“সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে – যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে; সে নিতান্ত নিরীহ।”
― রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
স্ত্রী, বউ, সহধর্মিনী, অর্ধাঙ্গিনী বা আরও কত কিছু… আমি নিতান্তই নিরীহ প্রকৃতির স্বামী না মানুষ, তাই হয়তো আমার স্ত্রী আমায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই ভালোবাসে! মেয়েদের জগৎটা ভীষণ ছোট। ওরা ভাবনা এবং ভালোবাসা দুটোই হৃদয় দিয়ে সম্পন্ন করে আর এখানেই যুদ্ধ বাঁধে ঘরের পুরুষের সাথে। আমরা পুরুষেরা ভাবনা ভাবি মস্তিষ্কে আর ভালোবাসি হৃদয় দিয়ে। দ্বন্দ্বের একটা সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায় ― হৃদয় ও মস্তিষ্কের মাঝে। ঈশ্বর কি অমোঘ জাদু দিয়েছেন নারীর হাতের ছোঁয়ায়/ স্পর্শে ― যার দ্বারা পুরুষকে যুগ যুগ ধরে সংসারে বেঁধে রাখতে পেরেছেন নারী। অনেকেই বলেন মোহ কেটে গেলে সম্পর্ক আলগা হয়ে যায়, ওদের উদ্দেশ্যে বলি ― না ওরা নিজেকে শান্তি দিতে পারে, না অপরকে। কিছু পড়াশোনা করে আর কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলছি ―
- পরিষ্কার আর স্বচ্ছ থাকা ― স্ত্রীর কাছে সৎ থাকা সর্বক্ষণ। যা ঘটুক, যেমন ঘটুক অবলীলায় বলে ফেলা। আমার অনেক প্রেমিকা, তাদের সমন্ধে আমার স্ত্রী সবকিছুই জানে ― আমি লুকানোর চেষ্টা করিনি এবং ভবিষ্যতে করবো নাও। ও মাঝে মধ্যে ওদের মেসেজ পড়ে শোনায়, আমরা বেশ এনজয় করি।
- আমার কয়েকটা ঘোর চাওয়া বিয়ের আগেই চেয়ে নিয়েছিলাম, যেমন ― আমার বাবা মাকে না কেড়ে নেওয়া, আমার এখন পর্যন্ত একপ্রকার নেশা ধূমপান নিয়ে প্রশ্ন না করা, আমার বন্ধুদের সাথে দূরত্ব তৈরি না করে দেয়া। ও কথা রেখেছে।
- আমার ফোনের পাসওয়ার্ড জানে এবং ফিঙ্গার প্রিন্টে ওকেও রাখা আছে, যাতে অবলীলায় আমার ফোন বিচরণ করতে পারে যখন খুশি তখন।
- দিনের শেষে একটা লম্বা আলিঙ্গন এবং কপালে চুমু।
- সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন ভালো কয়েকটা পদ নিজে রান্না করে খাওয়ায় ওর পছন্দ মতো। সময় পেলে রান্নায় হেল্প করে দিই। কারণ আমরা দুইজনই রেস্টুরেন্টে খাওয়ার বিরোধী।
- আমার স্ত্রীর শপিংয়ে কোনো নেশা নেই তাই এই যাত্রায় বেঁচে গেছি।
- হঠাৎ করে দুইজন মিলে লোকাল ট্রেনে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি সেটা রাতের শেষ ট্রেন। কি থ্রিল থাকে এই যাত্রায় ― কখনো খুব ভোরে উঠে স্টেশনে চা খেতে যাই। মেয়ে হওয়ার পর গত দেড় বছর এটা বন্ধ আছে, মনে হচ্ছে শীঘ্রই শুরু হবে আবার।
- Hygiene থাকি সর্বদাই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেয়েদের একটা বড়ো গুণ। যেমন নিজের জন্য তেমনই স্বামীর জন্য। এই বিষয় মেনে চলি।
- গভীর হয়ে ওর কথা শুনি, কোনো সিদ্ধান্ত দিতে যায়না। ওর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিই, অযৌক্তিক মনে হলে অপেক্ষা করে পরে বুঝিয়ে বলি।
- রাস্তায় একসাথে হাঁটার সময় ওর হাত ধরে হাঁটি এবং শোয়ার সময় হাতটা ধরেই কখন ঘুমিয়ে পড়ি।
- আবদার পূরণ করতে না পারলে আমার অপারগতার কথা বুঝিয়ে বলি এবং সময় চেয়ে নিই।
- স্ত্রীকে আমার আয়না মনে করি। যখন ঝগড়া করি মন খুলে। Perfect Relation বলে কিছু হয় না, সেটা বানিয়ে নিতে হয়। আমি বানাতে পেরেছি ― এর পেছনের মূল কারণ সৎ থাকা।
- মিথ্যে প্রশংসা এড়িয়ে চলি, কঠোরভাবে বলে দিই ভালোলাগা খারাপলাগা।
- মাঝে মধ্যে একটি গোলাপ ব্যস।
কি, গল্পের মতো মনে হলো তাই তো! পাক্কা ঢপবাজি কথাবার্তা? আজ্ঞে, একদমই না। সাত বছরের বিবাহিত জীবন আর তার আগের দুই বছরের ঝামেলা পূর্ন প্রেম জীবনে আমরা অনেক পরিণত হয়ে গেছি। যতই হোক চিত্রনাট্যকার তো!
যা করুন, স্ত্রীতে থেকে করুন। স্বচ্ছ এবং সত্যে। তাতেই সংসারে সন্তানে সমৃদ্ধি। এই হলো আমাদের দুইজনের আনন্দ। মাঝে মধ্যে উদ্ভট আচরণ করে হাসিয়ে ফেলি, সেটা বলা সেন্সর বিরোধী।
বিয়ের পরের ক্লিক –
সব্বাই ভালো থাকুন ― আনন্দে রাখুন। 💐💐💐