রঙ-তুলির আঁচড়ে বদলে যাচ্ছে লক্কর-ঝক্কর লঞ্চ

নদীপথে নামাতে তৎপর রয়েছেন।

মনির হোসেন,বরিশাল ব্যুরো: ঈদের বাকি আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার একমাত্র মাধ্যম এই নৌ পথ। আর এই নৌ পথে চলাচল করা লক্কর-ঝক্কর লঞ্চগুলোকে রঙ-তুলির আঁচড়ে নতুন করে তোলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের আগে থেকেই লক্কর-ঝক্কর লঞ্চগুলোকে নতুন চেহারা দেওয়ার কাজ শুরু করে শ্রমিকরা। দিন-রাত পালাক্রমে কাজ করে তারা ঈদের আগেই লঞ্চগুলো নদীপথে নামাতে তৎপর রয়েছেন।
প্রতি বছর ঈদের আগে যে দৃশ্য দেখা যায় এবারও রাজধানীর সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠা ডকইয়ার্ডগুলোতে গিয়ে সেই একই দৃশ্য দেখা গেলো। প্রস্তুত হচ্ছে একাধিক ফিটনেস বিহীন লঞ্চ।

ডকইয়ার্ডে এমভি প্রিন্স আওলাদ-৫ নামে একটি ভাঙাচোরা লক্কর-ঝক্কর লঞ্চকে নৌ পথে নামানোর কাজ চলছে। কেউ লঞ্চের ভেতরের ফ্লোরের কাজ করছেন, কেউবা আবার লঞ্চের গায়ে নতুন করে রংয়ের প্রলেপ দিতে ব্যস্ত। তিন তলা বিশিষ্ট এই লঞ্চ চলাচল করবে ঢাকা-বরিশাল রুটে।
লঞ্চটির মেরামতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক তাহের বলেন, লঞ্চটি ঈদের আগেই প্রস্তুত করা হবে। সে জন্য দিন-রাত শ্রমিকরা কাজ করছেন। লঞ্চটির নানান সমস্যা ছিল সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে।
কত জন শ্রমিক কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। শুধু এই ডকইয়ার্ডে না আশেপাশের সকল ডকইয়ার্ডেই লঞ্চ মেরামতের কাজ চলছে।

পাশেই আরেক ডকইয়ার্ডে কাজ চলছে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করা অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চটির। লঞ্চটি পুরোপুরি রং করা হচ্ছে। ঘষা মাজা থেকে শুরু করে লঞ্চটির ভেতরের অনেক যন্ত্রাংশও পরিবরর্তন করা হচ্ছে। এমনকি ভাঙা কিংবা উধাও হওয়া লোহার পাত নতুন করে বসানো হচ্ছে।
শ্রমিক সজিব বলেন, লঞ্চটি পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। এখন রং করা শেষের দিকে। তবে আরও কয়েকটি প্রলেপ দিতে হবে সেজন্য কিছু সময় লাগবে। আরও পুরো লঞ্চের কিছু ছোট ছোট কাজ বাকি সেগুলোও সপ্তাহখানেকের ভেতরে হয়ে যাবে।
এই লঞ্চগুলোর ফিটনেস আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা শুধু কাজ করেন। ফিটনেস কাগজপত্রের খোঁজ রাখেন না। এসব বিষয় মালিক-ম্যানেজার বলতে পারবেন।

ইদযাত্রায় লঞ্চ সার্ভিস নিয়ে কথা হয় অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের মালিক ও বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচালক নিজামুল ইসলামের সঙ্গে তিনি বলেন, ইদ যাত্রার লঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছে। ইদের সার্ভিস নিয়ে এখনও অনেক কিছু আলোচনা বাকি। তবে, ইদে লটারির মাধ্যমে টিকিট দেওয়া হবে। কাউন্টার থেকে কেবিনের টিকিট নিতে হবে।
তার মালিকানাধীন অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চটির ফিটনেস আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ফিটনেস ছাড়া কি লঞ্চ কেউ ট্রিপে নামায়? অবশ্যই না। তাদের সব নৌ যানের ফিটনেস রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন তারা। যদিও ইদের সময় যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কর্তৃপক্ষ চাইলেও কম যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে পারে না। তারা নিয়ম মেনে লঞ্চ চালানোর চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে কথা হয় বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যেসব লঞ্চের ফিটনেস নেই বা রঙ করে নামানো হচ্ছে সেগুলোর যদি কোনো ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে নৌ পথে নামতে পারবে না। ঈদের আগে মোবাইল কোর্ট থাকবে, নদীপথে টহল থাকবে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। ফলে, কোনো ধরনের ফিটনেস নেই এমন লঞ্চ চলবে না।
ঈদে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ থাকবে। সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। দ্রুতই সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে। যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকে সদরঘাটে। আর প্রতিবারই প্রশাসন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ না ছাড়ার ঘোষণা দিলেও বরাবরই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। লঞ্চগুলো ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে। তাই, নৌ পথে দুর্ঘটনাও ঘটে প্রচুর।

Exit mobile version