বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অবশেষে বাস্তবায়ন হলো। প্রায় পাঁচ বছর আগে জাতিসংঘের অধিবেশনে এসে এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ফ্লোরিডায় একটি স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস চালুর ঘোষনা দিয়েছিলেন গত সোমবার (১৪ মার্চ) তা বাস্তবায়ন হয়েছে। ফ্লোরিডার মায়ামিতে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
গত ১৪ মার্চ উদ্বোধন করা করা হলেও প্রাথমিকভাবে স্বল্প কার্যদিবসের জন্য কনস্যুলেট সেবা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে কনস্যুলেটের কার্যদিবসসহ বাড়ানো হবে নানা সুযোগ সুবিধা।
২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ফ্লোরিডার মায়ামিতে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিসের অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত বৈঠকে বলা হয় কূটনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। এ জন্য ফ্লোরিডায় একটি কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন প্রয়োজন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তিনটি কূটনৈতিক মিশন রয়েছে। এগুলো ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক এবং লস এঞ্জেলেসে অবস্থিত।
বিশাল আয়তনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা এবং সেখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পর্যাপ্ত কনস্যুলার সেবা দেওয়া এই তিন মিশনের জন্য অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এতে করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বল্পতম সময়ে সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব করেছে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য হলো ফ্লোরিডা। এখানে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফ্লোরিডার দূরত্ব প্রায় এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ডিসেতে কনস্যুলার সেবা গ্রহণ করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।
ফ্লোরিডাতে বিশ্বের ৮১টি দেশের কনস্যুলেট রয়েছে। যার মধ্যে ৬১টি কনস্যুলেটই মায়ামি শহরে অবস্থিত। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার মায়ামি শহরে বাংলাদেশের একটি কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপন করা হলে, তা ফ্লোরিডাতে অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করা হয়।
ফ্লোরিডায় নতুন কনস্যুলেট জেনারেল প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে উক্ত বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, সাউথ ফ্লোরিডাবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে মায়ামিতে একটি স্থায়ী কনস্যুলেট স্থাপনের চেষ্টা করে আসছিলেন। করোনা-পূর্ববর্তী সময়কালে ২০১৯ সালে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ায় মায়ামিতে কনস্যুলেট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তারপর দীর্ঘদিন সেটির বাস্তবায়নে নানা কার্যক্রমে আটকে ছিল।
এ বছরের শুরুর দিকে একজন কনসাল জেনারেল ও একজন অ্যাকাউটেন্ট মায়ামিতে পোস্টিং পান। তারপর তারা স্থায়ী অফিস নেন। পরবর্তীতে আরো কয়েকজন নিয়োগ পান। কনসাল জেনারেল হিসেবে মিলান কনস্যুলেট থেকে যোগ দেন অ্যাম্বাসেডর ইকবাল আহমদ। ইতোমধ্যেই কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে সেবা দেয়ার সময়সূচিও প্রকাশ করা হয়েছে।
কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক কনস্যুলার সেবা দিয়ে দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর প্রতি সোম থেকে শুক্রবার একই সময়ে নিয়মিত কনস্যুলার সেবা দেয়া হবে।
এদিকে মায়ামিতে কনস্যুলেটের কার্যক্রম শুরুর খবরে দারুণ খুশি ফ্লোরিডার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই অর্জনে ফ্লোরিডায় অবস্থিত সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কনস্যুলেট সুবিধা চালু হওয়ায় স্থানীয় প্রবাসী নেতারা বলছেন, অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ দূতাবাস ফ্লোরিডাতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লোরিডাবাসীকে এবার বহুল আকাক্সিক্ষত সেই উপহারটিই দিলেন।