্রোতে ভাসা ছোট্ট নৌকা,
পাল তোলা স্বপ্ন নিয়ে কোথাও যায়,
মাঝখানে হয়তো থেমে যায় কিছুক্ষণ—
পাহাড়ের ঝর্ণার শব্দে মিশে যায়।
আকাশের নীচে বৃষ্টি ঝরে,
পৃথিবী ভিজে যায় কিন্তু মাটি শুকায় না,
সময়ের ছোঁয়ায় সব পরিবর্তিত হয়,
তবু কিছু ক্ষত থেকে যায় অমোচনীয়।
কবিতা (০৩)
সময়ের প্রান্তে দাঁড়ানো
-বিচিত্র কুমার
সময়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে,
আমি যেন একা পথিক,
অন্তহীন পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত,
তবু পিছু ফিরেও ফিরে দেখা হয় না।
সময়ের কাঁচা ঘাসে,
আমার পদচিহ্নে জমে যায় ফুসফুসের ধুলো,
যেন ভাঙা আকাশে মেঘেরা ভাসতে থাকে,
একা, কেবল নিজের ছায়া নিয়ে।
সময়ের আয়নায় মুখ,
অপরিচিত ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো—
যেন হাতছানি দিচ্ছে কোন অদৃশ্য বাহু,
আলো ছায়ার মিশেলে গড়ে তোলা এক পথ।
রাতের তারায় সময়ের আলো,
মিটমিট করে জ্বলে আর নিভে যায়,
কখনও পথ দেখায়, আবার কোথাও হারিয়ে যায়—
যেন রুপোলি মায়ায় মোড়া স্মৃতির আকাশ।
কবিতা(০৪)
অনন্ত সময়ের ডাক
-বিচিত্র কুমার
সময়ের স্রোতে বয়ে যায় মন,
মায়ার হালকা স্পর্শে গড়ে ওঠে ছায়া—
যেন গোধূলির রং মাখা নীল আকাশে,
দূরে হারিয়ে যাওয়া এক উড়ন্ত পাখি।
কোথাও এক বীণা বাজে সময়ের আঙিনায়,
প্রতিটি সুর যেন বুনে চলে আলোকের বৃত্ত,
যেন জীবনের তীরে ভেসে আসা বেলাভূমির গন্ধ,
বুকে জড়িয়ে নেয় এক চিরকালের আক্ষেপ।
সময়ের ডালপালা ছড়িয়ে,
বসন্তের নতুন পাতা যেমন অঙ্কুরিত হয়,
তেমনি আমাদের জীবনে ফুল ফোটে,
কিছুদিন পরে শুকিয়ে যায়, তবু গন্ধ থাকে।
কবিতা (০৫)
সময়ের সমুদ্র
-বিচিত্র কুমার
সময়ের সমুদ্রে ভাসা এক পালতোলা জাহাজ,
দিকহীন বাতাসের টানে,
নিয়তি যেন সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে রাখা—
মুক্তোর মতো স্বপ্নের মণি।
তটরেখার মতো এগিয়ে আসে জীবন,
তবু শেষ কোথায়, কে জানে—
সময়ের ঢেউ মুছে দেয় প্রত্যেকটি পদচিহ্ন,
তবু বুকের ভেতর রয়ে যায় এক অমলিন স্মৃতি।
সময়ের নোনা জল,
দেহে মেখে চলে তার নিরন্তর স্পর্শ,
যেন হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন গ্রন্থের পাতা,
যার শব্দগুলো এখনও বাতাসে মিশে থাকে।
নামঃ বিচিত্র কুমার
গ্রামঃ খিহালী পশ্চিম পাড়া
পোস্টঃ আলতাফনগর
থানাঃ দুপচাঁচিয়া
জেলাঃ বগুড়া
দেশঃ বাংলাদেশ