রোববার (০২ জুন) দুপুরে কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজার এলাকায় এমন অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।এরই মধ্যে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ও ক্ষতিপূরণের দাবি করে জেলা প্রশাসক ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
এদিকে এ ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান, পুলিশ সুপার তারেক বিন রশিদ ও কমলনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জণ দাস। অধিগ্রহণকৃত ভূমি অংশের বাহিরে অতিরিক্ত জমির দোকান ভাঙচুরের সত্যতা তারাও পেয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কমলনগরের হাজিরহাট বাজার এলাকায় উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয় দোকান মালিকের কাছ থেকে ৪ দাগে দশমিক ০৫৫৩ একর জমি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহকৃত জমির সীমানা নির্ধারণ করে (আতিক মার্কেটের অর্ধেকাংশ) লাল দাগ দিয়ে লক্ষ্মীপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভাগকে বুঝিয়ে দেন প্রশাসন। সে প্রেক্ষিতে অধিগ্রহণকৃত জমির স্থাপনা সরাতে ঠিকাদারও নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
গত ১৮ এপ্রিল প্রকল্পের স্থাপনায় লে-আউটে পতিত স্থাপনা হতে মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হলে, ব্যবসায়ীরা নির্দেশনা অনুযায়ী অধিগ্রহণ অংশ থেকে মালামাল মালিকানাধীন দোকানের পশ্চিমাংশে সরিয়ে রাখে। কিন্তু গত ২৯ এপ্রিল সকালে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের লোকজন লাল দাগ চিহ্নিত অধিগ্রহণকৃত জমির স্থাপনা না সরিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পশ্চিমাংশের দশমিক ১০৩৮ একর জমিতে থাকা ১৬টি দোকানসহ দ্বিতল বিশিষ্ট একতা মার্কেট ভবন ভাঙা শুরু করে। এ সময় দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকের হোসাইনকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক নিজেই পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় তার নেতৃত্বেই ঠিকাদারের লোকজন ১৬ দোকানসহ একটি মার্কেট ভবন গুড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে তার আদেশেই দোকানে থাকা ব্যবসায়ীদের মালামাল ট্রাকে করে লুট করে নিয়ে যায় ঠিকাদারের লোকজন। এতে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য তো জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য আতিক মার্কেটের মধ্যবর্তী পিলারে লাল দাগও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক নিজেই রহস্যজনকভাবে প্রভাবিত হয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে মালিকানাধীন ১৬টি দোকানসহ মার্কেট গুড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি লোকজন দিয়ে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক হয়েও তার এমন অন্যায় আচরণে স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জাকের হোসাইন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেই স্থাপনা সরানোর কার্যক্রম শুরু করা হয়। দোকান মালিকদের অভিযোগ সত্য নয়, বরং ব্যবসায়ীরা ঠিকাদারের মালামাল লুটে করায় তাদের বিরুদ্ধে ঠিকাদার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়েই আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। দোকান ভাঙচুর কিংবা মালামাল লুটের ঘটনায় আমি জড়িত নই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে ডিমারগেশন করে ইসলামী ফাউন্ডেশনকে অধিগ্রহণকৃত জমির সীমানাও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে সরজমিনে পরিদর্শন করে অধিগ্রহণের বাহিরে অতিরিক্ত জায়গার দোকান ভাঙার ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরাও ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইসলামি ফাউন্ডেশন, গণপূর্ত বিভাগ ও ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের নিয়ে বসে সমাধান করতে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
মো:কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা