রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ১৪টি কলেজে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ৪ হাজার ৩৪২ আসন খালি রয়েছে। কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির তিন বিভাগে ৬ হাজার ৩৯০ আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪৮ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আসন খালি প্রায় ৬৮ শতাংশ। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় থেকে মানসম্মত শিক্ষার্থী না আসা, বিজ্ঞানভীতির কারণে এসব বিষয়ে পড়তে চায় না অনেক শিক্ষার্থী। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সম্প্রতি ভর্তি প্রক্রিয়া স¤পন্ন হয়েছে। ক্লাস শুরু হয়েছে ৮ আগস্ট। সাদুল্লাপুর উপজেলার ১৪ কলেজে মানবিক বিভাগে আসন রয়েছে ২ হাজার ১৯০টি। ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৩২ শিক্ষার্থী। খালি আসন ৫৫৮টি। বিজ্ঞান বিভাগে ২ হাজার ১০০ আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ২২৯ শিক্ষার্থী। খালি আসন ১ হাজার ৮৭১টি। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২ হাজার ১০০ আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ১৮৭ শিক্ষার্থী। আসন খালি ১ হাজার ৯১৩টি। সাদুল্লাপুর সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে ১৬০ আসনের মধ্যে ১৬০ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ১৫০ আসনের মধ্যে ৭২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৫০ আসনের মধ্যে ৩৫ জন ভর্তি হয়েছে। সাদুল্লাপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে ১৫০ আসনের মধ্যে ১৪৯ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ১৫০ আসনের মধ্যে ৩ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৫০ আসনের মধ্যে ৬ জন ভর্তি হয়েছে। সাদুল্লাপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকার বলেন, মাধ্যমিক পর্যায় থেকে মানস¤পন্ন শিক্ষার্থী কম পাওয়া যায়। দক্ষ শিক্ষকের অভাব, ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাসহ নানা কারণে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কম হয়। হিঙ্গারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল ইসলাম সরকার বলেন, গ্রামের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া ও ভীতির কারণে বিজ্ঞান বিভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি কম হয়েছে। শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, উপযুক্ত শিখন পদ্ধতির অভাবে উচ্চতর শ্রেণিতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীর সৃষ্টিশীল চিন্তা এবং মননশীলতা বিবেচনায় নিয়ে বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়ায় চাপ দেওয়া উচিত। অভিভাবক জামির হোসেন সরকার বলেন, এলাকায় মানস¤পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকলে বাইরে যেতে হয়। এতে লেখাপড়ায় খরচ বাড়ে যায়। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুন্দর পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীর সংকট হয় না। শিক্ষকরা আন্তরিক হলেই যথেষ্ট। মেধাবীরা ভালো মানের বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। অভিভাবকগণ এখন অনেক সচেতন। তারা আগে যাচাই-বাছাই করে সন্তানকে স্কুল-কলেজে ভর্তি করে। সাদুল্লাপুর পাইলট মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরশাদ আলী বলেন, এইচএসসিতে সিলেবাস বড় ভেবে অনেক শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হননি। কলেজে ভালো মানের শিক্ষক না পেলে প্রাইভেট পড়তে হবে। এতে বাড়তি অর্থ ব্যয় হয়। ড.আর এ গণি স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ মন্ডল বলেন, একাদশ শ্রেণিতে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রমের কারণে ফল ভালো থাকলে প্রায়ই শিক্ষার্থী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। এতে নন এমপিওভুক্ত এবং বেসরকারি কলেজ শিক্ষার্থী কম পাচ্ছে। শিক্ষার্থী না পেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কলেজগুলো। জয়েনপুর আদর্শ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল বারী সরকার বলেন, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশেষ উপবৃত্তি এবং তাদের নিয়মিত সেমিনার করা প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হাবিব বলেন, শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এইচএসসির দুই বছর। এ সময়ে কলেজগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে। শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করলে ভালো কিছু করবে। সন্তানের খোঁজখবর রাখতে হবে অভিভাবকদের।