‘মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো: মিনি প্যারেন্টিং মাস্টার ক্লাস’ ভিডিওর অনুলিপি
‘আপনি কি জানতেন যে আপনার স্তনবৃন্তে উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে? তাই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে আপনার স্তন ধুয়ে নেওয়ার কোন দরকার নেই।’
আমার নাম ড. মিশেল গ্রিসওল্ড। এটা মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোয়ের ওপর আমার মিনি প্যারেন্টিং মাস্টার ক্লাস।
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো কি সহজ?
“অনেক মায়েদেরই বলা হয়ে থাকে যে, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো একটি প্রাকৃতিক এবং সহজ বিষয়। কোন কোন মায়ের ক্ষেত্রে প্রথম সন্তানের সময় মায়ের দুধ খাওয়ানো সহজ হতে পারে। আবার একই মায়ের দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টি কঠিন হতে পারে; অর্থাৎ, পুরো বিষয়টি আসলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।”
মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে কি ব্যথা লাগে?
“আপনার স্তনবৃন্তে ব্যথা লাগলেও আপনার সন্তানকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা উচিত হবে না। আপনার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে দেখতে হবে কেন ব্যথা লাগছে। প্রয়োজনে এর জন্য সহায়তা নিতে হবে।”
আমার সন্তানের কতটা খাওয়া উচিত?
“দিনের ২৪ ঘণ্টায় তাদের ৮ থেকে ১২ বার ক্ষুধা লাগার ইঙ্গিত দেওয়ার কথা। নবজাতকদের বেশি বেশি খাওয়া উচিত। কারণ তারা দ্রুত বেড়ে ওঠে। জীবনের প্রথম ছয় মাস বা তার আগেই তাদের ওজন জন্মের সময়ের ওজনের দ্বিগুণ হয়ে যায়। সুতরাং আপনি চিন্তা করুন, যদি আপনার ওজন দ্বিগুণ করতে হয় তাহলে আপনার কী পরিমাণ খেতে হবে।”
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে কি আমার স্তনবৃন্ত ধুয়ে নিতে হবে?
“শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে আপনার স্তনবৃন্ত ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্তনবৃন্তের আশপাশের স্তন ও ত্বক প্রকৃতপক্ষে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। এই উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মায়ের স্তনে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।”
আমার কখন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা উচিত?
“জন্মের পরের প্রথম এক ঘণ্টা মা ও শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো একটি খুবই সুসংগঠিত, স্নায়ুবিক আচরণ। তাই, জন্মের সাথে সাথেই সন্তানকে মায়ের ত্বকের সংস্পর্শে রাখলে, সন্তান দ্রুত শান্ত হয়ে মায়ের দুধ খাওয়ার চেষ্টা শুরু করবে। জন্মের পর আমরা যদি মা ও সন্তানকে এভাবে কাছাকাছি রেখে দেই, তখন নবজাতকেরা নিজেরাই স্বভাবত স্তনের দিকে এগিয়ে যাবে। এটা ঘটবে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে।”
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আমার কী খাওয়া উচিত?
“অধিকাংশ মা-ই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তারা যা চান তাই খেতে পারেন। তারা স্বাভাবিক খাবারই চালিয়ে যেতে পারেন। আর দারুণ ব্যাপার হলো, তারা যেটা খাবেন সেটার স্বাদই শিশু দুধের মধ্য দিয়ে পাবে এবং এর মধ্য দিয়ে ছয় মাস বয়সের মধ্যে তারা সাধারণ খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে।”
সন্তান জন্মের পর কাজে ফেরার সময় কি আমি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করব?
“আমরা আশা করব যে, মায়েরা কাজে ফিরে তাদের সন্তানদের বুকের দুধ ছাড়িয়ে দেবেন না। সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়ার জন্য মায়েদের সময় ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের পরিবার থেকে সহযোগিতা, কর্মক্ষেত্রের সহযোগিতা দরকার, নিয়োগকর্তা এবং পুরো কমিউনিটির সমর্থন-সহযোগিতা প্রয়োজন।”
মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো মানে শুধু শিশুর খাবার নিশ্চিত করা নয়। এটা তাদের স্বাস্থ্যকর উপায়ে লালন-পালনের প্যাকেজের একটা অংশ যেটা শিশুদের সম্পূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জন্মের এক ঘন্টা থেকে শুরু করে প্রথম ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। ছয় মাস বয়স থেকে শিশুকে সম্পূরক খাবার দেওয়া যাবে। তবে দুই বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।